হাই কোর্টের আদেশে প্রার্থী হতে পারলেন মনোহরগঞ্জের ৪ জন

কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের চার জন চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হতে পেরেছেন উচ্চ আদালতের আদেশে।

কুমিল্লা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Jan 2022, 07:19 PM
Updated : 20 Jan 2022, 07:19 PM

বৃহস্পতিবার বিকালে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে তারা মনোনয়ন জমা দেন বলে জানান জেলা জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মঞ্জুরুল আলম।

এর আগে উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন পরিষদের সবকটিতে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান পদে জয়ী ঘোষণা করা হয়।

এদের মধ্যে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষদিন গত ৩ জানুয়ারি সাত প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত হয়। ওই সাত ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত একক প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দেন।

আর বাকি চারটি ইউনিয়নে একাধিক প্রার্থী থাকলেও গত ১৩ জানুয়ারি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষদিন আওয়ামী লীগের ছাড়া সকল প্রার্থীরাই তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন।

১৪ জানুয়ারি উপজেলার ১১টি ইউনিয়নেই আওয়ামী লীগ মনোনীতদের বিজয়ী ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।

আদালতের আদেশে বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ঝলম উত্তর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন, সরসপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম সরওয়ার মজুমদার, একই ইউনিয়নের জসিম উদ্দিন ও লক্ষ্মণপুর ইউনিয়নের আবদুল বাতেন। এ চারজনই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন।

ওই চার প্রার্থীর ভাষ্য, তফসিল ঘোষণার পর থেকে তারাসহ বেশ কয়েকজন চেয়ারম্যান ও সাধারণ সদস্য প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে না পেরে জেলা প্রশাসক, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, জেলা পুলিশ সুপার, নির্বাচন কমিশন সচিব ও প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে স্মারকলিপি দেন। কিন্তু তারা প্রতিকার পাননি।

এছাড়া গত ৩১ ডিসেম্বর রাজধানীর আগারগাঁও এলাকায় নির্বাচন ভবনের সামনে জেলা কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দেওয়ার জন্য দাবি জানিয়ে মানববন্ধন করেন তারাসহ বেশ কয়েকজন প্রার্থী।

এতেও কাজ না হওয়ায় সর্বশেষ তারা চারজন চেয়ারম্যান প্রার্থী গত ২ জানুয়ারি উচ্চ আদালতে রিট করেন।

চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন বলেন, গত ৩ জানুয়ারি দুপুরে উচ্চ আদালত তাদের রিটের পরিপ্রেক্ষিতে আদেশ দিয়েছেন। সেখানে আদালত বলেছে- উপজেলার ঝলম উত্তর, সরসপুর ও লক্ষ্মণপুর এই তিনটি ইউনিয়নের প্রার্থীরা জেলা কার্যালয়ে মনোনয়ন সংগ্রহ এবং জমা দিতে পারবেন।

“উচ্চ আদালতের এই নির্দেশনা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে আদালত থেকে মোবাইল ফোনে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।”

তিনি জানান, ওইদিন বিকাল পর্যন্ত জেলা জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কর্মকর্তা এই তিনটি ইউনিয়নের চারজন চেয়াম্যান প্রার্থীকে মনোনয়নপত্র দিয়েছেন। কিন্তু সেদিন সেগুলো জমা নেননি তিনি।

ইকবাল আরও বলেন, “এরপর আমরা আবার হাই কোর্টে এ ঘটনার প্রতিকার চাই। পরে গত ১৩ জানুয়ারি আদালত ফের আরেক আদেশে আদেশ প্রাপ্তির ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে চার প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ করতে বলা হয়।

“বুধবার বিকাল ৩টায় উচ্চ আদালতের আদেশের কপি মনোহরগঞ্জের নির্বাচন কার্যালয়ে পৌঁছায়। এরপর বৃহস্পতিবার বিকালে আমাদের মনোনয়নপত্র জমা নেওয়া হয়। তবে আমরা এখনও প্রতীক পাইনি।”

এ প্রসঙ্গে জেলা জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মঞ্জুরুল আলম বলেন, “উচ্চ আদালতের নির্দেশে চারজন চেয়ারম্যান প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা নেওয়া হয়েছে। আমরা বিষয়টি নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছি। কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা যায়, গত ১৮ ডিসেম্বর ষষ্ঠ ধাপে মনোহরগঞ্জ উপজেলার ১১টি ইউপির নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। তফসিল অনুযায়ী গত ৩ জানুয়ারি মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল। ৬ জানুয়ারি মনোনয়নপত্র বাছাই হয়। ১৩ জানুয়ারি প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ছিল। আগামী ৩১ জানুয়ারি ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহণ হবে।  মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে ১১টি ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে ১৬ জন, সংরক্ষিত মহিলা সদস্যপদে ৪০ জন ও সাধারণ সদস্যপদে ১৩৮ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেন।

মনোহরগঞ্জে শুধু চেয়ারম্যান পদেই নয়, বিনা ভোটে বিজয়ী হওয়ার রেকর্ড গড়েছেন ইউপি সদস্য (মেম্বার) ও সংরক্ষিত নারী সদস্যরারও (মহিলা মেম্বার)। ৯৯টি সদস্য পদের বিপরীতে ৮৮টি পদে সদস্যরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। ৩৩টি সংরক্ষিত নারী সদস্য পদের বিপরীতে  বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ৩০ জন। উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের মধ্যে কেবল মাত্র বিপুলাসার ইউনিয়নের ৯টি সাধারণ ওয়ার্ড এবং তিনটি সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডে ভোট গ্রহণ হচ্ছে। এছাড়া উপজেলার মৈশাতুয়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে সাধারণ সদস্য পদে এবং ঝলম উত্তর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সদস্য পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।