নোয়াখালী পৌরে ভোট: প্রার্থীর ‘প্রচারে’ বরিশাল জেলা প্রশাসনের কর্মচারী

নোয়াখালী পৌরসভা নির্বাচনে এক প্রার্থীর পক্ষে বরিশাল জেলা প্রশাসনের কয়েকজন কর্মচারীর প্রচারে নামার অভিযোগ উঠেছে। এই প্রার্থী বরিশাল জেলা প্রশাসকের ছোট ভাই। 

নোয়াখালী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Jan 2022, 02:05 PM
Updated : 11 Jan 2022, 03:55 PM

সোমবার রাতে কালেক্টরেট সহকারী সমিতির নোয়াখালী জেলা কার্যালয়ে তারা স্বতন্ত্র [আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী] প্রার্থী লুৎফুল হায়দার লেনিনের পক্ষে ভোট চেয়ে সভা করেন বলে কয়েকজন কর্মচারী জানান।

এই ঘটনা তদন্তে নোয়াখালী জেলা প্রশাসক তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছেন। কমিটিকে আগামী দুই দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। 

আগামী ১৬ জানুয়ারি নোয়াখালী পৌরসভায় ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

এই নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী [আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী] হিসেবে মোবাইল প্রতীক নিয়ে ভোট করছেন লুৎফুল হায়দার লেনিন। তিনি বরিশাল জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার লিপুর ছোট ভাই।

সোমবার রাতের ওই সভায় উপস্থিত কালেক্টরেট সহকারী সমিতির একাধিক সদস্য নাম প্রকাশ না করে বলেন, সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থেকে সংগঠনের নোয়াখালীর সদস্যদের ব্রিফিং করেন বরিশাল জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের এল এ শাখার উচ্চমান সহকারী ও বরিশাল কালেক্টরেট সহকারী সমিতির সভাপতি মাহফুজুর রহমান।

এ সময় তার সঙ্গে বরিশাল জেলা প্রশাসনের চতুর্থ শ্রেণির চার সদস্য উপস্থিত ছিলেন জানিয়ে তারা বলেন, মাহফুজুর রহমান নোয়াখালী পৌরসভার স্বতন্ত্র প্রার্থী লেনিনের পক্ষে ভোট করার জন্য নোয়াখালী জেলা প্রশাসনের কর্মচারীদের আহ্বান জানান এবং কীভাবে প্রচারণা করবে তার দিকনির্দেশনা দেন।  

স্বতন্ত্র মেয়র পদপ্রার্থী লুৎফুল হায়দার লেনিনের বাড়ির সামনে মাহফুজুর রহমান [জ্যাকেট পরা]

জেলা প্রশাসনের একাধিক কর্মচারী জানান, বরিশাল জেলা প্রশাসনের উচ্চমান সহকারীসহ চারজনের ওই প্রতিনিধি দল সোমবার দুপুর ২টায় নোয়াখালী আসে। তারা ওইদিন সন্ধ্যায় নোয়াখালী কালেক্টরেট সহকারী সমিতির বৈঠক করে জেলা সার্কিট হাউজে রাত যাপন করেন।

মঙ্গলবার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কর্মচারীদের বাসায় বাসায় গিয়ে ভোটের প্রচারণায় অংশ নেওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি বলে জানা গেছে। 

এ ব্যাপারে বরিশাল জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের এলএ শাখার উচ্চমান সহকারী মাহফুজুর রহমান বলেন, “মূলত ১৫ তারিখে আমাদের সমিতির একটা মিটিং আছে। সে বিষয়ে নোয়াখালীতে বসেছিলাম। এখানে যেহেতু নির্বাচন চলে, নির্বাচন হচ্ছে নোয়াখালীতে, আমাদের

কথায় কেউ ভোট দেবেনও না আর আমাদের কোনো আত্মীয় স্বজনও নেই; জাস্ট জানতে চাওয়া কী হয়েছে। তখন এক পর্যায়ে যেটা বলেছি – আপনারা একটু খেয়াল রাখতে পারেন। এখন কেউ কেউ হয়তো অন্যভাবে নিয়েছে।”  

এদিকে এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক খায়রুল আনম সেলিম বলেন, “আমরা শুনেছি এবং দেখছি। বরিশালের ডিসির এ ধরনের কর্মকাণ্ডের আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এটা তো তারা পারে না, নির্বাচন আইনেও এটা তারা পারে না, এটা নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘন। আশা করি আমাদের প্রশাসনের ওপর এটার প্রভাব পড়বে না।” 

তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. নাজিমুল হায়দার বলেন, “আমি ও সদর উপজেলার নির্বাহী কমকর্তার দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) হাফিজুল হক ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অমৃত দেবনাথসহ তিনজনকে নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।”   

নোয়াখালী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খান বলেন, “এ বিষয়টি আমি শুনেছি। এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে দিয়ে একটা তদন্ত কমিটি করেছি আজ। দুদিনের মধ্যে তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দেবে। যারা যারা জড়িত থাকে তাদের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

আগামী ১৬ জানুয়ারির এই নির্বাচনে বর্তমান মেয়র আওয়ামী লীগের মনোনীত সহিদ উল্যাহ্ খান সোহেল নৌকা প্রতীক নিয়ে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এছাড়া স্বতন্ত্র হিসেবে বিএনপির জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম কিরন, স্বতন্ত্র শহর বিএনপির সভাপতি আবু নাছেরসহ সাত জন মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।