খাওয়ার বিনিময়ে পড়ানোর বিজ্ঞাপন, আলমগীরের চাকরির ব্যবস্থা

‘দুবেলা ভাতের বিনিময়ে পড়াতে চাই’ পোস্টার দেওয়া সেই আলমগীরের চাকরির ব্যবস্থা করেছেন বগুড়া পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী।

জিয়া শাহীন বগুড়া প্রতিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Feb 2022, 05:02 PM
Updated : 2 Feb 2022, 05:11 PM

বুধবার দুপুরে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আলমগীরের সঙ্গে সাক্ষাৎ সুদীপ কুমার জানান, যোগ্যতা অনুযায়ী একটি পদে তাকে ‘স্বপ্ন সুপার সপে’ চাকরি দেওয়া হবে।

বেলা ১২টার দিকে আলমগীর কবির পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে যান। সেখানে প্রায় দুই ঘণ্টা আলমগীরের সঙ্গে কথা বলেন এসপি সুদীপ কুমার চক্রবর্তী। এ সময় তার কাছে থেকে বিস্তারিত শোনেন তিনি।

এসপি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আলমগীরের ওই বিজ্ঞাপনের সত্যতা যাচাই করার জন্য তার সাক্ষাৎকার নিই। কথা বলে মনে হয়েছে তার চাকরি আসলেই প্রয়োজন। আবার এটাও ঠিক, ওই ধরনের বিজ্ঞাপন দেওয়া হীন মানসিকতার পরিচয়। সে কথা তাকে বলেছি। সেও বলেছে এটা সঠিক হয়নি।”

এসপি বলেন, “স্বপ্ন সুপার শপে আমরা তার চাকরির ব্যবস্থা করছি। তবে কোন পদে চাকরি হচ্ছে তা এখনও নিশ্চিত করা হয়নি। যোগ্যতা যাচাই করে পদ নির্ধারণ করা হবে। এই শর্তে তার হাতে নিয়োগপত্র তুলে দেওয়া হয়েছে।”

চাকরি পাওয়া বিষয়ে আলমগীর বলেন, “এই মুহূর্তে কিছু বলতে পারছি না।” 

আর্থিক অনটনের কারণে আলমগীর কবির তিন বেলা খাওয়ার বিনিময়ে শিক্ষকতা করতে চান জানিয়ে শহরে বিজ্ঞপন দেন; যেখানে লেখা, “শুধুমাত্র দুবেলা ভাতের বিনিময়ে পড়াতে চাই।”

দেওয়ালে দেওয়ালে সাঁটানো সেই বিজ্ঞাপনের ছবি ফেইসবুকে পোস্ট করেন এক ব্যক্তি। এরপর তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

বিজ্ঞাপনটি অনলাইনে ছড়িয়ে পড়লে জেলা পুলিশ তার খোঁজ করে।

পোস্টটি ছড়িয়ে পড়লে আলমগীর কবির নিজেই বিব্রত অবস্থায় পড়েন বলে স্বীকার করেছেন।

তিনি বলেন, ফেইসবুকে ওই পোস্ট তিনি করেননি। কেউ একজন করেছেন।

৩২ বছর বয়সী আলমগীর কবির জানান, তিনি বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর করেন। 

১৯৯০ সালের ২০ মে জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার শরাইল গ্রামে আলমগীর কবিরের জন্ম হয়। ২০০৭ সালে নিজ এলাকার শরাইল উচ্চ বিদ্যালয়ের কবির এসএসসি পাস করেন। ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষে সরকারি আজিজুল হক কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন তিনি। ৩ দশমিক ৪৭ পয়েন্ট সিজিপিএ নিয়ে স্নাতক শেষ করেন। একই কলেজ থেকে সিজিপিএ ৩ দশমিক ৪৪ পয়েন্ট নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর করেন। 

পল্লী চিকিৎসক মো. কফিল উদ্দিন ও মা আম্বিয়া বেগমের ৫ সন্তানের মধ্যে আলমগীর সবার ছোট। বড় সন্তান রুহুল আমিন শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী। কবিরের বড় তিন বোন।

আলমগীর কবির জানান, তাদের পরিবারের কিছু জমি আছে। এতে তাদের সারা বছরের ভাতের চাহিদা মিটে যায়। না খেয়ে থাকার মতো অভাবী তারা নন। 

বিজ্ঞাপন দেওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এখন একটি প্রাইভেট ট্যুইশনি করে দেড় হাজার টাকা পান। এটা দিয়ে তার খাওয়া খরচ হয়। কিন্তু ঢাকায় চাকরির পরীক্ষা দিতে গেলে টাকা লাগে।

“একবার ঢাকায় গেলে সারা মাসে আমি খাব কী? কিন্তু ট্যুইশনির বিনিময়ে দুই বা তিনবেলা ভাতের ব্যবস্থা হলে আমি নিশ্চিন্তে পরীক্ষা দিতে ঢাকায় যেতে পারব। এমন চিন্তা থেকে ওই সময় বিজ্ঞাপনটি দিয়েছিলাম।”

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের বিভিন্ন ছবি ও স্ক্রিনশট ছড়ানোর বিষয়ে আলমগীর বলেন, “আমি কিছু ছবি ফেইসবুকে দিয়েছিলাম। আমার এসব ছবি মানুষ ভুলভাবে ব্যাখ্যা করছে। ওই বিজ্ঞাপন দেওয়ার কারণে অনেকেই আমাকে নিয়ে কটূক্তি করছেন। অথচ আমি দেশ বা সরকারকে কোনোভাবে হেয় করার উদ্দেশ্যে এসব করিনি।”