কনডেম সেলে প্রদীপ-লিয়াকতের প্রথম রাত

সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশের কনডেম সেলের নিঃসঙ্গ জীবন শুরু হয়েছে; পাশের প্রকোষ্ঠে সঙ্গী হিসেবে থাকছেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আরেক আসামি সাবেক পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলী।

কক্সবাজার প্রতিনিধিশংকর বড়ুয়া রুমিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Feb 2022, 11:33 AM
Updated : 1 Feb 2022, 11:33 AM

দেড় বছর আগে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহাকে হত্যার পর এতদিন বিচারাধীন মামলায় হাজতি হিসেবে কক্সবাজারের কারাগারে ছিলেন তারা। সোমবার রায় হয়ে যাওয়ার পর বন্দি হিসেবে তাদের অবস্থার পরিবর্তন হয়।

কক্সবাজারের জেল সুপার মো. নেছার আহমেদ মঙ্গলবার দুপুরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সোমবার কারাগারে আনার পরপরই কারাবিধি অনুযায়ী আসামিদের কয়েদির পোশাক পরানো হয়। পরে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামিকে দুটি কনডেম সেলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

তিনি বলেন, “একটি কনডেম সেলে একজন আসামিই থাকেন। গতকাল রাত থেকেই তারা সেখানে দুটি আলাদা সেলে একাকী রয়েছেন।”

ফাঁসির আসামি হিসেবে প্রদীপ ও লিয়াকতের সামনে রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ রয়েছে। আপিলে মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকলে তারা আবেদন করতে পারবেন আপিল বিভাগে। সেখানে রায়ের পর তা পুনর্বিবেচনার আবেদনও করতে পারবেন। তবে ততদিন পর্যন্ত কনডেম সেলেই থাকতে হবে তাদের।

কারাগার সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সাজাপ্রাপ্তদের কারাগারে আনার পর সবাইকে কয়েদির পোশাক পরতে দেওয়া হয়। তখন প্রদীপ কুমার দাশ সেই পোশাক পরতে ঝামেলা তৈরি করেন। তিনি কয়েদির পোশাক পরবেন না বলে গোঁ ধরেন। পরে অবশ্য তাকে বুঝিয়ে-শুনিয়ে কয়েদির পোশাক পরানো হয়।

“লিয়াকত অবশ্য কারারক্ষীদের কথামতো পোশাক পরে কনডেম সেলে ঢুকে যান। তিনি কোনো কথা বলছিলেন না; কিছুটা বিমর্ষ ছিলেন। বাকিরা কোনো ঝামেলা না করেই নিজ নিজ ওয়ার্ডে চলে যান। তারা রাতে ও সকালের খাবার গ্রহণ করেছেন। প্রদীপ আর লিয়াকতকে বিমর্ষ দেখা গেছে।”

সিনহা হত্যা মামলায় প্রদীপ ও লিয়াকতের মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি আরও ছয় আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে। খালাস পেয়েছেন সাতজন। 

জেল সুপার নেছার বলেন, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ছয়জনকে বিভিন্ন ওয়ার্ডে পাঠানো হয়েছে। যে সাতজন বেকসুর খালাস পেয়েছেন, তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

“নিয়ম অনুযায়ী, একজন আসামি খালাস পেলে তিনি কাঠগড়া থেকেই চলে যেতে পারেন। কিন্তু যেহেতু শনাক্তকরণের ব্যাপার থাকে তাই তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। এই মামলার সব আসামিই রায় শেষে কারাগারে এসেছেন। পরে সাতজনের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে গতকাল রাতেই তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তারা চলে গেছেন।”

খালাস পাওয়া আসামিরা হলেন- বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন ও আব্দুল্লাহ আল-মামুন, এএসআই মো. লিটন মিয়া, এবং এপিবিএন এর এসআই মোহাম্মদ শাহজাহান, কনস্টেবল মোহাম্মদ রাজীব ও মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ।

যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত, টেকনাফ থানার কনস্টেবল রুবেল শর্মা ও এএসআই সাগর দেব এবং সিনহার সঙ্গীদের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলার তিন সাক্ষী, পুলিশের সোর্স নুরুল আমিন, নেজাম উদ্দিন ও মোহাম্মদ আয়াজ।

২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের শামলাপুর চেকপোস্টে গুলি করে হত্যা করা হয় সিনহাকে। সেনাবাহিনী থেকে

স্বেচ্ছায় অবসর নেওয়ার পর কয়েকজন তরুণকে সঙ্গে নিয়ে ভ্রমণ বিষয়ক তথ্যচিত্র বানানোর জন্য কক্সবাজারে গিয়েছিলেন এ যুবক।

টেকনাফে মাদকবিরোধী অভিযানের নামে ওসি প্রদীপের বন্দুকযুদ্ধে ছদ্মাবরণে হত্যা এবং চাঁদাবাজির ঘটনা জেনে যাওয়ায় সিনহাকে পরিকল্পিতভাবে প্রদীপ হত্যা করেন বলে আদালতের রায়ে উঠে এসেছে।

কার কী দায়

আসামি

পরিচয়

অভিযোগ

শাস্তি

প্রদীপ কুমার দাশ

কক্সবাজারের টেকনাফ থানার ওসি

সিনহা মো. রাশেদ খানকে হত্যার ষড়যন্ত্র, পরিকল্পনা, প্ররোচনা ও হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকা এবং পরে ঘটনা ধামা-চাপা দেওয়ার চেষ্টা

