গত বুধবার থেকে শুরু হওয়া অনশনের চতুর্থ দিনে শনিবার সকালে একজন অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে গেলেও দুপুরে তিনি ফিরে অনশনে বসেছেন। এর আগে শুক্রবার বিকালে ও রাতে আরও দুজন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে এসে ফের অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন।
বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে গত ১৩ জানুয়ারি রাতে আন্দোলনে নামেন ওই হলের শিক্ষার্থীরা।
পরে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে বুধবার মোট ২৪ শিক্ষার্থী অনশনে বসেন। এর মধ্যে নয়জন ছাত্রী এবং ১৫ জন ছাত্র। একজন অনশনকারীর বাবা গুরুতর অসুস্থ হলে তিনি প্রথম দিনই গ্রামের বাড়ি চলে যান। ২৩ শিক্ষার্থী এখন হাসপাতাল ও ক্যাম্পাসে অনশন চালিয়ে যাচ্ছে।
গতকাল বিকালে ওসমানী হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে এসে অনশন অব্যাহত রেখেছেন কাজল দাস; তারপরই রাতে একই হাসপাতাল থেকে আসেন পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের আব্দুল্লাহ আর রাফি।
শনিবার সকালে অক্সিজেন লেভেল নিচে নেমে যাওয়ায় মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শাহরিয়ার আবেদীনকে। তিনি দুপুরেই ফের ক্যাম্পাসের অনশনে যোগ দিয়েছেন।
ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছেন শাহরিয়ার জামান রাহি।
তিনি দুপুরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখানে অনশনরত জান্নাতুল নাঈম নিশাতের অবস্থা একটু খারাপ হয়েছে। হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক শিশির চক্রবর্তী বলেছেন, নিশাতকে দ্রুতই কিছু খাওয়াতে হবে। আর নয়তো যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তার ইসিজি পরীক্ষা করা হচ্ছে। ওর প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। খিঁচুনির সমস্যা হচ্ছে।”
“আমরা অনশনে থাকব, যতক্ষণ না এই অযোগ্য ভিসি পদত্যাগ করছেন। আমাদের মধ্যে অনেকের গ্লুকোজ লেবেল, অক্সিজেনের স্যাচুরেশন লেবেল, ব্লাড প্রেসার, পালস রেট নিচে নেমে গেছে। কিছুক্ষণ আগে একজনকে (শাহরিয়ার আবেদীন) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তার অক্সিজেনের সমস্যা, শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। তারপরও সে হাসপাতালে যেতে চাচ্ছিল না, তাকে জোর করে নেওয়া হইছে। আসলে, আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত, এক দফা দাবিতে অনড় আছি, অনশনে আছি”, যোগ করেন কাজল দাস।
হাসপাতাল থেকে ফেরা আরেকজন আব্দুল্লাহ আর রাফি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা জেনেবুঝে অনশনে আছি। আমরা জানি, বেশ কষ্ট হবে, অনেক অসুস্থ হব। আমরা আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত থাকব। সময় যত যাচ্ছে, আমাদের ভাইবোনেরা আরও অসুস্থ হচ্ছে। আবার অনেকেই অনশনে বসতে চায়।”
বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে গত ১৩ জানুয়ারি রাতে আন্দোলনে নামেন ওই হলের শিক্ষার্থীরা। রোববার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে।
রোববার বিকালে ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েনের প্রতিবাদ করলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দেয় পুলিশ। ধাওয়া-পাল্টার এক পর্যায়ে পুলিশ লাঠিপেটা করে, কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তাসহ অন্তত অর্ধশত আহত হন।
এরপর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দিলেও তা উপেক্ষা করে উল্টো উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন তারা।
ওই ঘটনায় পুলিশ ‘গুলি বর্ষণ ও হত্যার উদ্দেশ্যে মারপিটের অভিযোগে’ অজ্ঞাতপরিচয় ২০০ থেকে ৩০০ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করে।