‘জাহাঙ্গীরনগর ক্যাম্পাস কি আমাদের, নাকি মশাদের?’

মশার উপদ্রবে অতীষ্ঠ হয়ে উঠেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পড়ার টেবিল, খাবার কক্ষ, ঘুমানোর জায়গা, হোটেল-রেস্তোরাঁ সবখানে মশা একটা ‘আতঙ্ক’ হয়ে দেখা দিয়েছে।

হাসিবুর রহমান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 March 2022, 05:38 PM
Updated : 1 March 2022, 06:19 PM

“কোথাও একটু শান্তি নাই, শান্তিতে দাঁড়িয়ে গল্প করব সে সুযোগটাও নাই। যেখানেই যাই সেখানেই মশা। জাহাঙ্গীরনগর ক্যাম্পাস আমাদের, নাকি মশাদের – সেটাই বুঝতে পারছি না। মাত্র কিছুক্ষণ হলো এখানে এসে দাঁড়িয়েছি – এত মশা, এত মশা; অতিষ্ঠ, অতিষ্ঠ।”

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এভাবে মশার উপদ্রবের বর্ণনা দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী ঐন্দ্রিলা মজুমদার অর্না।

কেউ কেউ মশাকে বর্তমানে ক্যাম্পাসের সবচেয়ে ‘বড় আতঙ্ক’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তাদের একজন সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষার্থী নুসরাত আরিফিন ইশা।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বর্তমানে ক্যাম্পাসে সবচেয়ে বড় ‘আতঙ্কের’ নাম মশা। যেখানেই যাচ্ছি মানুষ থাকুক বা না থাকুক মশা তো থাকবেই। একা থাকতে চাইলেও একা থাকা সম্ভব না মশার জন্য। হলের ভিতর, টিএসসি কিংবা কোথাও খেতে বসলেও মশার কামড় আগে খেতে হয়।

“কনফিউজড হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। ক্যাম্পাসটা আসলে মশাদের নাকি আমাদের? মনে হতেই পারে – মশারাই জাহাঙ্গীরনগর।”

মশার উৎপাতে অতিষ্ঠ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ক্যাম্পাসে সীমাহীন মশার উপদ্রব দেখা যাচ্ছে। হল, ক্যান্টিন, ক্যাফেটেরিয়া কিংবা ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র – সবখানেই মশার মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি লক্ষ্য করার মতো।

মশার সমস্যার কারণে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ও ঘুমে ব্যাঘাত ঘটছে।  

লোক-প্রশাসন বিভাগের এক শিক্ষার্থী ফাইজা নূর সিলকি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের ক্যাম্পাসে মশা সর্বত্র বিরাজমান। কানের কাছে ঘ্যান ঘ্যান যেমন করে, কামড়ের কথা আর না-ই বললাম। হলের মধ্যে কয়েল দিয়েও হয় না, মশারি ছাড়া কোনো গতি নাই। পরের দিন সকালে একটা ক্লাস-পরীক্ষা থাকলে রাতে যে একটা ভালো ঘুম দেব সেটা মশার জন্য সম্ভবপর হয়ে ওঠছে না। খাবারের দোকান থেকে শুরু করে আবাসিক হল পর্যন্ত সব জায়গায়ই একটা জিনিস ‘ধ্রুব’, আর সেটা হচ্ছে মশা।”

তিনি বলেন, “১৬ ডিসেম্বর যখন হলে ফিস্ট হলো, তখন সেখানে সবাইকে একটি করে অডোমসের টিউব দেওয়া হয়েছিলো। সেখান থেকে আমরা আঁচ করতে পারি মশা নিয়ে আমাদের ক্যাম্পাসে কীরকম বিড়ম্বনার স্বীকার হতে হয়। অডোমসের প্রভাব তো আর বেশিক্ষণ থাকে না, তারপর আবার আগের মতোই মশার কামড় খেতে হয়।”

ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী যারা জাহাঙ্গীরনগর ক্যাম্পাসে থাকে সবাই মশার ব্যাপারে কম-বেশি ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছেন অভিযোগ কলে এই শিক্ষার্থী অতি দ্রুত এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে কর্তৃপক্ষে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষার্থী আদনান করিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মশার উপদ্রব এখন প্রকট আকার ধারণ করেছে। এটা এত পরিমাণ বেড়ে গেছে যে সন্ধ্যার পরে চেয়ার-টেবিলে পড়তে বসতে পারি না; বরং সন্ধ্যার পরপরই মশারি টানিয়ে বিছানায় বসে পড়তে হয়।”

হলগুলোর পাশে ময়লা বা ডোবার মতো হয়ে থাকে, যেসব পরিবেশ মশার প্রজননের জন্য আদর্শ জায়গা, বলেন তিনি।

তিনি অতি দ্রুত মশা নিধন করে একটি সুন্দর পরিবেশের দাবি জানান কর্তৃপক্ষের কাছে।

তবে বিষয়টিকে অন্যভাবে বর্ণনা করেছেন কেউ কেউ; তাদের মধ্যে একজন চারুকলা বিভাগের অর্নব আদিত্য রাহি।

মশার উপস্থিতি এত বেশি কেন জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জুন-জুলাই-অগাস্ট সময়ের তুলনায় ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে মশার ঘনত্ব অনেক বেড়ে যায়। জাহাঙ্গীরনগরেও এর ব্যতিক্রম নয়। যেটি মার্চ মাসে আরও অনেক বেড়ে যাবে। কিছু পদক্ষেপ নিলে এই সময়ে মশার ঘনত্ব এত বাড়ত না। এই সময়ে কিউলেক্স মশার ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি। এই মশা জন্মায় ড্রেন, ডোবা, নর্দমা ও পচা পানিতে।

“নিয়ন্ত্রণের জন্য যেসব জায়গায় পচা পানি জমে আছে সেগুলোকে পরিষ্কার করে ফেলতে হবে। নার্ভিসাইড ও ফগিং ব্যবহার করে এসময় মশা দমন করা যায়।”

কিউলেক্স কুইনকুইফেসসিটাস মশার কামড়ে ভয়াবহ গোদ রোগ হতে পারে বলে জানান তিনি।

মশা নিধনে কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুর রহমান বাবুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের এখানে ফগিং মেশিন আছে মাত্র চারটি। হল কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে জানালে আমরা ফগিং মেশিন তাদের দেই। এখন পর্যন্ত যারা আমাদেরকে জানিয়েছে মশার সমস্যা তাদেরকে ফগিং মেশিন দেওয়া হয়েছে। যারা জানায়নি তাদেরকে দেওয়া হয়নি।”

হল প্রাধ্যক্ষ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ইতিমধ্যে এস্টেট অফিসে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যেন প্রত্যেকটা হলে ফগিং মেশিনের মাধ্যমে স্প্রে করা হয়। হল প্রাধ্যক্ষদেরও বলে দেওয়া হয়েছে, হল সংশ্লিষ্ট মালিদের দিয়ে হলের আশেপাশে যাত ঝোপ-ঝাড় রয়েছে কেটে ফেলার জন্য। আশা করি অতি দ্রুত আমরা এই সমস্যা থেকে সমাধান পাব।”