কোভিড: রংপুরে স্বাস্থ্যবিধি পালনে উদাসীনতা

করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ রোধে সরকার নতুন করে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করলেও উত্তরের বিভাগীয় শহর রংপুরে স্বাস্থ্যবিধি পরিপালনে উদাসীনতা লক্ষণীয়।

রংপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Jan 2022, 12:44 PM
Updated : 23 Jan 2022, 12:44 PM

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তালিকায় রংপুর মধ্যম ঝুঁকিপূর্ণ জেলার তালিকায় রয়েছে। এছাড়া এই বিভাগের আরও কয়েকটি জেলা উচ্চ ঝুঁকি ও মধ্যম ঝুঁকিতে রয়েছে।

রোববার সরেজমিনে রংপুরের হাটবাজার, পরিবহন, হোটেল-রেস্তোরাঁসহ সরকারি-বেসরকারি অফিসসহ বিভিন্ন স্থানে ব্যাপকভাবে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করতে দেখা গেছে।

রংপুর নগরীর সিটি বাজার, দর্শনা মোড়, মডার্ন মোড়, মেডিকেল মোড়, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, জাহাজ কোম্পানি মোড়, কাচারী বাজার, শাপলা চত্বর, কামার পাড়াসহ বেশ কিছু এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

ভিড়ের মধ্যে মানুষ চলাফেরা করছে; মাস্ক পরার তেমন কোনো গরজ করছে না – সর্বত্রই যেন উদাসীন ভাব।

নগরীর কামার পাড়া মোড়ে কথা হয় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক আব্দুর রহিমের (৪০) সঙ্গে।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এল্যা মানুষ আগের মতো করোনাক ভয় পায় না। করোনার ইনফেকশন নিয়ে মানুষের সাহস হইছে । মুখোত মাস্ক পরলে কী হইবে হামরা তো টিকা নিয়েছি।”

রোববার সকালে নগরীর কাচারী বাজার এলাকায় অটোচালক ফায়জার মিয়া (৩০) বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভাই মুখে মাস্ক পরে কতক্ষণ থাকা যায়, নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। তাই মাস্ক পরি না। টিকা তো দিয়েছি। তাও কি হামার করোনা হবে? হইলে এল্যা কী করমো!”

এ সময় গাড়িতে একসঙ্গে সাত জন যাত্রী নিয়ে ভাড়ায় যাওয়া প্রসঙ্গে এই অটোচালক বলেন, “কম যাত্রী নিয়্যা ভাড়া মারলে তো ‘লস’। মহাজনোক (গাড়ির মালিক) দিমো কী, আর হামার সংসার চলবে কেমন করি? সোগ (সব) সময় তো যাত্রী উঠে না।”

প্রায় একইভাবে বলেন জাহাজ কোম্পানি মোড়ের মোটরসাইকেল চালক রফিকুল ইসলাম।

দেখা গেছে নগরের সিটি বাজার সংলগ্ন এলাকা ও বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে মানুষের জটলা। রিকশা, অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস ছাড়াও দূরপাল্লার অন্যান্য যাত্রীবাহী পরিবহনে যাত্রীদের ঠাসাঠাসি করে ওঠানো হচ্ছে। যাত্রী থেকে শুরু করে পরিবহন খাত সংশ্লিষ্ট কেউই ঠিকমতো স্বাস্থ্যগত সুরক্ষার নীতি মানছেন না। মাস্ক থাকলেও কারও হাতে, আবার কারও পকেটে। তবে হাট-বাজারে বেশির ভাগ মানুষের মুখে মাস্ক নেই।

রংপুর সিটি বাজার দেখে বোঝার উপায় নেই দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে কঠোর বিধিনিষেধ জারি আছে। সংক্রমণ বৃদ্ধি নিয়ে মানুষের মধ্যে বাড়তি কোনো সতর্কতা চোখে পড়ছে না এখানে।

