রোববার আন্দোলনের দশম দিন রাত সোয়া ৮টার দিকে সভাপতি অধ্যাপক তুলসী কুমার দাস গণমাধ্যমের সামনে শিক্ষক সমিতির এ প্রস্তাবের কথা জানান।
‘উদ্ভূত পরিস্থিতিতে’ রোববার দুপুর আড়াইটা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত টানা সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা বিশ্ববিদ্যলয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে শিক্ষক সমিতির বৈঠক করার কথা জানান তিনি।
বৈঠকের পর সেখানে অন্যান্য নেতার উপস্থিতিতে সভাপতি চারটি সিদ্ধান্ত তুলে ধরেন। এগুলো হচ্ছে-
>> শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের ওপর বর্বরোচিত পুলিশি হামলার তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন। অবিলম্বে সরকার কর্তৃক নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে দায়ীদের চিহ্নিত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ।
>> অনশনরত শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙানোর জন্য যা যা দরকার তা অনতিবিলম্বে করতে হবে। এ ব্যাপারে সরকারের সহযোগিতা কামনা।
>> উপাচার্যের পদত্যাগের বিষয়টি সরকারের এখতিয়ারভুক্ত। এক্ষেত্রে অতি দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ করা হয়।
>> শিক্ষার্থীদের প্রতি কোনোরকম সহিংসতায় সম্পৃক্ত না হওয়ার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানানো হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি প্রতিনিধিদল গত শনিবার রাতে ঢাকায় শিক্ষামন্ত্রীর বাসায় গিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তুলসী দাস বলেন, “শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলা কখনই কাম্য নয়। শনিবার রাতে মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে আমরা বিষয়টি তুলেছি। শিক্ষামন্ত্রীও বলেছেন, এই ধরনের হামলা কখনই কাম্য নয়।”
শিক্ষক সমিতির নেতারা যখন কথা বলছিলেন, তার একটু আগেই উপাচার্যের বাসভবনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন আন্দোলনকারীরা।
এর প্রতিক্রিয়ায় শিক্ষক সমিতির সভাপতি বলেন, “এ মুর্হূতে উপাচার্যের বাসভবনের বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় আমরা খুবই উদ্বিগ্ন।”
শাবির বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ তুলে গত ১৩ জানুয়ারি রাতে আন্দোলনে নামেন ওই হলের শিক্ষার্থীরা।
এসময় তাদের তিনটি দাবির মধ্যে ছিল- প্রভোস্ট কমিটির পদত্যাগ, হলের অব্যবস্থাপনা দূর করে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং দ্রুত ছাত্রীবান্ধব ও দায়িত্বশীল প্রভোস্ট নিয়োগ দেওয়া।
পরে গত ১৬ জানুয়ারি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করলে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে।
ধাওয়া-পাল্টার এক পর্যায়ে পুলিশ লাঠিপেটা করে, কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তাসহ অন্তত অর্ধশত আহত হন।
এরপর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দিলেও তা উপেক্ষা করে উল্টো উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনের এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে অনশন শুরু করেন, যা রোববার পঞ্চম দিনে গড়িয়েছে।