ঘটনার তিন দিনের মাথায় এই তথ্য পাওয়ার পর প্রশ্ন উঠেছে, শিশু দুটি চিকিৎসা পেয়েছিল কি-না?
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শনিবার বিকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, “তারা দুইটা টিকেট কিনেছে। টিকেটের খাতায় নাম আছে। কিন্তু জরুরি বিভাগে চিকিৎসকদের কাছে যে রেজিস্টারে খাতা আছে, সেটিতে দুই শিশুর নাম খুঁজে পাওয়া যায়নি। এতে বুঝা যাচ্ছে, চিকিৎসকের সঙ্গে রোগীর যোগাযোগ হয়নি।”
“রোগীকে চিকিৎসক সেবা দিতে পারেনি অথবা এমনও হতে পারে, স্টমাক ওয়াশের ভয়ে রোগী চলে যেতে পারে। অথবা চিকিৎসকসহ হাসপাতালে যারা ছিল, তাদের কোনো গাফিলতি থাকতে পারে।”
পুরো ঘটনা তদন্তে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক।
দুই শিশুর মা লিমা বেগম অভিযোগ করেন, “ভালো করে না দেখেই শারীরিক অবস্থা ভালো আছে জানিয়ে বাড়িতে নিয়ে বেশি করে পানি ও টক খাওয়ানোর কথা বলেন চিকিৎসক। এরপর বাড়ি ফেরার পথে ইয়াসিন এবং বাড়িতে নেওয়ার পর মোরসালিনের মৃত্যু হয়।”
লিমা বেগম আরও বলেন, “সদর হাসপাতালে যদি সঠিক চিকিৎসা পেত, তাহলে হয়তো আমার দুই ছেলে এভাবে মারা যেত না। স্টমাক ওয়াশের কথা বললেও চিকিৎসক কথা শুনেননি।”
বৃহস্পতিবার রাতে আশুগঞ্জের দুর্গাপুর গ্রামে ‘প্যারাসিটামল সিরাপ খাওয়ার পর’ ইয়াসিন খান (৭) ও মোরসালিন খান (৫) নামে দুই ভাইয়ের মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ করে তাদের পরিবার। শিশু দুটি ওই গ্রামের ইটভাটার শ্রমিক সুজন খানের ছেলে।
ঘটনার বর্ণনায় শিশুদের মা বলেন, দুই ছেলের জ্বর হওয়ায় বৃহস্পতিবার বিকালে বাড়ির পাশের একটি ফার্মেসি থেকে তারা নাপা সিরাপ এনে খাওয়ান। তারপর দুই ছেলেরই বমি শুরু হয়।
অবস্থার অবনতি হলে তাদের প্রথমে আশুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, এরপর জেলা সদর হাসাপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে আনার পথে বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে ইয়াসিনের মৃত্যু হয়। আর বাড়িতে নিয়ে আসার পর রাত সাড়ে ১০টায় মারা যায় মোরসালিন।
এ ঘটনায় এরই মধ্যে সারাদেশের পাইকারি ও খুচরা দোকান পরিদর্শন করে নাপা সিরাপের একটি ব্যাচের ওষুধ পরীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর।
এ অবস্থার মধ্যেই রোববার সকালে দুর্গাপুর গ্রামে তদন্তে আসে ঔষধ প্রশাসনের ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি। তারা দুই শিশুর মা লিমা বেগম, চাচা উজ্জ্বল মিয়া ও দাদী লিলুফা বেগমের সাক্ষ্য নেন।
দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় আশুগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে পুলিশ। শুক্রবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন জেলার সিভিল সার্জন ডা. মুহাম্মদ একরাম উল্লাহ। দুটি তদন্ত কমিটি করে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।
আরো পড়ুন