যশোর-বেনাপোল সড়কে পরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত

করোনাভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণে স্বাস্থ্যবিধি পালনে কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে বেনাপোল-যশোর ও সাতক্ষীরার রুটে ধারণ ক্ষমতার বেশি যাত্রী নিয়ে যানবাহন চলাচল করছে।

বেনাপোল প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Jan 2022, 06:38 PM
Updated : 26 Jan 2022, 06:38 PM

যশোর-বেনাপোল ও যশোর-সাতক্ষীরা মহাসড়কে চলাচলকারী বাস ও তিনচাকার যান বাহনগুলোতে ধারণ ক্ষমতার বেশি যাত্রী বহন করা হচ্ছে।

এসব বাসের চালক, সুপারভাইজার ও সহকারীদের অধিকাংশের মুখে মাস্ক নেই। এসব যানবাহনে হ্যান্ড সেনিটাইজার কিম্বা জীবাণুনাশক স্প্রে করার কোনো ব্যবস্থা না রেখেই গতানুগতিকভাবে যাত্রী বহন করা হচ্ছে। চালক ও যাত্রীরা শারীরিক দূরত্ব মানছে না।

কোভিড সংক্রমণ বিবেচনায় স্বাস্থ্য বিভাগ যশোর জেলাকে লাল তালিকাভুক্ত করেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী ঢাকা ছাড়া উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রাঙামাটি, বগুড়া, কুষ্টিয়া, দিনাজপুর, যশোর, লালমনিরহাট, গাজীপুর, পঞ্চগড় এবং খাগড়াছড়ি জেলা রয়েছে উচ্চ ঝুঁকির রেড জোনে।

মধ্যম পর্যায়ের ঝুঁকিতে থাকা জেলাগুলো হলো শেরপুর, সিরাজগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, রংপুর, খুলনা, ময়মনসিংহ, ফেনী, কুড়িগ্রাম, জামালপুর, সিলেট, নাটোর, কক্সবাজার, ঠাকুরগাঁও, ঝিনাইদহ, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, নওগাঁ, বরিশাল, মাগুরা, জয়পুরহাট, ঝালকাঠি, নোয়াখালী, পটুয়ালী, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, সাতক্ষীরা, লক্ষ্মীপুর, পিরোজপুর, বাগেরহাট, শরীয়পুর ও নড়াইল।

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে বুধবার [২৬ জানুয়ারি] যশোরের ১৬৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১১০ জনের শরীরে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে বলে জানান পরীক্ষণ দলের সদস্য ড. শিরিন নিগার।

সরেজমিন বেনাপোল ও বাগআচড়া বাসস্ট্যান্ডে জানা গেছে, বেনাপোল থেকে আন্তঃজেলায় চলাচল করা বাস ছাড়াও দেশের অভ্যন্তরে অন্তত ১৪টি রুটে পরিবহন যাতায়াত করে। আর বাগআচড়া থেকে যশোরমুখী বাসগুলো চলাচল করে।

একটি বাসের চালকের সহকারীকে মাস্ক ব্যবহার না করার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “মাত্রই তো বিধিনিষেধ শুরু হলো, আরেকটু বাড়ুক; তখন আবার নিয়মিত মাস্ক পরব। মাস্ক পরে কথা বলা যায় না!”

বাসে এত যাত্রী তোলার কারণ জানতে চাইলে সুপারভাইজার লুৎফর রহমান বলেন, “আমরা তো প্রতিদিনই এমন যাত্রী বহন করি। তাছাড়া শনিবার থেকে নাকি বিধিনিষেধ দিয়েছে। অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলতে হবে, তারপরও তো এভাবে চলছি। কেউ তো কিছু কচ্ছে না। এই কদিন একটু যাত্রী বেশি হচ্ছে।”

মাস্ক ব্যবহার না করার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে যাত্রীদের কেউ বলেন, মুখ থেকে পড়ে গেছে। কেউ বলেন, আনতে ভুলে গেছেন। আবার কেউ বলেন, খুলে পকেটে রেখেছেন।

বাস যাত্রী বাগআচড়ার খোরশেদ আলম বলেন, "সবাই কচ্ছে তবে কেউ তো মাস্ক পরছে না। নাকের মদ্দি শিরশির করে তাই মাস্ক পরতি পারিনে।"

এমনই চিত্র দেখা গেছে বাসের অধিকাংশ যাত্রীর ক্ষেত্রে। সবারই বিধিনিষেধ মানায় অনীহা।

যশোরের সিভিল সার্জন বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস জানান, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মঙ্গলবার ১৩১টি নমুনা পরীক্ষা করে ১০৯ এবং যশোর সদর হাসপাতালে ১৩৪টি নমুনা পরীক্ষা করে ৮৭ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এদিন শনাক্তের হার প্রায় ৪৩.৩৫ শতাংশ।

সোমবার ৩৭৯টি নমুনা পরীক্ষায় ১৯৫ জনের করোভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এদিন আক্রান্তের হার প্রায় ৫১ শতাংশ। 

শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মীর আলিফ রেজা বলেন, “আমরা অনেক চেষ্টা করছি, মাইকিং করেছি, নিজে সরেজমিনে বুঝিয়েছি, জরিমানা করেছি; কিন্তু মানুষ তো অসচেতন, কিছুই মানতে চাচ্ছে না।  ধর্মের দোহাই দিচ্ছে, আরও কত কী ব্যাখ্যা। আমাদের নিজ থেকে সচেতন না হলে আসলেই তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।”