ছাত্রীদের আন্দোলনের মধ্যে শাবির সিরাজুন্নেসা হলে ভারপ্রাপ্ত প্রভোস্ট

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হল প্রভোস্টের অপসারণ দাবিতে ছাত্রীদের আন্দোলনের মধ্যে হলটিতে ভারপ্রাপ্ত প্রভোস্ট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Jan 2022, 03:27 PM
Updated : 14 Jan 2022, 03:27 PM

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলছেন, করোনাভাইরাস আক্রান্ত হওয়ায় এই হলের প্রভোস্ট জাফরিন আহমেদ লিজাকে ছুটিতে পাঠিয়ে একজন ভারপ্রাপ্ত প্রভোস্ট দেওয়া হয়েছে। 

আন্দোলনকারী ছাত্রীদের ভাষ্য, দাবি না মানায় আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। শনিবার [১৫ জানুয়ারি] সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে দাবি মানা না হলে পুরো হলের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করবেন। 

বৃহস্পতিবার রাতে হলের পানি, সিট, ইন্টারনেট সংযোগ, খাবারসহ বেশ কিছু সমস্যা নিয়ে আলোচনার পর ছাত্রীরা হল প্রভোস্ট জাফরিন আহমেদকে ফোন করে সমস্যার কথা জানান এবং অল্প সময়ের জন্য হলে আসার অনুরোধ করেন।

এ সময় প্রভোস্ট হলে যেতে অস্বীকৃতি জানান এবং তাদের সঙ্গে ‘দুর্ব্যবহার’ করেন বলে ছাত্রীদের অভিযোগ।

এরপর প্রভোস্ট জাফরিন আহমেদ লিজার বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে তারা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন, যা রাত আড়াইটা পর্যন্ত চলে।

এরমধ্যে রাত ২টার দিকে উপাচার্য বাসভবন থেকে বেরিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে তাদের সমস্যার কথা শোনেন।

সে সময় উপচার্য সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিলে রাত আড়াইটার দিকে ছাত্রীরা হলে ফিরে যান।

শুক্রবার বেলা ১১টায় উপাচার্যের কার্যালয়ে তিন দফা দাবি লিখিতভাবে জমা দেন ছাত্রীরা।

দাবিগুলো হল- প্রভোস্ট কমিটিকে পদত্যাগ করতে হবে, হলের সব ধরনের অব্যবস্থাপনা দূর করে সুষ্ঠ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে এবং অবিলম্বে ছাত্রীবান্ধব ও দায়িত্বশীল প্রভোস্ট নিয়োগ দিতে হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ছাত্রী জানান, তাদের লিখিত দাবির প্রেক্ষিতে শুক্রবার বেলা ১২টায় ছাত্রীদের একটি প্রতিনিধিদলকে ডেকে পাঠান উপাচার্য।

কিন্তু প্রতিনিধি দলের সঙ্গে এক ঘণ্টা আলাপ করেও সুষ্ঠু সমাধান দিতে পারেননি উপাচার্য। পরে শতাধিক আবাসিক ছাত্রী উপাচার্য কার্যালয় ঘেরাও করে ফের বিক্ষোভ শুরু করেন।

বেলা ১টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসিক ভবন -১ এর উপাচার্য কার্যালয় ঘেরাও করে ওই হলের শতাধিক ছাত্রী বিক্ষোভ করেন।

শুক্রবার সন্ধ্যায় আন্দোলনকারী ছাত্রীরা জানান, তাদের আন্দোলন চলমান। দাবি মেনে নেওয়ার জন্য শনিবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এর ভিতর দাবি মেনে না নিলে হলের ফটকে তালা দিয়ে পুরো হলের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হবে।

এদিকে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রভোস্ট জাফরিন আহমেদ লিজা কোভিডে আক্রান্ত হওয়ায় ছুটিতে রয়েছেন। তিনি ছুটিতে থাকায় ভারপ্রাপ্ত প্রভোস্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন হলটির সহকারী প্রভোস্ট জিইবি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জোবেদা কনক খান।”

ভারপ্রাপ্ত প্রভোস্ট নিয়োগ দাবি পূরণ কিনা প্রশ্ন করা হলে ছাত্রীরা বলেন, তাদের দাবি পুরো প্রভোস্ট কমিটিই বাতিল করা। একজনকে ছুটিতে পাঠানো নয়। তাই এটা তাদের দাবি মানা নয়। আন্দোলন চলবে।

আন্দোলনের সূত্রপাত

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সাংবাদিকদের জানান, বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের পানি, সিট, ইন্টারনেট সংযোগ, খাবারসহ বেশ কিছু সমস্যা নিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে হলের রিডিং রুমে ছাত্রীরা আলোচনা করেছিলেন। আলোচনা শেষে ছাত্রীরা হল প্রভোস্ট জাফরিন আহমেদকে ফোন করে এসব সমস্যার কথা জানান এবং অল্প সময়ের জন্য হলে আসার অনুরোধ করেন।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, অনেক অনুরোধের পরও প্রভোস্ট জাফরিন আহমেদ তাতে রাজি হননি উল্টো তিনি শিক্ষার্থীদের বলেন, “কেউ তো মরেনি। বের হলে বের হয়ে যাও, কোথায় যাবা? আমার এতো ঠেকা পড়েনি।”

শিক্ষার্থীরা বিষয়টি জরুরি উল্লেখ করলে তিনি বলেন, "কিসের জরুরি? কেউ তো আর মারা যায়নি।"

এ ঘটনার পর পরই ছাত্রীরা বিক্ষোভ শুরু করেন।