রোববার বিকালে নরসিংদীর পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজিম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “কলেজছাত্র মিঠু হোসেনকে হত্যার ঘটনায় শনিবার সকালে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।“
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- শ্রীপুর উপজেলার মিঠালু গ্রামের পিয়ার উদ্দিনের মেয়ে শাহনাজ আক্তার পপি (২৮), তাঁর স্বামী আবদুল বাতেন (৩৫) এবং একই এলাকার তাপন খাঁন (৩২)।
গত বৃহস্পতিবার মনোহরদী উপজেলার একদুয়ারিয়া ইউনিয়নের হুগলিয়াপাড়ার রূপচান মিয়ার বাড়ির খড়ের গাদার নিচ থেকে মিঠু হোসেনের (২৪) মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। তিনি সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার রায়পুর এলাকার মৃত মোসলেম উদ্দিনের ছেলে। তিনি সিরাজগঞ্জের একটি ইসলামিয়া ডিগ্রি কলেজের বিএ প্রথম বর্ষের ছাত্র।
পরিবার জানায়, মিঠু পড়াশোনার পাশাপাশি অনলাইনে শাড়ির ব্যবসা করতেন। বাবুরহাটের বিখ্যাত শাড়ি বাজার থেকে কেনার জন্যই তিনি নরসিংদীতে এসেছিলেন। আর তারপরই খুনের শিকার হন।
আশরাফুল আজিম বলেন, “শাহনাজ আক্তার পপির ফেইসবুকে তরুণদের টার্গেট করে বন্ধুত্ব ও প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলতেন। পরে তাঁকে ফাঁদে ফেলার জন্য ডেকে আনতেন। মিঠুকেও একই কায়দায় সিরাজগঞ্জ থেকে দেখা করার কথা বলে ডেকে আনেন।
“মিঠু গত বুধবার মনোহরদী আসার পর পূর্বপরিকল্পনা মতো পপি তার সহযোগীদের হাতে তুলে দেন। তারা মিঠুকে পাশের শিবপুর উপজেলার আশুটিয়া পূর্বপাড়ার একটি নির্জন এলাকায় নিয়ে যায়।
পুলিশ সুপার বলেন, “সেখানে আটকে রেখে মারধর করে মিঠুর অভিভাবকদের কাছে মুক্তিপণ দাবি করা হয়। মুক্তিপণের টাকা আদায় করতে ব্যর্থ হয়ে তাকে খুন করা হয়। তার পিঠে, গলায় ও চোখের নিচে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
বাদী মিনু শনিবার ঘটনার বর্ণনায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গত বুধবার ভোরে শাড়ি কেনার জন্য নরসিংদীর উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হয় তার ভাই। সন্ধ্যায় সে মায়ের মোবাইলে ফোন করে নরসিংদী পৌঁছেছে বলে জানান। ওইদিন রাত ৮টার দিকে আবারও ফোন দিয়ে মিঠু জানায় যে, কয়েকজন ব্যক্তি তাকে অপহরণ করেছে এবং এক লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করছে।
তিনি বলেন, “পরে রাত ১১টার দিকে মিঠু ফোন করে মাকে আবার বলে যে, তোমরা তো টাকা দিতে পারলে না। অপহরণকারীরা মনে হয় আমাকে মেরে ফেলবে। কোন ভুল করে থাকলে ক্ষমা করে দিও। এ সময় অজ্ঞাত ব্যক্তি তার হাত থেকে মোবাইল নিয়ে আমাকে বলে, যেহেতু টাকা দিতে পারসনি তাই তোর ভাইকে বাঁচিয়ে রাখতে পারছি না।
আগামীকাল তোর ভাইয়ের লাশ খোঁজে নিস। এ কথা বলে মিঠুর মোবাইল বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরদিন বৃহস্পতিবার সকালে মিঠুর খোঁজে আমি, মা ও নানি নরসিংদীর উদ্দেশ্যে রওনা হই।”
এরপর বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টার দিকে অজ্ঞাত ব্যক্তি মিঠুর মোবাইল থেকে আবার মুক্তিপণ দাবি করে জানিয়ে মিনু বলেন, “এ সময় তিনি মিঠুর সঙ্গে কথা বলতে চাইলে অপহরণকারী বলেন, আগে টাকা দেন তারপর ভাইয়ের সাথে কথা বলেন। একথা বলে আবার মোবাইল বন্ধ করে দেওয়া হয়।”
বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে সিরাজগঞ্জের পরিচিত এক সাংবাদিকের মাধ্যমে মনোহরদী উপজেলায় অজ্ঞাত যুবকের লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে মিঠুর মা ও বোন মনোহরদী থানায় যান। পরে পুলিশের মোবাইল ফোনে ছবি দেখে মিঠুর লাশ শনাক্ত করেন তারা।