অসত্য তথ্য ছড়ানো হচ্ছে, অভিযোগ শাবি শিক্ষার্থীদের

উপাচার্যের অপসারণের দাবির আন্দোলন সম্পর্কে ‘বিভ্রান্তিকর ও অসত্য তথ্য’ ছড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Jan 2022, 01:32 PM
Updated : 24 Jan 2022, 01:32 PM

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সংগঠন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ আন্দোলনকে ‘শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংসের চক্রান্ত’ বলে উল্লেখ করার একদিনের মাথায় শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এই বক্তব্য এল। 

হল প্রাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের লাঠিপেটার পর উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবি তুলে সোমবার ষষ্ঠ দিনের মতো ধরে অনশন চলছে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে।

প্রতিদিনের মতো সোমবার দুপুর ১টায় নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, “আমাদের এই যৌক্তিক আন্দোলন সম্পর্কে, দায়িত্বশীল মহলে বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর এবং অসত্য তথ্য, উপস্থাপন করা হচ্ছে। এতে করে আমাদের আমাদের অহিংস আন্দোলনকে ঘিরে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হতে পারে।” 

আন্দোলন চলার মধ্যে গত শনিবার রাতে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে ঢাকায় শাবির শিক্ষক প্রতিনিধিদলের বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে শিক্ষামন্ত্রী ‘এই আন্দোলনে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ছাড়া আরও কেউ জড়িত বা ইন্ধন আছে কি-না’ তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন।

এর পর গতকাল রোববার বিবিসির সঙ্গে আলাপকালে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলও এই আন্দোলনকে অযৌক্তিক বলে অভিহিত করেন।

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা “এ আন্দোলনে তৃতীয় পক্ষের কোনো হস্তক্ষপের বা ইন্ধনের অভিযোগ সম্পূর্ণ অযোক্তিক এবং অমূলক” বলে দাবি করেন।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, “১৬ জানুয়ারি যে ন্যাক্কারজনক ঘটনাটি ঘটেছিল, তার প্রতিবাদে সাধারণ শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি তুলে এবং এখন পর্যন্ত এ আন্দোলন সাধরণ শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলন।“

আন্দোলনে সাধরণ শিক্ষার্থীরা সবসমসয় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছে উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, “অনশনকারীদের ওয়াশরুম ব্যবহার, হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া ও আসার প্রক্রিয়াটা আমাদের স্বেচ্ছাসেবীরা সবসময় তাদের মুঠোফোনে ধারণ করে রাখছে। এমতাবস্থায় তাদের অনশনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা অত্যন্ত দুঃখজনক ও অপ্রত্যাশিত।

“সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে আমরা যা দেখছি, একটি পদ আমাদের সবার প্রাণের চেয়ে, আসলে ওই ভাইস চ্যান্সেলরের পদের দাম বেশি মনে হচ্ছে। যেহেতু গণঅনশনের ডাক দিয়েছি, আমরা এখন ওই দিকেই যাব এবং মারা গিয়ে এটি প্রমাণ করব যে, ওই চেয়ারটার দাম আমাদের প্রাণের চেয়ে বেশি!”

শিক্ষার্থীরা বলেন, যে গুলি চালায়, তাকে চাই না। এটি আমাদের যৌক্তিক দাবি। এ দাবিতে আমাদের শিক্ষার্থীরা আমরণ অনশন করছে।

এদিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী সাদিয়া আফরিন বিকাল পৌনে ৫টায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এখন আমাদের অনশনকারীদের মধ্যে হাসপাতালে আছে ১৪ জন; বাকি ১৪ জন আছে ভিসির বাসভবনের সামনে। 

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ তুলে গত ১৩ জানুয়ারি রাতে আন্দোলনে নামেন ওই হলের শিক্ষার্থীরা।

এসময় তাদের তিনটি দাবির মধ্যে ছিল- প্রভোস্ট কমিটির পদত্যাগ, হলের অব্যবস্থাপনা দূর করে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং দ্রুত ছাত্রীবান্ধব ও দায়িত্বশীল প্রভোস্ট নিয়োগ দেওয়া।

পরে গত রোববার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করলে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে।

এরপর ওইদিন বিকালে ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েনের প্রতিবাদ করলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দেয় পুলিশ।

ধাওয়া-পাল্টার এক পর্যায়ে পুলিশ লাঠিপেটা করে, কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তাসহ অন্তত অর্ধশত আহত হন।

এরপর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দিলেও তা উপেক্ষা করে উল্টো উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।

আন্দোলনের এক পর্যায়ে আর শিক্ষার্থীরা উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে অনশন শুরু করেন, যা সোমবার ষষ্ঠ দিনে গড়িয়েছে।