উত্তরে ৫৩ হাজার হেক্টরে বোরো চাষ তিস্তা ব্যারাজে

তিস্তা ব্যারাজের সেচ দিয়ে রংপুর বিভাগের তিন জেলার ১২ উপজেলায় এবার ৫৩ হাজার হেক্টর জামিতে বোরো আবাদ হচ্ছে।

আফতাবুজ্জামান হিরু রংপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Jan 2022, 05:29 PM
Updated : 21 Jan 2022, 06:01 PM

এর মধ্যে রয়েছে রংপুর জেলায় ১৫ হাজার হেক্টর, দিনাজপুরে সাত হাজার হেক্টর, নীলফামারীতে ৩১ হাজার হেক্টর।

চাষিরা এখন বোরো চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন। জমিতে সেচ প্রদান, হালচাষ, সার প্রয়োগ ও বীজ উত্তোলনসহ জমিতে চারা রোপণ চলছে।

রংপুর পৌর সার্কেল-২ এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মাহবুবর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, রংপুর সদর, বদরগঞ্জ, তারাগঞ্জ, গঙ্গাচড়া, নীলফামারী সদর, ডিমলা, জলঢাকা, কিশোরগঞ্জ, সৈয়দপুর, দিনাজুরের পার্বতীপুর, খানসামা ও চিরির বন্দরে বোরো আবাদ হচ্ছে।

“দেশের বৃহত্তম প্রকল্প ‘তিস্তা ব্যারাজ’-এর আওতায় ৫৩ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রংপুরে ১৫ হাজার হেক্টর ও দিনাজপুরে সাত হাজার হেক্টর এবং নীলফামারীতে ৩১ হাজার হেক্টর রয়েছে।”

সরেজমিনে দেখা গেছে, বোরো ধান চাষের জমি তৈরি করছেন কৃষকরা। কেউ আবার চারা রোপণ করছেন। অনেকে জমিতে হাল চাষ দিচ্ছেন; জমির আইলের আগাছা পরিষ্কারসহ জৈব সার প্রয়োগ করছেন। আবার অনেকেই জমিতে পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালকের কার্যালয় জানিয়েছে, এবার রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ তিন হাজার ৫৫০ হেক্টর। গত বছর লক্ষ্যমাত্রা ছিল চার লাখ ৯৬ হাজার ৫১৫ হেক্টর। এবার সাত হাজার ৩৫ হেক্টর বেশি জমিতে বোরো আবাদ করছেন কৃষকরা।

এর মধ্যে রংপুর জেলায় এক লাখ ৩০ হাজার ৯৫০ হেক্টর, কুড়িগ্রামে এক লাখ ১৫ হাজার ৫৫৫ হেক্টর, নীলফামারীতে ৮১ হাজার ৫৫০ হেক্টর, গাইবান্ধায় এক লাখ ২৭ হাজার ৮৪৫ হেক্টর ও লালমনিরহাটে ৪৭ হাজার ৬৫০ হেক্টর। এতে চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২২ লাখ সাত হাজার ১৩২ মেট্রিক টন।

তিস্তা ব্যারেজ সেচ প্রকল্পের সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রাফিউল বারী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ২০১৪ সালে ব্যারাজের সেচ প্রকল্পের আওতায় ৮৩ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্ত পানি স্বল্পতার কারণে ওই তিন জেলার ১২ উপজেলায় সেচ দেওয়া হয় মাত্র ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে।

একইভাবে ২০১৫-১৬ সালে তিস্তার সেচ কমান্ড এলাকায় পানি সরবরাহ করা হয় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে। ২০১৭ সালে আরও কমে মাত্র আট হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়া হয়।

২০১৮ সালে ওই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে বোরো মৌসুমে সেচ দেওয়া হয় ৩৫ হাজার হেক্টর এবং ২০১৯-২০ সালে ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৫৩ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ প্রদান করছে।

রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার হারিয়াল কুটি এলাকার কৃষক দিবেন্দ্রনাথ বর্মন (৬০) বলেন, “বাবুরে হামরা তো সেই বেশি জমির মালিক না। হামার অল্প একটু আবাদি জমি। আমি মানুষের একর জমি বর্গা নিয়ে ক্যানেলের পানি দিয়ে আবাদ করছি। ক্যানেলের পানি দিয়ে আবাদ করলে হামারগুল্যার সুবিধা। আর অন্যটে থেকে পানি নিয়ে অনেক টাকা লাগে।”

রংপুরের গংগাচড়া উপজেলার খলেয়া ইউনিয়ানের গনজিপুর এলাকার ক্যানেল তীরবর্তী বাসিন্দা কৃষক আশরাপুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এবার দেড় একর জমিতে বোরো আবাদ করছি। ক্যানেলের পানি দিয়ে প্রতি বছর বোরোর আবাদ করি। শ্যালো মেশিন ও বিদ্যুৎচালিত সেচ পাম্পে খরচ অনেক বেশি। আর ক্যানেলের পানি একর প্রতি আড়াই থেকে ১০০ টাকা দিলে ধান ঘরে তোলা যায়। এতে একর প্রতি বেঁচে যায় ৪ হাজার থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকা।”

রংপুর সদরের মমিনপুর এলাকার ক্যানেল তীরবর্তী কৃষক পল্লি চিকৎসক বিজয়কান্ত পাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বাজারে ধানের দাম এখন অনেক। গত বছর বোরো ও আমন ধানের দাম পাওয়ায় এবারও কৃষক আবাদে ঝুঁকে পড়েছে। তবে শ্যালোর সেচের খরচ বেশি হওয়ায় কৃষক হিমশিম খাচ্ছে।

“কৃষিতে উৎপাদন খরচ দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষকরা বেকায়দায় পড়লেও তিস্তা ক্যানেলের পানি দিয়ে আবাদ করলে কিছুটা কৃষকরা স্বস্তি পায়।”

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বার্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদ-দৌলা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এবার তিন জেলার ১২ উপজেলায় ৫৩ হাজার হেক্টর জমিত সেচ প্রদান করা হচ্ছে। তিস্তার উজানের পানি প্রবাহ ২০ হাজার কিউসেক থাকলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে সেচ দেওয়া যাবে। সেচ প্রকল্প স্বাভাবিক রাখতে কমপক্ষে ১৪ হাজার কিউসেক পানি দরকার।