শনিবার রংপুরে এক অনুষ্ঠানে চিনিকলের লোকসান এবং চিনিকল শ্রমিকদের বাঁচানোর বিষয়ে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, “লালফিতার দৌরাত্ম্য বড় বেশি। এতে আমি নিজেও কিছুটা কাবু হয়ে গেছি। কারণ সারাটা জীবন কাজ করেছি। সরকারের এই চেয়ারে বসে মনে হয় এটা কবে বদলাবে! তবে চেষ্টা করা হচ্ছে, আমরা চেষ্টা করছি।”
দেশের ‘একটি চিনিকলও লাভজনক নয়’ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এই দেশে যে আখ হয় তা দিয়ে চিনিকল চালু রাখা সম্ভব নয়। এই খাতে শুধু লোকসান হচ্ছে। এ অবস্থায় চিনিকল শ্রমিকদের বাঁচাতে বিকল্প ব্যবস্থা নিতে হবে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে চিনিকলগুলোকে প্রয়োজনে বেসরকারিখাতে চিনি ছাড়া অন্য কিছু উৎপাদন নিয়ে ভাবতে হবে। এতে শ্রমিকরা বেকার থাকবে না, লোকসান বন্ধ হবে। কিন্তু লালফিতার দৌরাত্ম্যে অনেক কিছুই করা সম্ভব হচ্ছে না।”
কর্মসংস্থান সৃষ্টি না হওয়ায় রংপুর অঞ্চল পিছিয়ে পড়ছে মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, রংপুর অঞ্চলে ভারী শিল্প কলকারখানা নেই। বড় বড় কোম্পানিগুলো এখানে আসতে চায় না। কারণ উৎপাদন খরচ বেশি পড়বে। এর পেছনে যোগাযোগ ব্যবস্থা, পরিবহন খরচ, গ্যাস সংযোগ না থাকাসহ বিভিন্ন কারণ রয়েছে। তবে এ অঞ্চলের শ্রমিকরা অনেক পরিশ্রমী ও সুশৃঙ্খল। জাতীয় পর্যায়েও সুনাম রয়েছে।
নীলফামারীর সৈয়দপুর বিমানবন্দর নিয়ে তিনি বলেন, এখন সৈয়দপুর বিমানবন্দরে দিনে ১৩-১৭টি ফ্লাইট ওঠানামা করছে। ঈদের সময়ে ২২টিরও বেশি হয়ে থাকে। আগামী এক বছরের মধ্যে সেখান থেকে প্রতিদিন অন্তত ৩০টি ফ্লাইট ওঠানামা করবে।
এক সময় সৈয়দপুর বিমানবন্দরে অর্ধেক মানুষও আসত না উল্লেখ করে তিনি বলেন, যাতায়াতে অনেক কষ্ট হতো, যাত্রী পাওয়া যেত না। ইতোমধ্যে সাড়ে ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। বিমানবন্দরের মূল ভবনটা হয়ে গেছে। লাউঞ্জ, ব্যাংক বুথসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও বেড়েছে।
“এখন এটি অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর। তবে নেপাল ও ভুটানের ফ্লাইট নিয়ে কথা চলছে; এটিও চালু করা সম্ভব।”
তিস্তা নদীর দুই পাশে সাড়ে আট হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নিয়ে রংপুর অঞ্চলের মানুষকে হতাশ না হওয়ার আহ্বান জানান বাণিজ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী খুব ‘সিরিয়াস’। আন্তর্জাতিক একটা ছোট ঝামেলা আছে, এ কারণে বিলম্ব হচ্ছে। তবে এটা হলে নদীর দুই পাড়ে বিশাল অর্থনৈতিক জোন গড়ে তোলা সম্ভব হবে। এ জন্য আমাদের একটু অপেক্ষা করতে হবে। সব কিছু ব্যালেন্স করেই এটা করা হবে। কারণ প্রধানমন্ত্রী নিজেই চাইছেন তিস্তা মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়ন হোক।”
বেসরকারি সংস্থা আরডিআরএস কার্যালয়ে এই অনুষ্ঠানে ‘জাতীয় উন্নয়নে অঙ্গীকার: শিক্ষা, শোভন কর্মসংস্থান, জেন্ডার সমতা’ শীর্ষক রংপুর সংলাপ অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে আয়োজন করে সিপিডি, সুজন ও ইউএনডিইএফ।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, জাতীয় বাজেটে রংপুর বিভাগের জন্য উন্নয়ন বরাদ্দে বরাবরই বৈষম্যমূলক হয়ে আসছে। নদীর এপার-ওপারের এই বৈষম্যের কারণে রংপুর অঞ্চল শিক্ষা, কর্মসংস্থান, বৈদেশিক আয়সহ সব দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছে।
এ সময় তিনি রংপুর বিভাগে একটি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানান।
অনুষ্ঠানে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেমের সভাপতিত্বে সূচনা বক্তব্য রাখেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার।
আরও বক্তব্য দেন সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সদরুল আলম দুলু, সুজনের জেলা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, নারী সংগঠক ও উন্নয়নকর্মী মোশফেকা রাজ্জাক, আরডিআরএস বাংলাদেশের হেড অব ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম আব্দুস সামাদ প্রমুখ।