কুমিল্লায় মনোনয়ন ফরম কিনতে ‘বাধা দিচ্ছেন’ আওয়ামী লীগকর্মীরা

কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়ন ফরম কিনতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। 

কুমিল্লা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Jan 2022, 11:14 AM
Updated : 1 Jan 2022, 11:14 AM

সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে গিয়ে আশ্বাস পেলেও বাধা কাটেনি বলেও অভিযোগ করেছেন ভোটের লড়াইয়ে অংশ নিতে আগ্রহীরা।

কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম সদস্যসচিব ও সরসপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. গোলাম সরওয়ার মজুমদার।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, গত ২৫ ডিসেম্বর তিনি উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার দপ্তরে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েন।

“উপজেলা পরিষদের সামনে যুবলীগের কর্মী হিসেবে পরিচিত সেলিম নামে এক ব্যক্তির নেতৃত্বে কয়েকজন আমাকে বাধা দেন। তারা হুমকি দিয়ে বলেন, ‘মনোনয়নপত্র কিনলে প্রাণে মেরে ফেলা হবে।’ তখন আমি ফিরে আসি। শুক্রবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে আমার স্ত্রী ফাতেমা বেগম ও ভায়রা ভাই সবুজ মিয়া আমার পক্ষে মনোনয়নপত্র কিনতে যান। নির্বাচন কর্মকর্তা নাজির হোসে মিয়া তাদের বলেন, ‘আপনারা একটু বসেন। আমি নামাজ পড়ে আসি।’ নির্বাচন কর্মকর্তা বেরিয়ে গেলে ১০-১২ জন লোক কার্যালয়ে ঢোকেন। তারা আমার স্ত্রী ও ভায়রাকে চড়-থাপ্পড় মারতে মারতে উপজেলা পরিষদের সামনে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে নিয়ে যান। সেখানে গিয়েও তাদের মারধর করা হয়। একপর্যায়ে তাদের হুমকি দিয়ে বলা হয়, আবার মনোনয়নপত্র কিনতে গেলে প্রাণে মেরে ফেলা হবে।”

সরওয়ার অভিযোগ করেন, প্রথম দিনের ঘটনার পর তিনি ও আরও কয়েকজন ভোটে অংশ নিতে আগ্রহী ব্যক্তি জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন কর্মকতার কাছে তাদের দপ্তরে গিয়ে লিখিত অভিযোগ দেন।

কিন্তু কোনো প্রতিকার পাননি বলে তার অভিযোগ।

ঝলম উত্তর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করতে চান উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন।

তিনি অভিযোগ করেন, গত ২০ ডিসেম্বর ৫০০ টাকার ট্রেজারি চালান জমা দিয়েও মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করতে পারেননি তিনি।

“গত ২৭ ডিসেম্বর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার দপ্তরে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করতে গেলে একদল লোক আমাকে বাধা দেয়। তারা আমাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে। এ কারণে আমি মনোনয়ন ফরম কিনতে পারছি না।”

ঝলম উত্তর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সদস্য পদে নির্বাচন করতে চান আবু তাহের।

তিনি একই বিষয়ে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন বলে জানান।

উপজেলার হাসনাবাদ ইউনিয়নের জাকের পার্টির মনোনয়ন পেয়ে চেয়ারম্যান পদে লড়তে চান মোহাম্মদ কালাম। তিনিও একই অভিযোগ করেছেন।

বিপুলাসার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান দুলাল এবারও চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করতে চান।

তিনিও একই অভিযোগ তুলেছেন।

তাছাড়া ওই ইউনিয়নের মাহফুজুর রহমান, লক্ষ্মণপুর ইউনিয়নের আবদুল বাতেন বাকি, বাইশগাঁও ইউনিয়নের মো. তোফায়েল আহমেদ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদের জন্য লড়তে চান।

তারা অভিযোগ করেন, ক্ষমতাসীন দলের নেতারা এ উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্যপদে আওয়ামী লীগ নেতাদের বিনা ভোটে নির্বাচিত করতে চান। তাই তারা অন্যদের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করতে দিচ্ছেন না।

তারা যখন বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেন, তখনও কোনো দল তাদের প্রার্থী চূড়ান্ত করেনি।

তাদের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো.জাকির হোসেন।

তিনি বলেন, “এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমাদের দলের লোকজন কাউকে মনোনয়ন ফরম কিনতে বা জমা দিতে বাধা দিচ্ছেন না। যারই নির্বাচন করার ইচ্ছা আছে, তিনি মনোনয়ন ফরম কিনতে ও জমা দিতে পারবেন।”

জ্যেষ্ঠ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মঞ্জুরুল আলম অভিযোগ পেয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, তারা অভিযোগ পেয়েই প্রদক্ষেপ নিয়েছেন।

“এখন সবকিছু স্বাভাবিক আছে। রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে গেলেই যে কেউ মনোনয়ন ফরম কিনেত ও জমা দিতে পারবেন। এরপরও কোথাও সমস্যা হলে আমরা ব্যবস্থা নেব।”

শনিবার দুপুরে এসব প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জেলার পুলিশ সুপার মো. ফারুক আহমেদ বলেন, তারা মনোহরগঞ্জের ঘটনায় কয়েকটি অভিযোগ পেয়েছেন।

“অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা নিতে আমার কর্মকর্তাদের বলেছি। এর পরও কোনো প্রার্থী যদি আমাদের সহায়তা চান, আমরা সহায়তা করতে প্রস্তুত। প্রয়োজনে পুলিশি পাহারা দিয়ে তাদের সহযোগিতা করা হবে।”