গাইবান্ধায় ষষ্ঠ শ্রেণির একটিমাত্র পাঠ্যবই পৌঁছেছে

শিক্ষাবর্ষের প্রায় আড়াই মাস পেরিয়ে গেলেও গাইবান্ধার ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ১৪টির মধ্যে কেবল একটি পাঠ্যবই হাতে পেয়েছে; এতে স্কুলে আসার ক্ষেত্রে তারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।

গাইবান্ধা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 March 2022, 04:41 AM
Updated : 13 March 2022, 04:41 AM

জেলার কয়েকটি স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

গাইবান্ধা জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. এনায়েত হোসেন শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ষষ্ঠ শ্রেণির বই সংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আগামী ২৫ মার্চের মধ্যে সব বিষয়ের বই পাওয়া যেতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।”

২০১০ সাল থেকে বছরের প্রথম দিন উৎসব করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক তুলে দিচ্ছে সরকার। মহামারির কারণে ২০২১ ও ২০২২ সালে পাঠ্যপুস্তক বিতরণের উৎসব করা যায়নি।

যদিও শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই শিক্ষার্থীরা সব বই পেয়ে যাবে বলে আশা দিয়েছিলেন।

শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে, ষষ্ঠ শ্রেণিতে মোট ১৪টি বিষয়ে পাঠদান করা হয়।

বিষয়গুলো হচ্ছে- চারুপাঠ, আনন্দপাঠ (বাংলা দ্রুত পঠন), ইংলিশ ফর টুডে, ইংলিশ গ্রামার অ্যান্ড কমপোজিশন, গণিত, বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিতি, বিজ্ঞান, চারু ও কারুকলা, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়, ধর্ম, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, কৃষিশিক্ষা অথবা গার্হস্থ্য বিজ্ঞান, কর্ম ও জীবনমুখী শিক্ষা এবং শারীরিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য।

এর মধ্যে গাইবান্ধার শিক্ষার্থীরা হাতে পেয়েছে শুধু ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি’ বইটি।

গাইবান্ধা আসাদুজ্জামান গার্লস হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. ইদ্রিস আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এমনিতেই করোনাভাইরাসের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। ফলে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন সশরীরে পাঠদান শুরু হয়েছে। কিন্তু বইয়ের অভাবে ষষ্ঠ শ্রেণির পাঠদান করা যাচ্ছে না। বিষয়টি শিক্ষা বিভাগকে জানিয়েও ফল হচ্ছে না।”

সাদুল্লাপুর কে এম পাইলট সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী সাবিহা রহমান স্নেহা বলে, “ক্লাসের স্যাররা পুরান বই দিয়ে পড়াচ্ছেন। কিন্তু আমাদের কাছে বই না থাকায় এসব বিষয়ে কিছু বোঝা যাচ্ছে না।’

ক্ষোভ প্রকাশ করে ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীর অভিভাবক এ কে এম সমীয়ূর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “১৫ মার্চ থেকে সরকার সারা দেশে পুরোদমে পাঠদান শুরু করার ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের  হাতে এসেছে মাত্র একটি বই; বাকি ১৩টি বই তারা পায়নি। বই না পেলে ক্লাসে বাচ্চারা পড়বে কীভাবে? আগে দ্রুত বই দিক সরকার।”

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় জানিয়েছে, গাইবান্ধার সাত উপজেলায় নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৪২০টি।

সদর উপজেলার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বলেন, “বই না থাকার কারণে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি অনেকটাই কমে গেছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে অভিভাবককে বুঝিয়ে শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে ফেরানো হচ্ছে।”

বই না পাওয়ায় ষষ্ঠ শ্রেণির পড়ালেখা ব্যাহত হচ্ছে মন্তব্য করে সাদুল্লাপুর বহুমুখী পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. এরশাদ আলী বলেন, “পড়ালেখার প্রতি ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অনীহার সৃষ্টি হয়েছে।”

করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের দাপটে এ বছরের শুরু থেকে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করলে ২১ জানুয়ারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুনরায় বন্ধের ঘোষণা আসে।

পরিস্থিতির উন্নতিতে ২২ ফেব্রুয়ারি মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়া হয়। এরপর ২ মার্চ খোলে প্রাথমিক বিদ্যালয়।

এইচএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার্থীরা এখন চারটি বিষয়ে এবং দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা তিনটি বিষয়ে প্রতিদিন ক্লাস করছে।

অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে সপ্তাহে দুইদিন তিন বিষয়ে এবং ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে সপ্তাহে একদিন তিন বিষয়ের ক্লাস হচ্ছে।

আগামী ১৫ মার্চ থেকে সব শ্রেণিতে পুরোদমে ক্লাস শুরুর ঘোষণা দিয়েছে সরকার।