অনশন ও আন্দোলন দুটো ভিন্ন ব্যাপার: জাফর ইকবাল

অনশন ভাঙার পরও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলন চালিয়ে নিবেন কি-না সেটা তারাই নির্ধারণ করবেন বলে মন্তব্য করেছেন এ শিক্ষায়তনের সাবেক অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল।

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Jan 2022, 06:35 AM
Updated : 26 Jan 2022, 04:20 PM

আমরণ অনশনের সপ্তম দিনে বুধবার সকাল ১০টা ২৫ মিনিটের দিকে জনপ্রিয় এ লেখক ও তার স্ত্রী অধ্যাপক ইয়াসমিন হক পানি পান করিয়ে শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙান; পরে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন।

এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে জাফর ইকবাল বলেন, “আমি অনশন ও আন্দোলনটাকে ভিন্নভাবে দেখি। অলরাইট। তাদের যে উদ্দেশ্য, এই আন্দোলন করার জন্য অনশন করার প্রয়োজন নাই। কারণ, যে মানুষটার জন্য তারা অনশন করতে যাচ্ছে তার জন্য প্রাণ দেওয়াটা সমীচীন না। তারা যদি আন্দোলন করতে চায়, সেটা তাদের সিদ্ধান্ত।”

“তারা আমাদের অনুরোধ রক্ষা করে আজকে সবাই মিলে অনশন ভেঙেছে। আমি আমার জীবনে এর থেকে বেশি আনন্দ কখনও পাই নাই। আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।”

এ সময় পাশে থাকা ইয়াসমীন হক বলেন, “তারা (শিক্ষার্থীরা) ২৭ জন একসঙ্গে অনশন ভেঙেছে। এটা আমাদের জীবনের জন্য সবচেয়ে বড় পাওনা। প্রায় তিন বছর আমরা এখানে নাই।” 

এই আন্দোলন দমানোর জন্য যে প্রক্রিয়াগুলো নেওয়া হয়েছে সেটা নিষ্ঠুর, অমানবিক ও দানবীয়।

এর আগে বুধবার ভোর ৪টার দিকে তিনি স্ত্রী ইয়াসমিন হককে সঙ্গে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে যান এবং ভিসির বাংলোর সামনে রাস্তায় শামিয়ানা টাঙিয়ে অনশনে বসা আন্দোলনকারীদের মাঝে উপস্থিত হন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে গত ১৩ জানুয়ারি রাতে আন্দোলনে নামেন ওই হলের শিক্ষার্থীরা। এর জেরে পুলিশের লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেডে শিক্ষার্থীসহ ক্যাম্পাসের অন্তত অর্ধশত লোকজন আহত হন। সে ঘটনায় পুলিশ ‘গুলি বর্ষণ ও হত্যার উদ্দেশ্যে মারপিটের অভিযোগ’এনে অজ্ঞাতপরিচয় ২০০ থেকে ৩০০ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করে।

তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সেই নির্দেশ উপেক্ষা করে উল্টো উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে ১৯ জানুয়ারি বিকাল ৩টায় তারা অনশনে যান; ঘোষণা দেন উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাওয়ার।

শুরুতে মোট ২৪ শিক্ষার্থী অনশনে বসেন। এর মধ্যে নয়জন ছাত্রী এবং ১৫ জন ছাত্র। একজন অনশনকারীর বাবা গুরুতর অসুস্থ হলে তিনি প্রথম দিনই গ্রামের বাড়ি চলে যান। পরে তাদের সঙ্গে আরও পাঁচজন যুক্ত হন।

এই অবস্থার মধ্যে ভোর ৪টার দিকে জাফর ইকবাল স্ত্রী ইয়াসমিন হককে সঙ্গে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে যান এবং ভিসির বাংলোর সামনে রাস্তায় শামিয়ানা টাঙিয়ে অনশনে বসা আন্দোলনকারীদের মাঝে উপস্থিত হন।

প্রায় দুই ঘণ্টা তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের কথা শুনেন। জাফর ইকবাল শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙাতে রাজি করান। কিন্তু শিক্ষার্থীরা জানান, তাদের অনেকেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন, তারা সবাইকে নিয়েই একসঙ্গে অনশন ভাঙবেন।

সকাল ৮টায় অনশন ভাঙার কথা থাকলেও সবার হাসপাতাল থেকে আসতে এবং প্রস্তুতি নিতে দেরি হয়ে যায়।

জাফর ইকবাল ও ইয়াসমীন হক প্রত্যেক অনশনকারীর কাছে গিয়ে তাদের মুখে পানি তুলে দেন। এ সময় অনেক অনশনকারী কান্নায় ভেঙে পড়েন। জাফর ইকবাল তাদের গায়ে-মাথায় হাত বুলিয়ে দেন এবং সান্ত্বনা দেন।

সকালে গণমাধ্যমে জাফর ইকবাল আরও বলেন, “আমি এখানে আসার আগে সরকারের অনেক উচ্চমহলের লোকজন আমার সঙ্গে কথা বলেছেন। তাদের সঙ্গে কথা বলেই আমি এখানে এসেছি। আমি তাদের অনুরোধ করব, তারা আমাকে যে কথাগুলো দিয়েছেন; সেই কথাগুলো যেন তারা রক্ষা করেন। আমার আর ছাত্রদের ভিতরে কোনো পার্থক্য নাই।”

“এই কথাগুলো যদি রক্ষা করা না হয় তাহলে আমি বুঝে নেব, শুধু ছাত্রদের সঙ্গে নয়, আমার সঙ্গে এবং এদেশের যত প্রগতিশীল মানুষ আছে সবার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে। কাজেই আমি আশা করব, সেই কথা যেন তারা রাখেন।”

এ সময় এই আন্দোলনে অর্থ সহায়তা দেওয়ার জন্য পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় নিন্দা জানান এবং তাদের মুক্তি দাবি করেন। পাশাপাশি দুই থেকে তিনশ শিক্ষার্থীদের নামে যে মামলা হয়েছে তা যেন অবিলম্বে বাতিল করা হয়।