মৃত্যুদণ্ড

লিয়াকত আলী

টেকনাফ থানার বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক

হত্যার ষড়যন্ত্র, পরিকল্পনা, সিনহা মো. রাশেদ খানকে সরাসরি গুলি করে হত্যা, ওসি প্রদীপের এসব পরিকল্পনায় সক্রিয় সহযোগিতা, হত্যার ঘটনাকে ধামাচাপা দিয়ে ভিন্নখাতে প্রভাবিত করার চেষ্টা

মৃত্যুদণ্ড

নন্দ দুলাল রক্ষিত

বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এসআই

সিনহাকে হত্যায় সহযোগিতা, ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রভাবিত করার জন্য সিনহার গাড়ি থেকে ইয়াবা ও গাঁজা উদ্ধার এবং পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে মিথ্যা মামলা দায়ের

যাবজ্জীবন

রুবেল শর্মা

টেকনাফ থানার কন্সটেবল

ওসি প্রদীপের সঙ্গে ঘটনস্থলে গিয়ে হত্যার ঘটনা আড়াল করার চেষ্টা, সিনহার গাড়ি থেকে মাদক উদ্ধারের গল্প বানানো, সিনহার সঙ্গীকে নির্যাতন

যাবজ্জীবন

সাগর দেব

টেকনাফ থানার এএসআই

ওসি প্রদীপের সঙ্গে ঘটনস্থলে গিয়ে হত্যার ঘটনা আড়াল করার চেষ্টা, সিনহার গাড়ি থেকে মাদক উদ্ধারের গল্প বানানো, সিনহার সঙ্গীকে নির্যাতন

যাবজ্জীবন

মো. নুরুল আমিন

পুলিশের সোর্স

হত্যার পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নে জড়িত থাকা, সিনহাকে ডাকাত আখ্যা দিয়ে হত্যার চেষ্টা, সিনহার সহযোগীদের তথ্য সংগ্রহ, প্রদীপকে সহযোগিতা

যাবজ্জীবন

মোহাম্মদ আইয়াজ

পুলিশের সোর্স

হত্যার পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নে জড়িত থাকা, সিনহাকে ডাকাত আখ্যা দিয়ে হত্যার চেষ্টা, সিনহার সহযোগীদের তথ্য সংগ্রহ, প্রদীপকে সহযোগিতা

যাবজ্জীবন

মো. নিজাম উদ্দিন

পুলিশের সোর্স

হত্যার পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নে জড়িত থাকা, সিনহাকে ডাকাত আখ্যা দিয়ে হত্যার চেষ্টা, সিনহার সহযোগীদের তথ্য সংগ্রহ, প্রদীপকে সহযোগিতা

যাবজ্জীবন

লিটন মিয়া

বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের এএসআই

সিনহা হত্যাকাণ্ডের পর ঘটনা ভিন্নখাতে প্রভাবিত করতে সহায়তা করা, আহত সিনহার প্রতি নিষ্ঠুরতা দেখানো, অস্ত্র উঁচিয়ে লোকজনদের হুমকি, সিনহার সঙ্গীর ওপর নির্যাতন

খালাস

ছাফানুল করিম

বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের কনস্টেবল

সিনহা হত্যাকাণ্ডের পর ঘটনা ভিন্নখাতে প্রভাবিত করতে সহায়তা করা, আহত সিনহার প্রতি নিষ্ঠুরতা দেখানো, অস্ত্র উঁচিয়ে লোকজনদের হুমকি, সিনহার সঙ্গীর ওপর নির্যাতন

খালাস

কামাল হোসাইন আজাদ

বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের কনস্টেবল

সিনহা হত্যাকাণ্ডের পর ঘটনা ভিন্নখাতে প্রভাবিত করতে সহায়তা করা, আহত সিনহার প্রতি নিষ্ঠুরতা দেখানো, অস্ত্র উঁচিয়ে লোকজনদের হুমকি, সিনহার সঙ্গীর ওপর নির্যাতন

খালাস

আবদুল্লাহ আল মামুন

বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের কনস্টেবল

সিনহা হত্যাকাণ্ডের পর ঘটনা ভিন্নখাতে প্রভাবিত করতে সহায়তা করা, আহত সিনহার প্রতি নিষ্ঠুরতা দেখানো, অস্ত্র উঁচিয়ে লোকজনদের হুমকি, সিনহার সঙ্গীর ওপর নির্যাতন

খালাস

শাহজাহান আলী

এপিবিএন এর এসআই

শামলাপুর চেকপোস্টে সিনহাকে হত্যায় সহযোগিতা, সিনহাকে লিয়াকত গুলি করার পর তাকে ঘিরে রাখা

খালাস

আবদুল্লাহ আল মাহমুদ

এপিবিএন কনস্টেবল

শামলাপুর চেকপোস্টে সিনহাকে হত্যায় সহযোগিতা, সিনহাকে লিয়াকত গুলি করার পর তাকে ঘিরে রাখা

খালাস

মো. রাজিব হোসেন

এপিবিএন কনস্টেবল

শামলাপুর চেকপোস্টে সিনহাকে হত্যায় সহযোগিতা, সিনহাকে লিয়াকত গুলি করার পর তাকে ঘিরে রাখা

খালাস