শাবি উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে অনড় শিক্ষার্থীরা

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ৬ষ্ঠ দিনে গড়িয়েছে।

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Jan 2022, 01:49 PM
Updated : 18 Jan 2022, 02:28 PM

বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রভোস্ট কমিটির পদত্যাগের দাবিতে শুরু করা আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিও যুক্ত করে মঙ্গলবার ষষ্ঠ দিনের মত অব্যাহত রখেছেন।

মঙ্গলবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির একদল শিক্ষক উপাচার্য ভবনের সামনে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে গিলে তারা কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান।

সরেজমিনে দেখা যায়, মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরে শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়। সাড়ে ১০টার দিকে পুরো ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়।

বিক্ষোভ মিছিল শেষে সকাল ১১টায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা একসঙ্গে বসে মঙ্গলবারের কর্মসূচির ঘোষণা দেন।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপাচার্যের অপসারণের আবেদন জানিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে ডাকযোগে চিঠি পাঠান তারা। 

এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল চত্বরের অবস্থানকারী আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সামনে শাহেরিয়ার আবেদীন নামের এক শিক্ষার্থী রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো চিঠি সবার উদ্দেশ্যে পাঠ করে শোনান।

বিকাল সোয়া ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক তুলসী কুমার দাসের নেতৃত্বে একদল শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে যান। কিন্তু আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তা প্রত্যাখ্যান করেন। 

এই বিষয়ে অধ্যাপক তুলসী কুমার দাস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করতে গিয়েছিলাম। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা যায়। কিন্তু তারা কেন কথা বলল না তা বলতে পারছি না।”

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, শিক্ষক সমিতি বিবৃতি দিয়ে তাদের দায়িত্ব সেরেছেন। আন্দোলনে একাত্ম হননি। আগে আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করতে হবে।

রোববার সন্ধ্যায় পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ ও পুলিশের হামলার পর থেকে উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। এরই মধ্যে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবকটি ফটক বাঁশ দিয়ে অবরুদ্ধ করে দিয়েছেন। সোমবার প্রশাসনিক ও একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন।

সোমবার রাতে ৩০০ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ।

আন্দোলনে আওয়ামী লীগের একাত্মতা

মঙ্গলবার বেলা ১টার দিকে দলের আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলের সঙ্গে দলের সিলেটের নেতারা ক্যাম্পাসে আসেন। শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ ও দাবির বিষয় সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অবহিত হন। সবকিছু শোনার পর তিনি শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলন যৌক্তিক বলে মত প্রকাশ করেন।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কোনো কঠোর ব্যবস্থা নেবে না এবং শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা হবে না বলেও তিনি আশ্বাস দেন। 

এ সময় সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সিলেট সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিধান কুমার সাহা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

উপস্থিত নেতারা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং ধৈর্য ধারণের আহবান জানান। পরে তারা হল পরিদর্শন শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেন।

বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রভোস্ট কমিটির পদত্যাগের দাবিতে শুরু করা আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিও যুক্ত করে মঙ্গলবার ষষ্ঠ দিনের মত অব্যাহত রখেছেন।

আন্দোলনের চতুর্থ দিন রোববার তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন। বিকাল ৫টার দিকে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে।

ওই সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও পুলিশের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ লাঠিপেটা করে, কাঁদুনে গ্যাস, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় শিক্ষার্থী, কর্মকর্তাসহ অর্ধশত আহত হন।

বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রভোস্ট কমিটির পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলাকে নিজেদের ‘লজ্জা’ বলে মন্তব্য করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।

সোমবার দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, “রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে তাতে শাবি শিক্ষক সমিতি স্তম্ভিত, মর্মাহত এবং লজ্জিত। নারকীয় এই ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্টদেরকে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছে শাবি শিক্ষক সমিতি।”

আরও পড়ুন