বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর আলী ওরফে আকবর মুনসী ভূরুঙ্গমারী উপজেলার চর ভূরুঙ্গামারী ইউনিয়নের ধুলারকুটি গ্রামের মৃত বাবন শেখের ছেলে। ৪৩ বছর বয়সে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
ওই সময় তিনি বিবাহিত ছিলেন। তার পাঁচ ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে যুদ্ধের আগে তিন সন্তানের জন্ম হয়েছিল।
গত ৪ ফেব্রুয়ারি ৯৪ বছর বয়সে তিনি মারা যান।
আকবর আলীর বড় ছেলে আমির হোসেন জানান, মুক্তিযোদ্ধাদের ভারতীয় তালিকা ১৭ নম্বর বইয়ের ৪০১৪৭ ক্রমিক, লাল মুক্তিবার্তায় ৩১৬০৪০৫২০ ক্রমিক এবং ২০০৫ সালের ২১ মে বেসামরিক গেজেটের ৩৭৯১ পৃষ্ঠায় ১০৬৪ নম্বর তালিকায় তার নাম রয়েছে।
২০০৮ সালে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির সময় তার জন্ম তারিখ দেওয়া হয়েছে ১৯৭১ সালের ১০ মে। আর বড় ছেলে আমির হোসেনের জন্ম তারিখ ১৯৬০ সালের ২ মার্চ দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী আকবর আলী তার ছেলে আমির হোসেনের চেয়ে ছোট।
আমির হোসেন জানান, পরিচয়পত্রে এমন বয়স বিভ্রাট নিয়েও এতদিন মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পেয়ে আসছিলেন তার বাবা। কিন্তু ২০২০ সালে অনলাইনে তথ্য পূরণ করতে গিয়ে পরিচয়পত্র জটিলতায় ভাতা বন্ধ হয়ে যায়।
“জন্ম তারিখ সংশোধনের জন্য ঢাকা, রংপুরসহ কুড়িগ্রাম নির্বাচন অফিসে ঘুরেও কোনো সুরাহা হয়নি,” বলেন তিনি।
বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগে গত ৪ ফেব্রুয়ারি তিনি মারা যান।
এ সময় পরিবারের সদস্যদের আর্থিক কষ্ট ছিল বলে স্বজনদের অভিযোগ।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর আলীর সহযোগী আরেক বীর মুক্তিযোদ্ধা হযরত আলী বলেন, ”আকবর আলী, লস্কর আলী আমার চাচাত ভাই। আমরা তিনজনই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। আমরা মুক্তিযোদ্ধা ভাতাও পেয়ে আসছি। কিন্তু হঠাৎ আইডি কার্ডে সমস্যা হওয়ায় আকবর আলীর ভাতা বন্ধ হয়ে যায়।”
আকবর আলীর স্ত্রী সুফিয়া বেওয়া বলেন, ”ভাতা বন্ধ হওয়ার পর থেকে উনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। অর্থাভাবে ঠিকমত চিকিৎসা হচ্ছিল না। আমরা অফিস-আদালতে অনেক দৌঁড়াইছি। কিন্তু কেউ সাড়া দেয় নাই। শেষ পর্যন্ত মানুষটা অসুস্থ অবস্থায় মারা গেল।”
সাবেক ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা ডেপুটি কমান্ডার জামাল উদ্দিন বলেন, “মৃত আকবর আলী একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। তার বয়স ঠিক করার জন্য আমরা বহু চেষ্টা করেছি। কিন্তু কেন হলো না তা জানা নেই।”
”মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের দাবি সঠিক তদন্ত করে মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর আলীর ভাতা পূণরায় চালু করার ব্যবস্থা করা হোক,” বলেন তিনি।
এ ব্যাপারে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম রাকিব জানান, বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর আলীর জন্ম তারিখ সংশোধনের আবেদনটি ‘গ’ ক্যাটাগরিতে বিবেচনা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এই আবেদনটি নিষ্পত্তির জন্য প্রয়োজনীয় তদন্ত সাপেক্ষে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে।
রংপুর আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা জিএম সাহাতাব উদ্দিন সমস্যাটি সমাধানের আশ্বাস দিয়ে বলেন, ”বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। আমি যত দ্রুত সম্ভব সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করব।”