‘ভালো আছি’ বার্তাতেও দুশ্চিন্তায় বাংলার সমৃদ্ধির নাবিকের পরিবার

অবস্থানরত বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজ থেকে ‘ভালো থাকার’ বার্তা পেলেও দুশ্চিন্তা কাটছে না নাবিক জামাল হোসেনের পরিবারের।

বেনজির আহমেদ বেনু নরসিংদী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 March 2022, 01:33 PM
Updated : 3 March 2022, 03:41 PM

বাংলাদেশের পতাকাবাহী এই জাহাজে বুধবার ইউক্রেনের স্থানীয় সময় বিকেল সোয়া ৫টার দিকে (বাংলাদেশ সময় রাত প্রায় সোয়া ৯টা) রকেট হামলায় জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. হাদিসুর রহমান নিহত হন।

এর পর থেকেই উৎকণ্ঠায় জামাল হোসেনের (৫৯) পরিবার। তিনি নরসিংদীর জেলার পলাশ উপজেলার সান্তানপাড়া গ্রামের ফরহাদ উদ্দিন ওরফে তারা মিয়ার ছেলে। জামাল পরিবার নিয়ে চট্টগ্রামে থাকেন। স্ত্রী শামীমা আক্তার লাকী এক মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে সেখানে থাকেন। বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন।

ছয় ভাই আর চার বোনের মধ্যে জামাল সবার বড়। নরসিংদীর গ্রামের বাড়িতে অন্য ভাইয়েরা থাকেন।

বৃহস্পতিবার বিকালে জামালের ছোট ভাই ইয়ারকিন খান কনক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রাতে ঘটনাটি শোনার পর পরই আমরা চট্টগ্রামে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনে (বিএসসি) যোগাযোগ করি। কিন্তু তখন তারা আমাদের বিশেষ কিছু জানাতে পারেনি। সারারাত আমাদের খুব দুঃশ্চিন্তায় গেছে। আমরা তো ভাইয়ের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করতে পারছি না।

“পরে আজ সকালে আমরা আবার যোগাযোগ করি। তখন তারা আমাদের জানায় যে, বাকি ২৮ ক্রুর সবাই ভাল আছে। তারা জাহাজেই আছে। সবশেষ দুপুর দেড়টার দিকে আমার ভাই, ভাবীর মোবাইলে একটা মেসেজ পাঠাইছে যে, ‘আমি সহকর্মীদের সঙ্গে জাহাজে ভাল আছি। তোমারা কোনো চিন্তা করিও না’।”

বাংলার সমৃদ্ধি’র মালিকানা বিএসসির হলেও ডেনিশ কোম্পানি ডেলটা করপোরেশনের অধীনে সেটি ভাড়ায় চলছিল। গত ২৬ জানুয়ারি মুম্বাই বন্দর থেকে রওনা হয়ে তুরস্কের ইরেগলি হয়ে ইউক্রেইনের ওলভিয়া বন্দরে পৌঁছায় জাহাজটি।

২২ ফেব্রুয়ারি জাহাজটি বন্দরের আউটার অ্যাংকরেজে ছিল, পরদিন ইনার অ্যাংকরেজে নিয়ে যাওয়া হয়।

এই বন্দর থেকে সিমেন্ট ক্লে নিয়ে ২৪ ফেব্রুয়ারি ইতালির রেভেনা বন্দরের উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা ছিল বাংলার সমৃদ্ধির। কিন্তু সেদিন ভোরে রাশিয়া ইউক্রেইনে আগ্রাসন শুরু করলে পরিস্থিতি রাতারাতি বদলে যায়।

জাহাজটি যেখানে নোঙ্গর করে আছে সেখান থেকে মূল সাগরে যেতে ৬০ নটিক্যাল মাইল পথ পার হতে হবে এবং সেজন্য স্থানীয় ‘পাইলট’ দরকার, যে পথ দেখিয়ে জাহাজটিকে বের করে নেবে। কিন্তু যুদ্ধের মধ্যে তা পাওয়া যাচ্ছে না।

তাছাড়া সাগরে মাইন পাতা রয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। ফলে যুদ্ধের মধ্যে সেখান থেকে বের হওয়ার উপায় নেই জাহাজটির। এ পরিস্থিতির মধ্যেই বুধবার ওই জাহাজে রকেট হামলা হয়।

ক্রু জামালের ভাই কনক বলেন, “বিএসসি আমাদের বলেছে, হামলার পর বোট গিয়েছিল জাহাজের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য। তখন সব নাবিক ও ক্রুদের নামিয়ে আনা হয়। কিন্তু আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর নাবিক-ক্রুরা স্থলভাগে আসেননি। কারণ, যুদ্ধের মধ্যে তারা স্থলভাগকে অনিরাপদকে মনে করেছেন। জাহাজে খাবার আছে, সবাই একসঙ্গে থাকবেন।”

জামাল হোসেন প্রায় চার দশক ধরে জাহাজে জাহাজে কাজ করেন বলে জানান তার ভাই কনক। তিনি বলেন, জামাল হোসেন গত ১২ ডিসেম্বর জাহাজে উঠেন। বোম্বাই বা থাইল্যান্ড থেকে তিনি জাহাজে উঠেন। জাহাজে থাকার সময় প্রায় প্রতিদিনই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ইমোতে কথা বলতেন।

“যুদ্ধ শুরুর পর গত এক সপ্তাহ ধরে আর যোগাযোগ করতে পারছিলাম না। নেটওয়ার্ক পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে এখন উনি যেভাবে আমাদের জানাচ্ছেন, আমরা সেটাই সত্য বলে ধরে নিচ্ছি।”

সরকারের প্রতি কনকের অনুরোধ তার ভাইকে যেন দ্রুত ইউক্রেন থেকে ফিরিয়ে আনা হয়। তিনি বলেন, “শুধু আমার ভাই না। বাকি সব ক্রকে দ্রুত ফিরিয়ে আনা হোক। আর কোনো মায়ের বুক যেন খালি না হয়। এটা যে কত দুঃশ্চিন্তার, সেটা পরিবারের সদস্য ছাড়া কেউ বুঝবে না।”

আরও পড়ুন