স্ত্রীর মৃত্যুর পর পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু স্বামীর, একই শ্মশানে দাহ

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় পুলিশ হেফাজতে মারা যাওয়া হিমাংশু বর্মণের সঙ্গে একই শ্মশানে দাহ করা হয়েছে তার কয়েক ঘণ্টা আগে মারা যাওয়া অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী সবিতা রানীকে।

লালমনিরহাট প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Jan 2022, 06:20 PM
Updated : 10 Jan 2022, 05:47 AM

শনিবার রাতে পুলিশের উপস্থিতিতে প্রথমে হিমাশু বর্মণ (৩৮) ও পরে সবিতা রানীর (৩০) মরদেহ স্থানীয় শ্মশানে দাহ করা হয়।

হিমাংশু হাতীবান্ধা উপজেলার ভেলাগুড়ি ইউনিয়নের পূর্ব কাদমা মালদাপাড়া এলাকায় বিশেস্বর চন্দ্র বর্মণের ছেলে।

গত শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হিমাংশুর বাড়ি থেকে সবিতার লাশ উদ্ধার করে হাতীবান্ধা থানা পুলিশ। এরপর সেখান থেকে হিমাংশু বর্মণ ও তার মেয়ে প্রিয়াংকাকে লাশের সঙ্গে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।

ওইদিন বিকালে পুলিশ হিমাংশুকে হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

পুলিশ বলছে, হিমাংশু থানার একটি কক্ষে গলায় ইন্টারনেটের তার পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।

তবে হিমাংশুর স্বজনের দাবি, পুলিশ তাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে।

হিমাংশুর ছোট ভাই সুধীর চন্দ্র রায় সাংবাদিকদের বলেন, শুক্রবার সকালে তার ভাইয়ের স্ত্রী সবিতা রানীর লাশ ঘরের সামনে থেকে উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যায় পুলিশ। এরপর বেলা ১১টার দিকে পুলিশ হিমাংশুকে থানায় নিয়ে যায়।

তিনি বলেন, “পুলিশ যখন আমার ভাইকে ধরে নিয়ে যায় তখন সে সুস্থ ছিল। থানার নেওয়ার পর সে মারা গেছে। পুলিশের নির্যাতনে তার মৃত্যু হয়েছে।”

হিমাংশুর বাবা বিশ্বেশ্বর বর্মণের অভিযোগ, পুলিশ তার ছেলের কাছে এক লাখ টাকা চেয়েছিল বিষয়টি মীমাংসার জন্য। আর সেই টাকা দিতে না পারায় পুলিশ তাকে মেরে ফেলেছে।

পরিবারের সদস্যরা জানান, সবিতা রানী প্রায় সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। তাদের ঘরে এবার ছেলে আসবে বলে চিকিৎসকের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছিলেন হিমাংশু-সবিতা দম্পত্তি। তাদের প্রিয়াংকা ও প্রেয়সী নামে দুই মেয়ে আছে।

শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মায়ের লাশের সঙ্গে হিমাংশু ও তার বড় মেয়ে প্রিয়াংকাকে হাতীবান্ধা থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। সেখানে বাবা-মেয়েকে আলাদা আলাদা কক্ষে রাখা হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রিয়াংকা বলেন, “থানায় বাবার সাথে একবারও দেখা করতে দেয়নি পুলিশ। এমনকি ওইদিন বিকালে থানায় বাবা মারা গেলেও আমাকে জানানো হয়েছে অনেক রাতে। বলতে বলতে হাউ-মাউ করে কাঁদতে থাকেন প্রিয়াংকা।”

হাতীবান্ধা থানার ওসি এরশাদুল আলম বলেন, “হিমাংশু থানার কক্ষে থাকা ওয়াইফাই-এর তার গলায় পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। তার পরিবারের কাছে কোনো টাকা চাওয়া হয়নি।”

এদিকে, হাতীবান্ধা থানায় পুলিশের হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনায় লালমনিরহাট অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ-সার্কেল) মারুফা জামালকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত টিম গঠন করেছে জেলা পুলিশ।

ওই তদন্ত টিমের অন্য সদস্যরা হলেন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার ওসি আমিরুল ইসলাম ও কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আলম।     

এ বিষয়ে লালমনিরহাট জেলা পুলিশ সুপার আবিদা সুলতানা সাংবাদিকদের বলেন, “থানায় মৃত্যুর ঘটনায় তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদেরকে সাত কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।”