ভোটকেন্দ্রে গুলিতে ৪ নিহত: ৪ দিন পরও আতঙ্কে কালাইহাটা, সন্ধ্যায় ফাঁকা বাজার
জিয়া শাহীন, বগুড়া প্রতিনিধি, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 10 Jan 2022 09:11 PM BdST Updated: 10 Jan 2022 09:30 PM BdST
বগুড়ার গাবতলী উপজেলার বালিয়াদিঘী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে গুলিতে চারজন নিহতের স্বজনরা মামলায় হয়রানির ভয় আর আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
ঘটনার চার দিন পর রোববার বিকালে কালাইহাটা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, চারদিকে সুনসান, থমথমে ভাব। বেশ জমজমাট বাজারটিতে তখন অধিকাংশ ঘরই বন্ধ। যে কয়েকটা চায়ের দোকান খোলা সেখানেও মানুষের আনাগোনা কম। যারা এসেছেন তাদের মধ্যেও একটা চাপা আতঙ্ক। অপরিচিত কাউকে দেখলে আলোচনা বন্ধ করে দিচ্ছেন!
বগুড়া শহর থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার দূরে ভাঙা রাস্তাঘাট পেরিয়ে কালাইহাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের সামনে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে একটি পুলিশের টহল গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। পাশে অস্ত্র নিয়ে পায়চারি করছেন কয়েকজন পুলিশ সদস্য।
নির্বাচনের ফলাফল কেন্দ্রের বাইরে অন্যত্র ঘোষণা করা হবে – এমন সন্দেহ থেকে ৫ জানুয়ারি ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার পর পরই বিক্ষুব্ধ জনতা কালাইহাইটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র ঘেরাও করে। এরপর সরকারি কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোড়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গুলি করলে চারজন নিহত হয়।
এরা হলেন কালাইহাটা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আমির হোসেনের স্ত্রী কুলকুস বেগম (৪৫), একই গ্রামের আব্দুর রশিদ (৪৮), খোরশেদ আলী (৭০) ও মো. আলমগীর (৪০)।
এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট প্রিজাইডিং অফিসার বাদী হয়ে পরদিন ৬ জানুয়ারি অজ্ঞাত তিন শতাধিক ব্যক্তির নামে মামলা করেন। এ ছাড়া ঘটনা তদন্তে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলী হায়দারকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে।
রোববার কালাইহাটা বাজারেই দেখা হয়, গ্রামের বাসিন্দা পঞ্চাশোর্ধ্ব আব্দুল বাছেদ ও চল্লিশোর্ধ্ব শাহার আলীর সঙ্গে। পরিচয় দিয়ে নিহত কুলসুম আর আলমগীরের বাড়ির পথটা দেখিয়ে দিতে বললে তারাও সঙ্গী হন।

কিন্তু নির্বাচনের পর সেই পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। এখন সন্ধ্যা রাতেই বাজার মরে যায়; লোকজন চলে যায়। অনেক পরিবারেই পুরুষ মানুষ ভয়ে বাড়িছাড়া। তবে ঘটনার পর থেকেই পুলিশ টহল বাড়িয়েছে। মানুষকে ভয় না পেতে বলছে।
কথা বলতে বলতেই বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিনিধি নিহত কুলসুম বেগমের বাড়ি পৌঁছে যান।
ঘর থেকে বেরিয়ে আসে কুলসুমের ১২ বছররের ছেলে আকিব। সে জানায়, তার মা ওইদিন ভোটের ফল শুনতে কেন্দ্রের সামনে গিয়েছিলেন।
আকিব জানায়, তার বাবা বাড়ি নেই। বাবার আরেকটি পরিবার আছে। সেই পরিবারে স্ত্রী আর সন্তান রয়েছে।
“আমি এখন কী করব? মা তো গুলি খেয়ে মরে গেল। আমার মার কী অপরাধ? উপজেলা চেয়ারম্যান ৫০ হাজার টাকা দিছে। ইউএনও, ওসি কেউ আসেনি, কিছু দেয়নি,” বলে কুলসুমের ছেলে।
নিহত আলমগীরের স্ত্রী হোসনে আরা (৩২) জানান, স্বামীই ছিল তার সংসারের আয় করার একমাত্র ব্যক্তি। তাদের একমাত্র মেয়ে আঙ্গুরী এখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে।
তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে করে বলেন, “আমি কী খাব, মেয়েকে কীভাবে পড়ালেখা করাব?”
ভোটকেন্দ্রে গুলিতে ৪ মৃত্যু: আতঙ্ক আর হয়রানির ভয় স্বজনহারাদের
বগুড়ায় ভোটকেন্দ্রে গুলিতে ৪ মৃত্যু: মামলা দায়ের, তদন্ত কমিটি
ঘটনার পর প্রশাসনের কেউ খোঁজ নিতে আসেনি বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করে হোসনে আরা বলেন, “তাহলে আমরাও কি অপরাধী?”
