সোমবার সন্ধ্যায় রায়ের পর এক প্রতিক্রিয়ায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে আইনজীবী মহিউদ্দিন খান বলেন, “আমরা রায়ের কপি পাওয়ার পর উচ্চ আদালতে যাব।”
মামলার রায়ে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ছাড়াও বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক পরিদর্শক লিয়াকত আলীর ফাঁসির রায় দিয়েছে আদালত।
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল বিকালে তার রায়ে সিনহাকে হত্যায় সহযোগিতা এবং ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগে তিন পুলিশ সদস্য এবং পুলিশের তিন সোর্সকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন।
এ ছাড়া মামলার ১৫ আসামির মধ্যে বাকি চার পুলিশ সদস্য এবং তিন এপিবিএন সদস্যকে বেকসুর খালাস দিয়েছে আদালত।
মহিউদ্দিন খান শুধু সাবেক ওসি প্রদীপের পক্ষেই মামলায় লড়েছেন জানিয়ে বলেন, “আদালত আজ এই মামলায় রায় দিয়েছেন। আমরা শুরু থেকেই ওসি প্রদীপের খালাস চেয়েছি। আদালতের সন্তুষ্টি ও সম্মান বজায় রেখে আমরা মামলায় শুনানি করেছি।”
“আদালতের প্রতি সম্মান রেখেই বলছি, এই রায়ে আমরা সন্তুষ্ট হতে পারিনি। আমরা রায়ের কপি পাওয়ার পর উচ্চ আদালতে যাব”, যোগ করেন প্রদীপের আইনজীবী।
তবে রায়ের পর বাদীপক্ষের আইনজীবী সন্তষ্টির কথা বলেছেন।
আদালত চত্বরে গণমাধ্যমের কাছে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. জাহাঙ্গীর বলেন, “মূল কিলার দুজন তাদের ফাঁসি হয়েছে। আমরা খুশি।… মোটামুটি খুব ভালো জাজমেন্ট হয়েছে। এ ছাড়া ছয়জনের যাবজ্জীবন দেওয়া হয়েছে। এতে আমরা সন্তষ্ট।”
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।
এরপর ৫ অগাস্ট টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ এবং বাহারছড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের তৎকালীন ইনচার্জ লিয়াকত আলীসহ ৯ জন পুলিশ সদস্যকে আসামী করে কক্সবাজার আদালতে মামলা করেন নিহত সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস।
রায় শুনতে আজ মাকে নিয়ে কক্সবাজারে ছিলেন মামলার বাদী। রায় ঘোষণার পর তিনিও গণমাধ্যমের কাছে নিজের সন্তোষ্টির কথা তুলে ধরেন।
শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বলেন, “অবশ্যই আমি সন্তুষ্ট আর প্রত্যাশা শব্দ দুইটা আলাদা করে রেখেছি। ”
“আমাদের প্রত্যাশা অনেকখানি পূরণ হয়েছে, সন্তুষ্টির জায়গাটা সেদিন বলব, যেদিন এটা একজিকিউট হবে”, যোগ করেন বাদী।
৩০০ পৃষ্ঠার রায়ের সারসংক্ষেপ পড়ে বিচারক বলেন, ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয় সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানকে। আর তাতে আট আসামির সংশ্লিষ্টতা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে।
ধূসর জ্যাকেট পরে কাঠগড়ায় থাকা প্রদীপ এবং তার পাশে থাকা লিয়াকতের মুখে এ সময় কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।
তবে যাবজ্জীবন সাজা পাওয়া ছয় আসামি এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল রুবেল শর্মা এবং এএসআই সাগর দেব এবং পুলিশের তিন সোর্স নুরুল আমিন, নেজাম উদ্দিন ও মোহাম্মদ আয়াজের মধ্যে কেউ কেউ কান্নায় ভেঙে পড়েন, কয়েকজন উচ্চস্বরে প্রতিবাদ জানান।
খালাস পাওয়া এপিবিএন এর এসআই মোহাম্মদ শাহজাহান, কনস্টেবল মোহাম্মদ রাজীব ও কনস্টেবল মোহাম্মদ আব্দুল্লাহের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ জাকারিয়া তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “এই রায়ে আমরা অত্যন্ত সন্তুষ্ট। প্রমাণ হয়েছে যে,এই দেশে আইনের শাসন আছে, ন্যায়বিচার আছে। এই ন্যায়বিচারের নিশ্চিতের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল।”