শুক্রবার রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি তুলসী কুমার দাসের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদল সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানযোগে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন।
শনিবার দুপুর ২টা ২৫ মিনিটে তুলসী কুমার দাস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা এখন ঢাকায় আছি।“
প্রতিনিধিদলে আরও রয়েছেন- শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মহিবুল আলম, ভৌত বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক রাশেদ তালুকদার, ফলিত বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আরিফুল ইসলাম, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন খায়রুল ইসলাম রুবেল।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি আরও বলেন, “শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা এখনও হয়নি। আলোচনা হলে সুষ্ঠু সমাধান পাব বলে আমরা আশাবাদী।"
তিন দফা দাবি নিয়ে শুরু হওয়া আন্দোলনে এক দফায় এসে কেন্দ্রীভূত হয়েছে গত ১৫ জানুয়ারি পুলিশের রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষপের পর।
এরপর থেকে শাবি ক্যাম্পাসে উত্তাল পরিস্থিতি, উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন পদত্যাগ করছে না বলে গত বুধবার বিকাল ৩টা থেকে আমরণ অনশনে যায় শিক্ষার্থীরা। শনিবার আন্দোলনের চতুর্থ দিন চলছে। ২৩ আমরণ অনশনকারীর মধ্যে হাসপাতালে আছে ১৫ জন।
শুক্রবার বিকাল ৩টা ৬ মিনিটে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল ইসলাম নাদেলের মাধ্যমে শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনির সাথে মুঠোফোনে কথা হয় শিক্ষার্থীদের। শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় যেতে আহ্বান জানান এবং তাদের দাবি সম্পর্কে আলোচনার কথা বলেন।
কিন্তু শিক্ষার্থীরা শফিউল ইসলাম নাদেলের মাধ্যমে শিক্ষামন্ত্রীকে জানান, আপনি আমাদের বর্তমান পরিস্থিতি সরাসরি দেখুন, আমরা কেমন আছি, আমাদের অনেকেই অসুস্থ, আমরা তাদেরকে রেখে যেতে চাই না।
অনশনরত শিক্ষার্থী শাহেরিয়ার আবেদীন শুক্রবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের জনান, "এখন ভার্চুয়াল মাধ্যমে কথা বলা যায়। এখন তো ক্লাস হয় অনলাইনে, পাশাপাশি সবকিছুই তো হয় অনলাইনে, তাহলে আলোচনা অনালাইনে করা যায়।"
এই আলোচনার পর থেকে এখন পর্যন্ত শিক্ষামন্ত্রীর পক্ষ থেকে কোনো বার্তা পাননি বলে জানিয়েছেন আন্দেলনরত শিক্ষার্থী মোহাইমিনুল বাশার। একই কথা জানিয়েছেন শিক্ষার্থী ইয়াছির সরকার।
শিক্ষার্থীরা শুক্রবার রাতে সাংবাদিকদেরকে জানিয়েছেন, শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে ঢাকায় গিয়ে সরাসরি আলোচনা করবেন না তারা।
এর আগে শুক্রবার বিকালে মুঠোফোনে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার সময় শিক্ষার্থীরা ঢাকায় গিয়ে আলোচনা করতে সম্মত হলেও পরে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে অনলাইন মাধ্যমে আলোচনায় বসার প্রস্তাব দেন। যার কারণে আলোচনায় সম্মত হলেও হয়নি আলোচনা।
বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে গত ১৩ জানুয়ারি রাতে আন্দোলনে নামেন ওই হলের শিক্ষার্থীরা। রোববার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে।
রোববার বিকালে ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েনের প্রতিবাদ করলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দেয় পুলিশ। ধাওয়া-পাল্টার এক পর্যায়ে পুলিশ লাঠিপেটা করে, কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তাসহ অন্তত অর্ধশত আহত হন।
এরপর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দিলেও তা উপেক্ষা করে উল্টো উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন তারা।
ওই ঘটনায় পুলিশ ‘গুলি বর্ষণ ও হত্যার উদ্দেশ্যে মারপিটের অভিযোগে’ অজ্ঞাতপরিচয় ২০০ থেকে ৩০০ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করে।