সাঈদা গাফফার হত্যায় গাজীপুরে রাজমিস্ত্রি রিমান্ডে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক সাঈদা গাফফার হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার রাজমিস্ত্রি আনোয়ারুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের হেফাজতে পেয়েছে পুলিশ।

গাজীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Jan 2022, 02:18 PM
Updated : 15 Jan 2022, 02:18 PM

গাজীপুরের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত ২-এর বিচারক মেহেদি পাভেল সুইট শনিবার বিকালে এই আদেশ দেন বলে জানান সিটি পুলিশের উপ-কমিশনার মো. জাকির হাসান।

শুক্রবার সকালে গাজীপুরের কাশিমপুর থানার দক্ষিণ পানিশাইল এলাকা থেকে সাঈদার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক সাঈদা ওই এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন। বাসার কাছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি আবাসিক প্রকল্পে বাড়ি নির্মাণ করছিলেন তিনি। ওই বাড়িতে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন আনোয়ারুল।

পুলিশ কর্মকর্তা জাকির হাসান বলেন, আনোয়ারুলকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডে চাওয়া হয়। শুনানি শেষে বিচারক তিন দিন মঞ্জুর করেছেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যাবে হত্যাকাণ্ডে আরও কেউ জড়িত কি-না।

এর আগেই আনোয়ারুল টাকার লোভে সাঈদাকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।

৭১ বছর বয়সী সাঈদা গাফফার দুই দিন ধরে নিখোঁজ জানিয়ে তার মেয়ে থানায় জিডি করার পর পুলিশ আনোয়ারুলকে গ্রেপ্তার করে।

আনোয়ারুল গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর থানার বুজুর্গ জামালপুর গ্রামের আনসার আলীর ছেলে। বৃহস্পতিবার রাতে সেখান থেকেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার সকালে প্রকল্প এলাকার ঝোপের ভেতর থেকে পুলিশ সাঈদা গফফারের লাশ উদ্ধার করে।

সাঈদা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসরে যান ২০১৬ সালে। তার স্বামী প্রয়াত কিবরিয়াউল খালেকও একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন।

তাদের চার সন্তানের মধ্যে দুই মেয়ে থাকেন অস্ট্রেলিয়ায়। এক মেয়ে ঢাকার উত্তরায় এবং ছেলে মতিঝিলে থাকেন। পানিশাইল এলাকার ওই বাসায় একাই থাকতেন সাঈদা। তিনিই নির্মাণাধীন ফ্ল্যাটের দেখাশোনা করতেন। 

সহকারী পুলিশ কশিনার আবু সায়েম নয়ন জানান, গত ১১ জানুয়ারি সন্ধ্যার পর থেকে পরিবারের লোকজন ফোন করে সাঈদার সাড়া পাচ্ছিল না। পরদিন তার মেয়ে সাহিদা আফরিন এ ব্যাপারে কাশিমপুর থানায় একটি জিডি করেন।

ওই জিডির তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে, সাঈদার নির্মাণাধীন ফ্ল্যাটে কাজ শেষে ১১ জানুয়ারি আনোয়ারুলসহ শ্রমিকরা সবাই চলে যায়। পরদিন সকালে অন্যরা কাজে যোগ দিলেও আনোয়ারুল অনুপস্থিত ছিলেন। এরপর পুলিশ তার খোঁজ শুরু করে।

পুলিশ কর্মকর্তা আবু সায়েম নয়ন বলেন, “মোবাইল ফোন ট্র্যাক করে বৃহস্পতিবার রাতে গাইবান্ধা থেকে আটক করা হয় আনোয়ারুলকে। জিজ্ঞাসাবাদে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বাসা থেকে দুইশ গজ দূরে ঝোঁপের ভেতর সাঈদার লাশ পাওয়া যায়।”

কাশিমপুর থানার এসআই দীপঙ্কর রায় বলেন, ১১ জানুয়ারি বিকালে ফ্ল্যাটের কাজ শেষে নির্মাণ সামগ্রী ও মালপত্র কেনার টাকা নিয়ে প্রকল্প এলাকা থেকে ফিরছিলেন সাঈদা গাফ্ফার।

“প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আনোয়ারুল স্বীকার করেছে, ওই সময় সে প্রকল্প এলাকার ভেতরে নির্জন জায়গায় অধ্যাপক সাঈদার সঙ্গে থাকা টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। সাইদা চিৎকার করলে গলার ওড়না চেপে ধরে শ্বাসরোধে তাকে হত্যা করে সে। পরে তার সঙ্গে থাকা টাকা ছিনিয়ে নিয়ে রাতেই গাইবান্ধায় পালিয়ে যায়”, যোগ করেন আবু সায়েম নয়ন।

গাজীপুর মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক সানোয়ার জাহান বলেন, গাইবান্ধায় ফিরে আনোয়ারুল পলাশবাড়ি উপজেলার শ্বশুরবাড়িতে রাতযাপন করেন। পরদিন তিনি তার গ্রামের বাড়ি সাদুল্ল্যাহ্পুরে চলে যান।

“ততক্ষণে পুলিশ তার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে সাদুল্ল্যাহপুরের জাউলিয়া বাজারে অভিযান চালায়। কিন্তু পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে আনোয়ারুল অটোরিকশায় করে পালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু পুলিশের চোখ ফাঁকি দিতে পারেননি।”

গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শুক্রবার বিকেলে সাঈদা গাফফারের ময়নাতদন্ত হয়। রাতে ঢাকায় জানাজা শেষে তাকে মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হয়।