দলীয় পদ হারিয়ে তৈমুর বললেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ’

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টার পদ হারানোর পর এক প্রতিক্রিয়ায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র পদপ্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার বলেছেন, এটি তার জন্য ভালো হয়েছে এবং দল তাকে মানুষের কাছে যেতে মুক্ত করে দিয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Jan 2022, 01:54 PM
Updated : 3 Jan 2022, 02:26 PM

আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত থাকার পরও মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছেন তৈমুর। সোমবার দুপুরেই দল তাকে অব্যাহতির কথা জানায়। তবে চিঠিতে অব্যাহতি দেওয়ার কোনো কারণ দেখানো হয়নি।

এর আগে গত ২৫ ডিসেম্বর জেলা বিএনপির আহ্বায়কের পদ থেকেও সরানো হয়েছিল তৈমুরকে। যদিও দলের প্রাথমিক সদস্য পদে তিনি বহাল আছেন।

অব্যাহতির চিঠি পাওয়ার পর বিকালে নগরীর মাসদাইর বাসভবনে সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়ায় তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন না। দল থেকেও তাকে কিছু জানানো হয়নি।

স্বতন্ত্র এ মেয়র পদপ্রার্থী বলেন, “যদি এটা সত্য হয়ে থাকে, আলহামদুলিল্লাহ। আমি মনে করি, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান একটা সময়োচিত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।তিনি আমাকে জনগণের জন্য মুক্ত করে দিয়েছেন। এখন আমি রিকশাওয়ালাদের তৈমুর, রিকশাওয়ালাদের কাছে ফিরে যাব। ঠেলাগাড়িওয়ালাদের তৈমুর ঠেলাগাড়িওয়ালাদারের কাছে ফিরে যাব। আমি গণমানুষের তৈমুর, গণমানুষের কাছে ফিরে যাব।”

ভাগ্যের মালিক একমাত্র আল্লাহ্ উল্লেখ করে তৈমুর বলেন, “অন্য কেউ আমার ভাগ্যের মালিক এটা আমি বিশ্বাস করি না।”

তিনি আরও বলেন, ”আমি ঠেলাগাড়ি, হকারসহ যেসব সংগঠন করি সেগুলো সিটি করপোরেশনের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। তাদের দীর্ঘদিনের দাবি আমি নির্বাচন করি।”

২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও প্রার্থী হয়েছিলেন তৈমুর। পরে দলের নির্দেশে ভোট থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন।

সেই প্রসঙ্গ টেনে তৈমুর বলেন, “২০১১ সালে ভোটের পাঁচ ঘণ্টা আগে দলের সিদ্ধান্তে নির্বাচন থেকে বসে পড়ি। কিন্তু দলকে আজ পর্যন্ত প্রশ্ন করি নাই, কেন আমাকে সরিয়ে দেওয়া হল। কেন আমাকে প্রত্যাহার করা হল, এখানে রেজাল্টটা কী হয়েছে, জাতি কোনো উপকৃত হয়েছে কি না। তবে সরকারদলীয় প্রার্থী মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। নৌকার প্রার্থী মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন।”

“অনেকে মনে করতে পারেন, এইবার নৌকার প্রার্থীকে জয়লাভ করার জন্য আমাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, মনে করতেই পারেন। কিন্তু আমি মনে করি, আমার দল আমার উপকার করেছে। আমি ব্যাক টু দ্য প্যাভেলিয়ন। আমি রাস্তার মানুষের পাশে ছিলাম, বস্তিতে-বস্তিতে ছিলাম, সেখানেই ঘুরে বেড়াব।”

প্রবীণ এই নেতা বলেন, “রাজপথে গুলি খেয়েছি, বহুবার কারাবরণ করেছি। গরুর মতো পুলিশ আমাকে পিটাইছে, কিন্তু আমি রাজপথ ছাড়ি নাই। এখনো জনগণের সঙ্গে রাজপথে আছি। জনগণের জন্য আমার যদি মৃত্যু হয়, রাজপথেই হবে।”

দলীয় পদ হারানোর পর দলের নেতাকর্মীদের পাশে পাবেন কি না, তারা ভোট দেবেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তৈমুর বলেন, “যারা বিএনপিতে ভোট দেন, তারা কি নৌকায় ভোট দেবেন? যারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তারা কি মনে করেন, নৌকার প্রার্থীকে পাশ করানোর জন্য এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ২০১১ সালে যে উদ্দেশ্যে এবং যে বিষয়টি মাথায় রেখে (দল) এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তা ছিল সরকারি দলের প্রার্থীর জন্য। এইবারও কি ওই সিদ্ধান্তের জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে? যদি নিয়ে থাকে দল নিছে।”

বিএনপির পরীক্ষিত লোকজনই তার সঙ্গে রয়েছে বলে মনে করেন স্বতন্ত্র এই প্রার্থী। তিনি বলেন, “বিএনপি নেতাকর্মীরা এখনো আমাকে ছেড়ে যায়নি। পানি কাটলে দুই টুকরো হবে না, কর্মীদের সঙ্গে আমার যে সর্ম্পক তা টুকরো হবে না। গভীর রাতে কর্মীরা আমাকে পায়, কোনোদিন কর্মীদের সঙ্গে বেইমানি করিনি।”

”নির্বাচনে থাকার জন্য যেকোনো স্যাক্রিফাইশ করার জন্য আমি প্রস্তুত। ২০১১ সালের দলের কথায় নিজেকে আত্মহুতি দিয়েছি। এইবার ২০২২ সালে এসে জনগণের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করলাম”, যোগ করেন সদ্য পদ হারানো বিএনপির এই নেতা।  

আগামী ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে হাতি প্রতীকে মেয়র প্রার্থী হয়েছেন তৈমুর। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী। তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে নৌকা প্রতীকে ভোট করছেন। 

ভোটে প্রার্থী হওয়ার পর তৈমুর বলেছিলেন, জনগণের ‘চাহিদা ও প্রয়োজনে’ তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন।

স্থানীয় নির্বাচনে বিএনপির অংশ না নেওয়ার প্রতিক্রিয়ায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতারা বলে আসছেন, বিএনপি দলীয় প্রতীক না নিয়ে কৌশলে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে।