আসামি ‘এসআইয়ের ইচ্ছামতো, জানেন না’ বাদী

কুমিল্লার দাউদকান্দিতে একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় নিজের ইচ্ছামতো তিন তরুণকে আসামি করার অভিযোগ উঠেছে। পরে আদালতে বাদীর সাক্ষ্যে তারা জামিন পান।

কুমিল্লা প্রতিনিধিআবদুর রহমান, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Jan 2022, 03:00 PM
Updated : 2 Jan 2022, 03:00 PM

মামলার বাদী দাউদকান্দি উপজেলার জিংলাতলী ইউনিয়নের হাটখোলা গ্রামের জাহাঙ্গীর সরকারের মেয়ে তাসলিমা আক্তার এই অভিযোগ করেছেন।

তবে দাউদকান্দি মডেল থানার গৌরিপুর তদন্ত কেন্দ্রে কর্মরত এসআই সৈয়দ ফারুক তার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

মামলার বরাতে তাসলিমা আক্তার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তৃতীয় ধাপে গত ২৮ নভেম্বর জিংলাতলী ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সদস্য পদে আপেল প্রতীকের প্রার্থী মাইনুদ্দীনের কর্মী ছিলেন বাদীর বাবা ও চাচা। ওই নির্বাচনে বিজয়ী হন মোরগ প্রতীকের কাজী ইলিয়াছ। পরদিন ২৯ নভেম্বর বাদীর বাবার উপর বিজয়ী সদস্য কাজী ইলিয়াছের লোকজন দুই দফা হামলা চালিয়ে পেটে এলোপাথাড়ি ছুরিকাঘাত করে এবং জাহাঙ্গীর সরকারকে [বাদীর বাবা] হত্যার চেষ্টা করে। তাকে বাঁচাতে গেলে জাহাঙ্গীরের ভাই কুদ্দুস সরকারকেও ছুরিকাঘাত করা হয়। 

তাসলিমা আক্তার বলেন, ঘটনার পরদিন [২৯ নভেম্বর] তিনি বাদী হয়ে ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৫/৬ জনের বিরুদ্ধে একটি লিখিত এজাহার নিয়ে গৌরিপুর তদন্ত কেন্দ্রে যান।

“এ সময় পুলিশ আমার এজাহারটি গ্রহণ করেনি। এক পর্যায়ে এসআই সৈয়দ ফারুক নিজেই একটি এজাহার তৈরি করেন। এতে আসামি করা হয় ১৯ জনকে।”

তাসলিমা আরও বলেন, “এসআই ফারুক মনগড়া যে তিনজনকে আসামি করেছেন তাদের একজনের নাম রিপন। রিপনকে আমি ঘটনার সাক্ষী করেছিলাম। এছাড়া ১৭ নম্বর আসামি করেছেন মাসুম খান (২১) এবং ১৮ নম্বর আসামি করেছেন হাসান মিয়াকে (২২)। পরে জেনেছি তাদের বাড়ি আমাদের ইউনিয়নের তিনচিতা গ্রামে। অথচ আমি তাদের চিনিও না। এছাড়া তারা ঘটনায় জড়িত ছিলেন না।”

তাসলিমা আক্তার আরও বলেন, ‘মনগড়া’ এজাহার তৈরি করে এসআই ফারুক তাদের তদন্ত কেন্দ্র থেকে থানায় নিয়ে যান। পরে ৩০ নভেম্বর সকালে পুলিশ মামলাটি নথিভুক্ত করে।

“তিনি [ফারুক] হুমকি দিয়ে বলেছেন, এ তিনজনের নাম না দিলে মামলাই নেবে না পুলিশ।”

এরপর এসআই সৈয়দ ফারুক মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব নিয়ে মাসুম খান ও হাসান মিয়াকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছেন এবং তাদের রিমান্ডে আনার জন্যও আবেদন করেন বলে জানান তাসলিমা।

“পরে আমি বিবেকের তাড়নায় আদালতে গিয়ে বলেছি, এরা আমার বাবা-চাচাকে হত্যার চেষ্টা করেননি। তারা নির্দোষ। পরে আদালত তাদের জামিন দিয়েছেন।”

তাসলিমার অভিযোগ, ঘটনার এক মাস পার হলেও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রহস্যজনক কারণে প্রকৃত আসামিদের গ্রেপ্তার করছে না। আসামিরা এখন তাকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছেন।

“এসআই সৈয়দ ফারুক তৃতীয় কোনো পক্ষের কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে ওই দুই তরুণকে জেল খাটিয়েছেন।”

অভিযোগ অস্বীকার করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সৈয়দ ফারুক বলেন, “আমি কীভাবে এজাহারে নাম যুক্ত করব? এসব অভিযোগ বানোয়াট। আমার কাছে মনে হয় বাদী কোনো সুবিধা নিয়ে আসামিদের পক্ষ নিয়েছেন। আমি তিনচিতা গ্রামের ওই দুই ছেলেকে ঘটনার দিন রক্তমাখা ছুরিসহ আটক করেছি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করে ওই ঘটনায় তারা জড়িত ছিল।”

এরপর বাদী নিজেই তাদের নাম এজাহারে যুক্ত করেন দাবি করে ফারুক বলেন, “আমি আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড আবেদনও করি। কিন্তু বাদী আদালতে গিয়ে বলে এগুলো তার আসামি না। এজন্য আদালত আসামিদের জামিন দিয়ে দেয়।”

অপর আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

এ বিষয়ে দাউদকান্দি মডেল থানার ওসি মো.নজরুল ইসলাম বলেন, “এমন কোনো ঘটনার কথা আমার জানা নেই। তবে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটে থাকলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।”