ভোটকেন্দ্রে গুলিতে ৪ মৃত্যু: আতঙ্ক আর হয়রানির ভয় স্বজনহারাদের

বগুড়ার গাবতলী উপজেলায় ভোটকেন্দ্রে গুলিতে চার মৃত্যুর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চেয়ে স্বজন হারানো পরিবারের সদস্যরা হয়রানির আতঙ্কে থাকার কথা জানিয়েছেন।

বগুড়া প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Jan 2022, 08:31 AM
Updated : 10 Jan 2022, 01:01 PM

ইউনিয়ন পরিষদের পঞ্চম ধাপের ভোটের দিন ৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় বালিয়াদিঘী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গুলিতে নিহতদের পরিবারের সদস্যরা সোমবার দুপুরে এক মানববন্ধনে এই ভয়ের কথা তুলে ধরেন।

বগুড়া শহরের সাতমাথায় সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) গাবতলী উপজেলা শাখার উদ্যোগে মানববন্ধনে নিহতদের পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও বালিয়াদিঘী ইউনিয়নের স্থানীয় লোকজনও অংশ নেন। 

নির্বাচনের ফলাফল কেন্দ্রের বাইরে অন্যত্র ঘোষণা করা হবে – এমন সন্দেহ থেকে ৫ জানুয়ারি ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার পর পরই বিক্ষুব্ধ জনতা কালাইহাইটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র ঘেরাও করে। এরপর সরকারি কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গুলি করলে চারজন নিহত হয়।

এরা হলেন কালাইহাটা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আমির হোসেনের স্ত্রী কুলকুস বেগম (৪৫), একই গ্রামের আব্দুর রশিদ (৪৮), খোরশেদ আলী (৭০) ও মো. আলমগীর (৪০)।

এ ঘটনায় প্রিজাইডিং অফিসার আব্দুল মজিদ বাদী হয়ে পরদিন ৬ জানুয়ারি অজ্ঞাত তিন শতাধিক ব্যক্তির নামে মামলা করেন। এ ছাড়া ঘটনা তদন্তে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলী হায়দারকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে।

মানববন্ধনে  নিহত কুলসুমের স্বামী খোকন মিয়া বলেন, ”আমরা দিন আনি দিন খাই। অন্য কোনো চিন্তা নেই আমাদের।  আমরা মামলার আতঙ্কে আছি। আমরাসহ গ্রামবাসীদের যেন মামলায় হয়রানি না করা হয়, এটা আমাদের অনুরোধ।”

নিহত আব্দুর রশীদের স্ত্রী বুলবুলি বেগম বলেন, ”ভোটারদের নিরাপত্তা নেই আজ। যে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিরাপত্তা দিবে; তারাই গুলি করে হত্যা করল। আমরা এর  বিচার চাই।” 

একই দাবি জানান নিহত আলমগীরের স্ত্রী হোসনে আরা ও নিহত মোরশেদের ছেলে আলমগীর।

মানববন্ধন থেকে বক্তারা ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছেন। অসহায় গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারসহ নিহতদের পরিবার প্রতি অন্তত ১০ লাখ টাকা ও আহতদের চিকিৎসার জন্য পাঁচ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের দাবি জানানো হয়।

বগুড়ার ডিসি মো. জিয়াউল হক নিহত চারজনের প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন নিহত মোরশেদের স্ত্রী বুলবুলি খাতুন।

আতঙ্কের বিষয়ে গাবতলী থানায় ওসি জিয়া লতিফুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পুলিশ সেখানে নিয়মিত টহল দিচ্ছে। গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলছে। আতঙ্ক সেখানে থাকার কথা নয়।”

তবে পুলিশ এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

ওসি জিয়া লতিফুল বলেন, “কোনো আসামিকে এখনও শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি বলে গ্রেপ্তারও হয়নি কেউ।”

সুজন গাবতলী উপজেলা শাখার সদস্য ইফতেখার আহাম্মেদের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন বগুড়া জেলা কমিটির সভাপতি মো. হাফিজার রহমান মন্টু, সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ন আহাম্মেদ, জেলা কমিটির সদস্য কানিজ রেজা প্রমুখ।