কোভিড: খুলনায় দৈনিক সংক্রমণের হার ৮ শতাংশ ছাড়িয়েছে

নতুন করে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকার মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় খুলনা বিভাগে দৈনিক শনাক্তের হার আট শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে।

খুলনা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Jan 2022, 09:25 AM
Updated : 12 Jan 2022, 09:25 AM

বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তর জানিয়েছে, সোমবার সকাল ৮টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ৬৩৪ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৫১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। দৈনিক শনাক্তের হার আট দশমিক শূন্য চার শতাংশ।

চলতি মাসের শুরু থেকেই খুলনা বিভাগে করোনাভাইরাসে দৈনিক শনাক্তের হার বাড়ছে। গত ২৮ ডিসেম্বর দৈনিক শনাক্তের হার ছিল যেখানে ছিল এক দশমিক ৬৬ শতাংশ; সেখানে ৯ জানুয়ারি দৈনিক শনাক্তের হার দাঁড়ায় পাঁচ দশমিক ৪৫ শতাংশ। এরপর ১০ জানুয়ারি দৈনিক শনাক্তের হার বেড়ে হয় ছয় দশমিক ২৩ শতাংশ।

এমন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতেই মঙ্গলবার থেকে রাত ৮টার পর নগরের কোনো বিপণিবিতান ও দোকান খোলা রাখা যাবে না বলে জেলা ও মহানগর করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কমিটির এক সভায় সিদ্ধান্ত হয়। 

ঢিলেঢালাভাবে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন শুরু হলেও তা যেন স্বতস্ফূর্তভাবে সবাই বাস্তবায়ন করে তার জন্য তদারকির উপর জোর দিচ্ছে জেলা ও মহানগর করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কমিটি। এ ছাড়া জরুরি সভা করেছে বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাবে সংক্রমণ আবার বাড়ছে বলে জানিয়েছেন খুলনা জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান তালুকদার।

তিনি বলেন, “মানুষের স্বাস্থ্যসচেতনতা কমে গেছে। সামাজিক দূরত্ব কেউ মানছেন না। মাস্কের ব্যবহার কমে গেছে। ফলে সংক্রমণ বাড়ছে।”

এমন পরিস্থিতিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় কাঁচামাল পরিবহন ও কাঁচামালের আড়ত বাদে রাত ৮টার পর থেকে দোকান ও বিপণিবিতান বন্ধের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

প্রশাসনের এই নির্দেশনা ব্যবসায়ীদের মেনে চলার কথা জানিয়েছেন খালিশপুর হাউজিং বাজার দোকান-মালিক সমিতির সভাপতি খোদা বখশ কোরায়শি কাল্লু।

তিনি বলেন, “করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকার যে সিদ্ধান্ত নেবে, আমরা সেটা মেনে নেব। মঙ্গলবার থেকে নির্দেশনা পাওয়ার পরই তা মেনে চলার চেষ্টা করছেন ব্যবসায়ীরা।”

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় পরিচালক মো. মুনজুরুল মুরশিদ বলেন, ২৪ ঘণ্টার হিসেবে মঙ্গলবার খুলনা বিভাগে করোনাভাইরাস শনাক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা জেলায় ছয়, যশোরে ১১, ঝিনাইদহে চার, খুলনায় ১২, কুষ্টিয়ায় ১৭ ও সাতক্ষীরার একজন রয়েছেন।

এই সময়ে মাগুরা জেলার কোনো নমুনা পরীক্ষা হয়নি। আর মেহেরপুর, নড়াইল ও বাগেরহাটে কারো করোনা শনাক্ত পাওয়া যায়নি। বিভাগের যশোর ও কুষ্টিয়া জেলায় দৈনিক শনাক্তের হার ১০ শতাংশের ওপরে।

এখন পর্যন্ত বিভাগে মোট করোনাভাইরাসে আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে এক লাখ ১৩ হাজার ৭৬৭ জনের। আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন তিন হাজার ১৯৪ জন।

বিভাগের মধ্যে প্রথম কোভিড রোগী শনাক্ত হয় ২০২০ সালের ১৯ মার্চ চুয়াডাঙ্গায়। গত বছরের মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিনই করোনা শনাক্তের হার পাঁচ শতাংশের ওপরে ছিল। গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর শনাক্তের হার পাঁচ শতাংশের নিচে নামে। এরপর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত শনাক্তের হার আর কখনও পাঁচের উপরে ওঠেনি।

মুনজুরুল মুরশিদ বলেন, সামাজিক দূরত্ব না মানায় এবং মাস্ক ব্যবহার না করায় সংক্রমণ কিছুটা বেড়েছে। ওমিক্রনে সংক্রমণের হার বেশি এবং ছড়ায়ও দ্রুত।

“সংক্রমণ ঠেকাতে সবাইকে সচেতন হতে হবে। ঘর থেকে বের হলে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণসহ মাস্ক ব্যবহার করতে হবে,” যোগ করেন স্বাস্থ্য অধিপ্তরের এই কর্মকর্তা।

খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (রোগ নিয়ন্ত্রণ) সহকারী পরিচালক ডা. ফেরদৌসী আক্তার বলেন, সপ্তাহখানেক ধরে বিভাগে করোনা শনাক্তের মাত্রা কয়েকটি জেলায় বাড়তে শুরু করেছে।

এই বিভাগে ওমিক্রন পরীক্ষার কোনো ব্যবস্থা নেই জানিয়ে ‍তিনি বলেন, “কারও নমুনা পজিটিভ হলে আইইডিসিআরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”

ওমিক্রনের শঙ্কায় এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক-নার্সসহ সবাইকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে বলে জানান খুলনা সিভিল সার্জন নিয়াজ মোহাম্মদ।

তিনি বলেন, “অক্সিজেন সরবরাহ, ভেন্টিলেটর ব্যবস্থাসহ সব ঠিকঠাক রাখার বিষয়ে কথা হয়েছে।”

করোনার প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ের শুরুতে খুলনার সরকারি শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতাল, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও খুলনা জেনারেল হাসপাতালের কোভিড ইউনিট ছিল না।

পরবর্তী সময়ে খুলনার তিনটি হাসপাতালে করোনা ইউনিটসহ ৩২৫টি শয্যা করা হয় বলে জানান নিয়াজ মোহাম্মদ।

“সংক্রমণ কমে যাওয়ায় জেনারেল হাসপাতাল এবং আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে কোভিড ইউনিট বন্ধ করে দেওয়া হয়।”

এখন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২০০ শয্যার কোভিড ইউনিটের ১৩০ শয্যার কার্যক্রম চালু রয়েছে। চাপ বেড়ে গেলে অবশিষ্ট শয্যাগুলোও চালু করা হবে বলে জানান সিভিল সার্জন।