সোমবার সকালে কালাই উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামে নিজ বাড়িতে তিনি মারা যান। সন্ধ্যায় তার মরদেহ পুলিশ থানায় নিয়ে যায়।
এ মৃত্যুর জন্য তার উপর হামলাকারীদের শাস্তি দাবি করেছেন স্বজন ও এলাকাবাসী।
সরেজমিনে জানা যায়, দুর্গাপুর গ্রামের মৃত মফিজ উদ্দিনের ছেলে দরিদ্র মোজাফফর হোসেন ছিলেন ব্যাটারিচালিত ভ্যান চালক। ভ্যান চালিয়ে সংসারে স্ত্রী-পুত্রসহ সাত জন মানুষের ভরণ-পোষণ চালাতেন তিনি। জমিজমা সংক্রান্ত পূর্বশত্রুতার জেরে গত ২০২১ সালের ৮ জুলাই গ্রামের একদল লোক দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মোজাফফর ও তার ছেলেকে তাদের বাড়ির সামনে বেধরক মারপিট করে। এতে গুরুতর আহত মোজাফফরকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে প্রথমে কালাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে ওই রাতে তাকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
এ ঘটনায় মোজাফফরের স্ত্রী রুপবান বেগম বাদী হয়ে কালাই থানায় 'হত্যা চেষ্টা' মামলা করেন। ওই মামলায় পুলিশ গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে।
এই মামলায় একই গ্রামের আব্দুল আলিম, তার ভাই আনোয়ার হোসেনসহ ৭/৮ জনকে আসামি করা হয়েছে।
গ্রামের আছব আলীর স্ত্রী রওশন আরা বেগম, মনতাজ আলীর দুই ছেলে বেলাল উদ্দিন, মৃত ছুমির উদ্দিনের ছেলে আব্দুল মান্নানসহ প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জমির আইল কাটার ঘটনাকে নিয়ে ভ্যানচালক মোজাফফর ও তার ছেলে রুবেলকে তাদের প্রতিপক্ষ লোহার রড ও লাঠি দিয়ে বেধরক মারপিট করে।
তারা বলেন, এতে মোজাফফরের বাম পা হাঁটুর নিচ থেকে সম্পূর্ণ ভেঙে যায় ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর জখম হয়। চিকিৎসা খরচ মেটাতে না পারায় তাকে হাসপাতাল থেকে ফিরে এনে বাড়িতেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল।
প্রয়োজনীয় চিকিৎসার সামর্থ্য না থাকায় এক রকম ‘বিনা চিকিৎসাতেই’ তার মৃত্যু হয়েছে বলেও গ্রামবাসীর ভাষ্য।
মৃত্যুর পর আবার থানায় ‘হত্যা মামলা’ করতে গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি বলে অভিযোগ মোজাফফরের স্বজনদের। পরে নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসীর দাবিতে পুলিশ সন্ধ্যায় মৃতদেহ থানায় নিয়ে আসে।
মোজাফফরের স্ত্রী রুপবান বেগম অভিযোগ করেন, “আমরা এ ব্যাপারে মামলা করলে পুলিশ চার্জশীটও [অভিযোগপত্র] দেয়, কিন্তু ওই মারপিটেই তো তিনি (মোজাফফর) মারা গেলেন, তাহলে হত্যা মামলা কেন নেওয়া হবে না? পুলিশ আর নতুন করে মামলা নিতে চাচ্ছে না, পরে অবশ্য অভিযোগ নিয়েছে।”
অভিযোগ অস্বীকার করে কালাই থানার ওসি সেলিম মালিক বলেন, ঘটনার পর সে সময়ই এ ব্যপারে মামলা নিয়ে অল্পদিনের মধ্যে অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা হয়েছে।
“তারপরও পুলিশ অভিযোগ গ্রহণ করে ময়নাতদন্তের জন্য মৃতদেহ জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালে পাঠানোর প্রস্তুতি নিয়েছে।”