বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক সড়কে লাকসাম উপজেলার কালিয়াচৌ এলাকায় বিআরটিসি বাসের সঙ্গে সংঘর্ষে বাহারদের বহনকারী সিএনজিচালিত অটোরিকশা চুরমার হয়ে যায়।
দুর্ঘটনায় নিহত হন বাহারুল আলম বাহার (৫০), তার স্ত্রী পারুল বেগম (৪০), ১৪ মাস বয়সী মেয়ে জান্নাতুল মাওয়া এবং শাশুড়ি গোলাপ নাহার (৭০)।
তাদের বহনকারী অটোরিকশার চালক মফিজুল ইসলাম গুরুতর আহত হন। তিনি কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
কুমিল্লার লালমাই উপজেলার ভোলাইন ইউনিয়নের পরতী গ্রামের বাসিন্দা বাহারুল আলম বাহার পেশায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার (মিশুক) চালক। পরিবারে ছিল স্ত্রী আর চার মেয়ে। সংসারে অভাব থাকলেও বাহার কোনো রকমে টেনেটুনে চালিয়ে নিচ্ছিলেন।
বাহারের স্বজনরা জানান, বুধবার মধ্যরাতে খবর এলো ফেনীর দাগনভূঁইয়া উপজেলার কামার পুকুরিয়ার বাসিন্দা বাহারের এক মামা শ্বশুর মারা গেছেন। কয়েকদিন আগে বাহারের বাড়িতে বেড়াতে এসেছেন তার শাশুড়ি গোলাপ নাহার। তাই শাশুড়ির ভাইয়ের মৃত্যুর খবরে বৃহস্পতিবার ভোর ৬টায় একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাড়া করে শাশুড়িকে নিয়ে বাহার রওনা করেন দাগনভূঁইয়ার উদ্দেশে। সঙ্গে স্ত্রী পারুল বেগম, ১৪ মাস বয়সী মেয়ে জান্নাতুল মাওয়া ও শাশুড়ি গোলাপ নাহার।
স্কুল-মাদ্রাসা খোলা থাকায় বাহারের বাকি তিন মেয়েকে বাড়িতে রেখে যান।
বৃহস্পতিবার বিকালে পরতী গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে বাহার ও তার স্ত্রী-কন্যাকে দাফন করা হয়েছে। আর শাশুড়ির মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয়েছে ফেনীতে। সেখানে তাকে দাফন করা হয়।
নিহত বাহারের চাচাতো ভাই ইসমাইল হোসেন বলেন, বাহারের বড় মেয়ে ফাতেমা আক্তার পরতী ফাজিল মাদ্রাসায় আলিম শ্রেণিতে পড়ে, মেজ মেয়ে মরিয়ম আক্তার স্থানীয় একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণিতে আর সেজ মেয়ে হাজেরা আক্তার পরতী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে।
“বাহার ভাইয়ের সামান্য আয়তে কোনো রকমে পরিবারটি চলত। তাদের এমন মর্মান্তিক মৃত্যুকে মেয়েগুলো অসহায় হয়ে পড়েছে।”
বাহারের ভাতিজা মীর হোসেন বলেন, “আমরা ভেবেই পাচ্ছি না বাহার কাকার তিন মেয়ে কীভাবে বাঁচবে। বাড়িতে একটি টিনের ঘর ছাড়া আর কিছুই নেই তার। ঘর থেকে বের হয়ে হাঁটার জায়গাটিও অন্য মানুষের।
বাহারের বড় মেয়ে ফাতেমা আক্তার ঘটনার পর থেকেই বাবা-মা আর বোনের জন্য বিলাপ করছেন।
আহাজারি করতে করতে তিনি বলেন, “আমরা তিন বোন এখন কী নিয়ে বাঁচব? আমাদের তো আর কিছুই রইল না। আমার বাবা অনেক কষ্ট করে সংসার চালাতেন। কিন্তু এরপরও আমাদের পড়াশোনা বন্ধ করেননি। বাবা হাসিমুখে আমাদের জন্য দিনরাত শুধু কষ্টই করে গেছেন।”
ময়নামতি হাইওয়ে পুলিশের লালমাই ফাঁড়ির এসআই মো. জসিম উদ্দিন বলেন, নোয়াখালী থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী বিআরটিসি বাসের সঙ্গে সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলে গোলাপ নাহার ও বাহারুল আলমের মৃত্যু হয়। গুরুতর আহত অটোরিকশা চালকসহ আহত অপর তিন জনকে মুমূর্ষু অবস্থায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে অপর দুইজনের মৃত্যু হয়।
লাকসাম ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ও স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করা হয়। ঘটনার পর বাসের চালক পালিয়ে গেছে। দুর্ঘটনা কবলিত বাস ও সিএনজি চালিত অটোরিকশাটি উদ্ধার করা হয়েছে।