বাহারি ফুলে সেজেছে শালবন বিহার

দর্শক আকৃষ্ট করতে কুমিল্লার শালবন বিহারে দৃষ্টিনন্দন ফুলের সমাবেশ করার উদ্যোগ নিয়েছে ময়নামতি জাদুঘর কর্তৃপক্ষ।

কুমিল্লা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Jan 2022, 02:04 PM
Updated : 21 Jan 2022, 05:21 PM

এ জন্য দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে তারা নানা জাতের ফুলের চারা এনে লাগিয়েছেন।

ঐতিহাসিক শালবন বিহারের এই প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন দেখতে আসা লোকজন বিভিন্ন ধরনের ফুলের সমারোহ দেখে মুগ্ধতা প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ ফুলের সমারোহ বাড়াতে পরামর্শও দিয়েছেন।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, অন্তত ২৫ প্রকার ফুলে সাজানো হয়েছে শালবন বিহারকে। এসব ফুলের মধ্যে রয়েছে পাঁচ প্রকার গোলাপ, তিন প্রকার গাঁদা, সেলভিয়া, কসমস, জিনিয়া, ডালিয়া, জারবেরা, সূর্যমুখী, নয়নতারা, পিটুনিয়া, বোতাম ফুলসহ রংবেরংয়ের বাহারি ফুল।

পুরো শালবন এলাকাই সেজে রয়েছে ফুলে ফুলে। ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন দেখার পাশাপাশি ঘুরে বেড়াচ্ছেন ফুলের মেলায়। অনেকে ফুলের সঙ্গে ছবি তুলছেন। আবার অনেকে ফুল গাছের পাশে বসে সময় কাটাচ্ছেন।

ময়নামতি জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান হাসিবুল হাসান সুমি জানান, কুমিল্লার লালমাই ও ময়নামতি পাহাড় এলাকায় অন্তত ২৩টি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া গেছে। এর মধ্যে উন্মোচিত হওয়া ১২টির মধ্যে শালবন বিহার ও ময়নামতি জাদুঘর থেকে সরকার রাজস্ব আয় করছে। অন্যগুলো এখনও বিনা খরচে দেখতে পারছেন পর্যটকরা।

২০২০ সালে দেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হলে কয়েক দফায় বন্ধ থাকে শালবন বিহার। এরপর গত বছরের অগাস্টে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এই প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনটি চালু করা হয়; তবে করোনাভাইরাসের কারণে আগের তুলনায় প্রায় অর্ধেক কমে যায় দর্শনার্থীর সংখ্যা।

এ অবস্থায় পর্যটকদের ফেরাতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় বলে হাসান জানান।

“এর মধ্যে দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করার পাশাপশি সৌন্দর্য বাড়াতে পুরো বিহার এলাকাকে ফুলের মেলায় সাজানো হয়েছে। সামনে বিহারের সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য আরও ব্যাপক হারে ফুলের বাগান করার পরিকল্পনা রয়েছে।”

করোনাভাইরাসের প্রকোপের কারণে দীর্ঘদিন বাসা থেকে কোথাও ঘুরতে যাওয়া হয়নি কলেজছাত্রী জান্নাতুল ফেরদৌসের। সুযোগ পেয়েই পরিবারের সঙ্গে শালবন বিহারে ঘুরতে এসেছেন তিনি।

জান্নাতুল ফেরদৌস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে এভাবে অনেকদিন কোথাও যাওয়া হয়নি। ভাবলাম কাছাকাছি কোথাও থেকে ঘুরে আসি। এজন্য সবাই এখানে এসেছি। এসে ফুলের এমন দৃশ্য দেখে সত্যি আমরা মুগ্ধ হয়েছি। পরিবেশটা মনে হয় বদলে গেছে। ঘুরতে এসে অসম্ভব ভালো লাগছে।”

শালবন বিহারে আরও সুন্দরভাবে সাজানোর দাবি জানিয়ে আরেক দর্শনার্থী মহিউদ্দিন বলেন, শালবন বিহার এখন শুধুই ইট-পাথরের পুরোনো কীর্তি নয়। ফুলের বাগান এর সৌন্দর্য অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। ফুলের মেলার সঙ্গে ঐতিহাসিক এই প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনটি মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে।

মোহাম্মদ শরীফ হোসেন নামের একজন বলেন, ফুল ভালোবাসেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কষ্টকর। প্রতিটি মানুষেরই কোনো না কোনো ফুলের প্রতি দুর্বলতা রয়েছে। বর্তমানে ফুলের মেলা দেখার জন্যও অনেক দর্শনার্থীরা এখানে আসছেন।

“এখানে এলে মনে হয় প্রকৃতির খুব কাছাকাছি রয়েছি। এই পরিবেশকে আরও সুন্দর করতে হলে নিয়মিত ফুলগাছগুলোর পরিচর্যা করতে হবে। নতুন নতুন আরও ফুল গাছ লাগাতে হবে। এখনও শালবন বিহার এলাকায় ফুলের বাগান করার মতো অনেক জায়গা রয়েছে। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগকে এর জন্য আরও আন্তরিক হতে হবে।”

ময়নামতি জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান হাসিবুল হাসান সুমি বলেন, ফুলের বাগান করার জন্য রংপুর, বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে তারা এসব ফুলের চারা সংগ্রহ করেছেন। প্রতিটি গাছেই প্রচুর ফুল এসেছে।

“এ দৃশ্য দেখে দর্শনার্থীদের মতো আমাদেরও প্রাণ জুড়িয়ে যায়। আমরাদের মূল উদ্দেশ্য হলো পর্যটকদের বিনোদন দেওয়া, তাদের আকৃষ্ট করা। করোনার কারণে আগে দর্শনার্থীদের সংখ্যা কম থাকলেও এখন অনেক বেড়েছে। বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে পর্যটকদের ঢল নামছে।” 

ফুলের বাগান করার জন্য বরাদ্দ একেবারেই কম জানিয়ে তিনি বলেন, “এছাড়া লোকবলেরও অনেক সংকট রয়েছে। এরপরও উদ্যোগ নিয়ে চেষ্টা করছি একটি মনোমুগ্ধকর পরিবেশ তৈরি করতে। আমরা নিয়মিত গাছগুলোর পরিচর্ষা করছি। সামনে পরিকল্পনা আছে পুরো শালবন বিহারকে আরও অনেক ফুলের বাগানে সাজানোর। আশা করছি এতে দর্শনার্থীরাও ঘুরতে এসে আনন্দ পাবেন।”