ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল নদীগর্ভে, প্রার্থী-ভোটারের বাস বাইরে

বগুড়ার সারিয়াকান্দীর যমুনার চরাঞ্চলের ইউনিয়ন বোহাইলের বিরাট অংশ নদীগর্ভে বিলীন হওয়ায় ইউপি নির্বাচনের প্রার্থী ও ভোটারের বেশিরভাগের বসবাস এলাকার বাইরে।

জিয়া শাহীন বগুড়া প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Jan 2022, 02:57 PM
Updated : 30 Jan 2022, 02:57 PM

ষষ্ঠ ধাপে সোমবার [৩১ জানুয়ারি] বোহাইল ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

ভোটাররা এলাকার বাইরে থাকায় এই ইউনিয়নের ভোটের প্রচার চলেছে একই উপজেলার অন্য ইউনিয়নসহ পাশের ধুনট, শেরপুর ও বগুড়া সদর উপজেলায়ও।

এমনকি ঢাকার সাভার ও মিরপুর এবং গাজীপুরে গার্মেন্টস কর্মীদের মধ্যেও এই ইউনিয়নের ভোটের প্রভাব পড়েছে। এসব এলাকায় গর্মেন্টস কর্মীদের মধ্যে অনেকেই এই ইউনিয়নের ভোটার।  

সরেজমিনে এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বোহাইল ইউনিয়নে মোট ১২ হাজার ভোটার রয়েছেন। ভোটকেন্দ্র রয়েছে নয়টি। এর মধ্যে দুটি ভোটকেন্দ্রের অবস্থান পার্শ্ববর্তী কামালপুর ইউনিয়নে।

সোমবার অনুষ্ঠিতব্য ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে পাঁচজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

এরা হলেন সাবেক চেয়ারম্যান নৌকার গোলাম মোস্তফা টুকু, সাবেক চেয়ারম্যান চশমা প্রতীকের আব্দুল মজিদ, ঘোড়া প্রতীকের নাইমুল হাসান লিটন, মোটরসাইকেলের তাহেরুল ইসলাম এবং আনারস প্রতীকের আসাদুজ্জামান খান।   

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাঁচজন প্রার্থীর মধ্যে কেবল আনারস প্রতীকের প্রার্থী আসাদুজ্জামান খানই শুধু এই ইউনিয়নে [বোহাইলের শংকরপুর চর] বসবাস করেন।

নাইমুল হাসান লিটন ও তাহেরুল ইসলাম উপজেলার কামালপুর ইউনিয়নে, গোলাম মোস্তফা টুকু বগুড়া সদরে এবং আব্দুল মজিদ শেরপুর উপজেলায় বাস করেন।

এছাড়া ভোটারদের বিরাট অংশ একই উপজেলার [সারিয়াকান্দি] কামালপুর ইউনিয়ন, শেরপুর উপজেলা, বগুড়া সদর এবং ধুনট উপজেলার ভান্ডারবাড়ী ও গোসাইবাড়ী ইউনিয়নে বসবাস করেন।

ভোটের প্রচার চরের মাঝে যতটুকু হয়েছে, তার চেয়ে বেশি হয় চরের বাইরে অন্যান্য ইউনিয়ন ও উপজেলায়।

৮ নম্বর ওয়ার্ডের এলাকা আওলাকান্দী, চর আওলাকান্দী, বীর আওলাকান্দী, ভাঙ্গার ছোয় ও সোনাডাঙ্গা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ফলে এই ওয়ার্ডের ভোটকেন্দ্র কামালপুর ইউনিয়নের দড়িপাড়া গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থানান্তর করা হয়েছে।

একইভাবে কালিয়ান ওয়ার্ডের ভোটকেন্দ্র কালিয়ান প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রটির অবস্থানিএখন কামালপুর ইউনিয়নে।

ওইসব ওয়ার্ডের ভোটাররাও ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিভিন্ন ইউনিয়নে এমনকি অন্যান্য উপজেলায় বাস করছেন।

চুনিয়াপাড়ার বাসিন্দা ও ধুনট উপজেলার গোসাইবাড়ী ইউনিয়নের সদস্য খোকন মিয়া বলেন, “ভোট হচ্ছে সারিয়াকান্দীর বোহাইল ইউনিয়নে, আর মাইকিং, পোস্টার, মিটিং, ক্যানভাস হচ্ছে আমার গ্রামে।”

শংকরপুর চরের একজন বাসিন্দা আসলাম উদ্দিন।

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “বিগত প্রায় বিশ বছর হলো চেয়ারম্যান হয় বাইরে বসবাসকারীরা। চেয়ারম্যান এমনকি চেয়ারম্যান প্রার্থীরা এই ইউনিয়নের ভোটার হলেও থাকেন অন্য উপজেলা বা অন্য ইউনিয়নে।

“চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট এবং জন্ম সনদসহ অন্যান্য কাজে চরে বসবাসকারীদের বিড়ম্বনার শেষ নেই।”

ইউনিয়নের একজন ভোটার তাহেরা খাতুন গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। তিনি এলাকায় এসেছেন ভোট দিতে।

তাহেরা খাতুন বলেন, ”আমার মতো আরও অনেকেই ভোট দিতে এসেছে। যাতায়ত ভাড়া, থাকা খাওয়াসহ সব খরচা দিয়েছে একজন চেয়ারম্যান প্রার্থী।”

বর্তমান চেয়ারম্যান ও চশমা প্রতীকের প্রার্থী আব্দুল মজিদ বলেন, তিনি শেরপুর উপজেলার দুবলাগাড়ীতে বসবাস করেন এবং সেখানে ব্যবসায়ের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন।

নাগরিকদের সার্বিক সেবা দিতে অসুবিধা হয় কি না – প্রশ্নের জবাবে “শেরপুর থাকলেও এলাকার কাজ করতে সমস্যা হয় না“ বলে জানান আব্দুল মজিদ।

চারবারের চেয়ারম্যান ঘোড়া প্রতীকের নাইমুল ইসলাম লিটন বলেন, ”কামালপুর ইউনিয়নের কড়িতলা গ্রামে বাস করলেও আমাদের আদিবাড়ী বোহাইল গ্রাম।“

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম বলেন, ইউনিয়নটির অধিকাংশই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় সেখানে জনবসতি নেই। ভোটকেন্দ্র অন্য ইউনিয়নেও আছে। ভোটারও বসবাস করেন অন্যান্য উপজেলা কিংবা ইউনিয়নে।

এসব ব্যাখ্যা নির্বাচন কর্মকর্তারা দিতে পারবেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এ ব্যাপারে সারিয়াকান্দী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “আমদের বিষয় নির্বাচন করে দেওয়া। কোথায় কোন গ্রাম আছে বা নেই তা নির্ধারণ করবে স্থানীয় সরকার।”