গাইবান্ধায় ‘পরিত্যক্ত’ ভবনে ‘ঝুঁকি’ নিয়ে ক্লাস

গাইবান্ধার আসাদুজ্জামান গার্লস হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজে ‘পরিত্যক্ত’ ভবনের কক্ষে ‘ঝুঁকি’ নিয়ে ক্লাস করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা; এতে যেকোনো সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।

গাইবান্ধা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Feb 2022, 07:45 AM
Updated : 26 Feb 2022, 07:45 AM

জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত। বর্তমানে হাইস্কুল শাখায় কর্মরত আছেন ২০ জন শিক্ষক; শিক্ষার্থী সহস্রাধিক।

স্কুলের শিক্ষকরা জানান, প্রতিষ্ঠার দুই বছর পর ১৯৬৮ সালে স্কুলের উত্তর ও পশ্চিম অংশজুড়ে ২২ কক্ষের দ্বিতল একটি ভবন নির্মিত হয়। দ্বিতীয় তলায় শ্রেণিকক্ষ নয়টি। নীচতলার একটিতে অফিস, একটিতে লাইব্রেরি, একটিতে নামাজ ঘর, একটিতে অধ্যক্ষের কক্ষ, দুইটি সহকারী শিক্ষকদের বসার কক্ষ এবং সাতটি শ্রেণিকক্ষ রয়েছে।

গাইবান্ধার আসাদুজ্জামান গার্লস হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজে ‘পরিত্যক্ত’ ভবনের কক্ষে ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা; এতে যে কোনো সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।

তার মধ্যে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি ২০০৮ সালে দ্বিতীয় তলার তিনটি কক্ষ পরিত্যক্ত ও ছয়টি কক্ষ ঝুঁকিপূর্ণ এবং ২০১৬ সালে নিচতলার দুটি পরিত্যক্ত ও পাঁচটি শ্রেণিকক্ষ ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. ইদ্রিস আলী সরকার।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মূল ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। যে কারণে ভয়ে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসতে চায় না। তারপরও শিক্ষার্থীদের পাঠদান যাতে বিঘ্নিত না হয়, সেজন্য বিকল্প স্থানে পাঠদান চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।”

সরেজমিনে দেখা গেছে, শ্রেণিকক্ষগুলোর ছাদের পলেস্তারা খসে গেছে। আরসিসি পিলার ও গ্রেটবিমে ফাটল দেখা দিয়েছে। বৃষ্টির দিনে ছাদ চুয়ে পানি পড়ে। অনেকক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের বই-খাতাও ভিজে যায়।   

গাইবান্ধার আসাদুজ্জামান গার্লস হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজে ‘পরিত্যক্ত’ ভবনের কক্ষে ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা; এতে যে কোনো সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।

দশম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জান্নাতুল মাওয়া বলে, ভবনে ফাটল। এ ছাড়া স্কুলে পাঠদান চলাকালীন মাঝে মাঝে ছাদের পলেস্তারাও খসে পড়ে। তাই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে তাদের ভয়ে ভয়ে ক্লাস করতে হয়। ফলে লেখাপড়ায় মনোযোগ নষ্ট হচ্ছে।

স্কুল শাখার সহকারী শিক্ষক মৃণাল কান্তি সরকার বলেন, “প্রায় ১২ বছর ধরে ঝুঁকি নিয়ে এই ভবনে পাঠদান করতে হচ্ছে। যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। শিক্ষার্থীদের নিয়ে দুশ্চিন্তা হয়।

“এ কারণে অনেক অভিভাবক ছেলেমেয়েদের বিদ্যালয়ে আসতে দিতে চান না। ফলে দিন দিন শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমছে”, যোগ করেন ওই শিক্ষক।

গাইবান্ধা সদর উপজেলার খোলাহাটি গ্রামের বাসিন্দা ও অভিভাবক জিয়াউল হক বলেন, “শ্রেণিকক্ষ পরিত্যক্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণার পরও ওই ভবনে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানো হচ্ছে। এতে অভিভাবকরাও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।”

একই এলাকার আরেক অভিভাবক আবদুর রউফ বলেন, পাঠদানের সময় দুর্ঘটনা ঘটলে এর দায়ভার কে নেবে?

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জানান, “এসব বিষয়ে গত বছরের অক্টোবর মাসে জেলা প্রশাসক, পৌর মেয়র, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, গণপূর্ত বিভাগ ও জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে লিখিত আবেদন দেওয়া হয়েছে। ভবনটি সংস্কারের জন্য বার বার তাদের তাগাদাও দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না।“

গাইবান্ধা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. বেলাল আহমেদ বলেন, “গত মাসে ভবনটি পরিদর্শন করা হয়েছে। নতুন ভবন নির্মাণের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।”