একই চিত্র নগরের নবাবগঞ্জ বাজার, বেতপট্টি, পায়রা চত্বর, কাচারি বাজার, জাহাজ কোম্পানি মোড় এলাকাসহ ব্যবসা প্রধান এলাকাগুলোতে। এসব বাজারের দোকানগুলোতে মানুষ গাদাগাদি করে কেনাকাটা করছে। অধিকাংশ মানুষের মুখে মাস্ক নেই।

এদিকে, শনিবার (২২ জানুয়ারি) রংপুর জেলা প্রশাসন ও মিঠাপুকুর উপজেলা প্রশাসনকে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে সচেতনতামূলক প্রচারণা করতে দেখা গেছে।

তবে নাগরিক সচেতনতা তৈরিতে সরকারিভাবে জোরালো প্রচার চালাতে দেখা যায়নি। এ কারণে সংক্রমণ বৃদ্ধি নিয়ে মানুষের মধ্যে বাড়তি কোনো সতর্কতাও চোখে পড়ছে না।

বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন রংপুর মহানগর সাধার সাধারণ সম্পাদক আতিক উল আলোম কল্লোল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যেহেতু ইয়োলো জোন হিসেবে রংপুরকে ঘোষণা করা হয়েছে। সেহেতু করোনার বিস্তার রোধে জনসচেতনতার বিকল্প নেই। তাই আমরা আমাদের জায়গা থেকে কাজ করছি।”

রংপুরে করোনা প্রতিরোধে গঠিত নাগরিক কমিটির সভাপতি খন্দকার ফখরুল আনাম বেঞ্জু তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সবাই নিজ অবস্থান থেকে সচেতন হলে পরিস্থিতি অনুকূলে থাকবে। আমরা সচেতনতা সৃষ্টিতে চেষ্টা করছি। কিন্তু সাধারণ মানুষ উদাসীন ও অসচেতন। এজন্য জনগণকে বিধিনিষেধ মানাতে প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে। তা না হলে অতীতের মতো পরিণতি হবে।”

রংপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি মাহবুবার রহমান তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সচেতনতা সৃষ্টিতে চেষ্টা করছে। সবাইকে আমাদের নিজ নিজ জায়গা থেকেও কাজ করতে হবে যেহেতু সাধারণ জনগণের মধ্যে উদাসীনতা কাজ করছে।”

রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. আবু মো. জাকিররুল ইসলাম বলেন, করোনার বিস্তার রোধে জনসচেতনতার বিকল্প নেই। জনগণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে সংক্রমণের হার অনেকাংশে কমে যাবে।

তিনি বলেন, রংপুর বিভাগে করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ ওঠা-নামা করছে। দিন দিন করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে ভারতের কোলঘেঁষা এই বিভাগ। গত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগজুড়ে আরও ৬৬ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ সময়ে আক্রান্ত কোনো রোগীর মৃত্যু হয়নি। শনাক্তের হার ২২ দশমিক ৬০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী ঢাকা ছাড়া উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রাঙামাটি, বগুড়া, কুষ্টিয়া, দিনাজপুর, যশোর, লালমনিরহাট, গাজীপুর, পঞ্চগড় এবং খাগড়াছড়ি জেলা রয়েছে উচ্চ ঝুঁকির রেড জোনে।

মধ্যম পর্যায়ের ঝুঁকিতে থাকা জেলাগুলো হলো শেরপুর, সিরাজগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, রংপুর, খুলনা, ময়মনসিংহ, ফেনী, কুড়িগ্রাম, জামালপুর, সিলেট, নাটোর, কক্সবাজার, ঠাকুরগাঁও, ঝিনাইদহ, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, নওগাঁ, বরিশাল, মাগুরা, জয়পুরহাট, ঝালকাঠি, নোয়াখালী, পটুয়ালী, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, সাতক্ষীরা, লক্ষ্মীপুর, পিরোজপুর, বাগেরহাট, শরীয়পুর ও নড়াইল।