তবে নিহত আব্দুর রশিদের স্ত্রী চল্লিশোর্ধ্ব বুলবুলি বেগম সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, জেলা প্রশাসক মো. জিয়াউল হক নিহত প্রত্যেক পরিবারকে এক লাখ টাকা দিয়েছেন এবং পরবর্তীতে আরও সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, “আমরা দিন আনি, দিন খাই। সংসার চালাত যে সে তো গুলিতে মারা গেল। দুই ছেলে এবং এক মেয়েকে নিয়ে কোথায় দাঁড়াব?”
নিহত খোরশেদ আকন্দের ছেলে এরশাদ ভয়ের কথা বলতে গিয়ে বলেন, “বাবাকে হারালাম। এখন ভয় হচ্ছে মামলার। কেউ গুলিতে মারা গেলে সেখানে প্রসাশনের লোক আসে, সান্ত্বনা দেয়, সহযোগিতা করে। কিন্তু আমাদের এখানে কেউ আসেনি।”
তবে কালাইহাটা গ্রামবাসীকে ভয় আর আতঙ্কগ্রস্ত না হতে আশ্বস্ত করেছেন গাবতলী মডেল থানার ওসি জিয়া লতিফুল।
তিনি সোমবার বিকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মামলার অজ্ঞাত আসামিদের এখনও শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। তাই কেউ এখনও গ্রেপ্তার হয়নি। কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে না।”
ঘটনাস্থল ও আশপাশে পুলিশ নিয়মিত টহল দিচ্ছে উল্লেখ করে ওসি বলেন, “মানুষ যাতে ভয় না পায় তার জন্য গ্রামবাসীর সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কথা বলছে। তাদের আশ্বস্ত করছে। সেখানে তো কোনো ভয় থাকার কথা না।”
এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তীকে ফোন করলে তিনি রিসিভ করেননি।
কালাইহাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী শাজাহানপুরের ইউএনও আসিফ আহমেদ সোমবার বিকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে ঘটনার দিনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, “গ্রামবাসীকে আমি বুঝানোর চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু এক পর্ষায়ে তারা হামলা করে ভাঙচুর করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষা জন্য বিজিবিকে নির্দেশ দেই।”
-
পাবনায় হত্যার দায়ে এক নারীর যাবজ্জীবন
-
ইমরানের বিদ্রোহ: ‘পাত্তা দিচ্ছেন না’ রিফাত
-
ফরিদপুরে কভার্ড ভ্যান দুর্ঘটনায় সার্জেন্ট নিহত
-
মুন্সীগঞ্জে আওয়ামী লীগের দুপক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ ৫
-
আখাউড়া বন্দরে সার্ভার অকেজো, খাতায় লেখা হচ্ছে তথ্য
-
লক্ষ্মীপুরে স্ত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যা: স্বামীর যাবজ্জীবন
-
মেহেদির রং না মুছতেই দম্পতির ‘আত্মহত্যা’, পুলিশের সন্দেহ
-
গাজীপুরে স্কয়ারের ওষুধ কারখানায় আগুন
-
পাবনায় হত্যার দায়ে এক নারীর যাবজ্জীবন
-
ফরিদপুরে কভার্ড ভ্যান দুর্ঘটনায় সার্জেন্ট নিহত
-
মুন্সীগঞ্জে আওয়ামী লীগের দুপক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ ৫
-
আখাউড়া বন্দরে সার্ভার অকেজো, খাতায় লেখা হচ্ছে তথ্য
-
লক্ষ্মীপুরে স্ত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যা: স্বামীর যাবজ্জীবন
-
মেহেদির রং না মুছতেই দম্পতির ‘আত্মহত্যা’, পুলিশের সন্দেহ
- শেষদিনের রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটি
- মুশফিক-লিটনের সেঞ্চুরি, ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে রেকর্ড জুটি
- ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি দলে ফিরলেন মোসাদ্দেক-এনামুল-সাইফ
- সাকিবের কোম্পানিকে বিএসইসির নোটিস
- রিজার্ভ আবার ৪২ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল
- ভারত টি-টোয়েন্টি দলে উমরান, ফিরলেন পান্ডিয়া-কার্তিক
- দণ্ড নিয়ে হাজি সেলিম কারাগারে, এমপি পদের কী হবে?
- মুস্তাফিজকে নিয়েই উইন্ডিজ সফরের টেস্ট দল
- ‘মুজিব’ চলচ্চিত্রের বাজেট ৮৩ কোটি টাকা: বিএফডিসি
- ঢাকায় গড়া ৭৩ বছর আগের রেকর্ড ভাঙলেন মুশফিক-লিটন