আগুন নেভানোর পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছিল না জাহিন নিটওয়্যার্সে: ফায়ার সার্ভিস

নারায়ণগঞ্জের বন্দর এলাকায় বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যাওয়া জাহিন নিটওয়্যার্স কারখানায় আগুন নেভানোর পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছিল না বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Jan 2022, 05:15 PM
Updated : 28 Jan 2022, 05:15 PM

সাড়ে চার ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশনস) লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিল্লুর রহমান সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, “কারখানার ভেতরে আগুন নেভানোর পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছিল না। কারখানার ভেতরে

পানির ব্যবস্থা না থাকায় আগুন নেভাতে বেগ পেতে হয়েছে।”

কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জামাল উদ্দিন অবশ্য দাবি করেছেন, তার কারখানায় অগ্নিনির্বাপণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছিল। এর পেছনে নাশকতা ছিল কি না, সেই সন্দেহের কথাও তিনি বলেছেন।

নারায়ণগঞ্জের বন্দরের মদনপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় শুক্রবার বিকালে জাহিন নিটওয়্যার্স কারখানায় লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।

বন্দর উপজেলার মদনপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অলিম্পিক বিস্কুট ফ্যাক্টরির উল্টো দিকেই জাহিন নিটওয়্যার্স কারখানা কমপ্লেক্স। ভেতরে ছয়টি ভবনে নিটিং, ডায়িং, গার্মেন্টস, অ্যাম্ব্রয়ডারি, প্রিন্টিংসহ মোট ছয়টি ইউনিট।

জামালউদ্দিন গ্রুপের মালিকানাধীন জাহিন নিটওয়্যার্সের এই কারখানা চালু হয়েছিল ২০০৭ সালে। সব মিলিয়ে হাজার খানেক কর্মী সেখানে কাজ করলেও শুক্রবার ছুটির দিনে বেশিরভাগ ইউনিট ছিল বন্ধ।

কারও হতাহত হওয়ার বা নিখোঁজ থাকার তথ্য নেই বলে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসেন জানিয়েছেন।  

নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল আরেফিন জানান, বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে ওই কারখানায় আগুনের সূত্রপাত হয়। পরে ছয়টি ভবনের মধ্যে চারটিতেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে।

ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, সোনারগাঁও, বন্দরসহ আশপাশের ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি ইউনিট রাত ৯টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এরপর ভবনগুলোর ভেতরে ডাম্পিং এবং তল্লাশি শুরু করেন অগ্নি নির্বাপক বাহিনীর কর্মীরা।

আগুন যখন লাগে, তখন কারখানার ৫ নম্বর ইউনিটে কাজ করছিলেন শ্রমিক মাসুম বিল্লাহ। তিনি বলেন, নিট সেকশন বন্ধ থাকলেও ফিনিশিং ও উভেন সেকশনে কাজ হচ্ছিল।

“হঠাৎ দেখি উপরের তলায় আগুন জ্বলছে। প্রথমে দ্বিতীয় তলায় আগুন লাগে, এরপর দেখি উপরের দিকে উঠতে থাকে, তারপর ছড়িয়ে পড়ে। আমরা সবাই তখন বেরিয়ে আসছি।”

ক্ষতিগ্রস্ত চারটি ভবনের মধ্যে ৬ নম্বর ভবনের ছাদ ধসে পড়েছে জানিয়ে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক জিল্লুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ভবনটি আর ব্যবহার করার উপযোগী নেই।

“কারখানার ভেতরে প্রচুর পরিমাণে তৈরি পোশাক ছিল। গুদামেও কাপড় ছিল। এ কারণে আগুন দ্রুত ভবনগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে।”

তিনি বলেন, “ছুটির দিন হলেও কারখানার ভেতরে বিল্ডিং কোড অনুযায়ী ফায়ার ফাইটিং টিম

থাকার কথা। কিন্তু আমরা সেটি দেখতে পাইনি।”

কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক জামাল উদ্দিন দাবি করেন, তার কারখানায় আগুন নেভানোর ‘পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছিল’; কারখানা খোলা থাকলে এই ক্ষয়ক্ষতি হত না।

“শিপমেন্টের পণ্য, মেশিনসহ বিভিন্ন মালামাল পুড়ে ২৮ থেকে ৩০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। চারটা ভবনে কীভাবে আগুন লেগেছে, এটা নিছক দুর্ঘটনা, নাকি স্যাবোটাজ, বুঝতে পারছি না।”

কীভাবে সেখানে আগুন লেগেছে সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক সাজ্জাদ হোসেন। তিনি বলেছেন, নিয়ম মাফিক তাদের তদন্ত কমিটির কাজ শেষ হলেই বলা যাবে আগুন কীভাবে লেগেছে। ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক পরিমাণও তদন্ত কমিটি নির্ধারণ করবে।