সেন্ট মার্টিন: চার ঘণ্টায় সাফ ১৫০০ কেজি বর্জ্য

সৈকত পরিচ্ছন্নতার এক কার্যক্রমে অংশ নিয়ে স্বেচ্ছাসেবীরা চার ঘণ্টায় সেন্ট মার্টিনের একটি অংশ থেকে প্রায় দেড় হাজার কেজি ময়লা ও আবর্জনা পরিষ্কার করেছে, যেগুলোর বেশির ভাগই পচনশীল নয়।

রিয়াসাদ সানভীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 Dec 2021, 01:57 PM
Updated : 31 Dec 2021, 01:59 PM

বছরজুড়ে বিপুল পরিমাণ জমা হওয়া বর্জ্য দেশের একমাত্র এ প্রবাল দ্বীপ থেকে মূল ভূখণ্ডে ফিরিয়ে নিতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বানও এসেছে এ অভিযান থেকে।

ছোট্ট আয়তনের এ দ্বীপের অস্তিত্ব রক্ষায় পর্যটক চাপের লাগাম টেনে ধরার তাগিদের কথাও এসেছে।

শুক্রবার বছরের শেষ দিন সেন্ট মার্টিনে ‘পিক ইট আপ, ক্লিন ইট আপ, সি চেঞ্জ’ স্লোগানে এ কার্যক্রমের আয়োজন করে ইন্টারন্যাশনাল কোস্টাল ক্লিনআপ এর বাংলাদেশ অংশ।

এবারের সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অভিযানে প্রায় এক হাজার ৪৫০ কেজি প্লাস্টিক এবং অপচনশীল আবর্জনা সাফ করা হয়েছে।

আয়োজকরা জানান, প্রতি বছরই বাড়ছে এসব বর্জ্যের পরিমাণ, যা দেশের একমাত্র এ প্রবাল দ্বীপের পরিবেশের জন্য মারাত্বক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

প্লাস্টিক দ্রব্যের এ ক্রমবর্র্ধমান আগ্রাসনের জন্য দ্বীপে আসা বিপুল পর্যটকদের দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণকে দায়ী করেন আয়োজক সংগঠন ওশান কনজারভেন্সি বাংলাদেশ অংশের সমন্বয়ক মুনতাসির মামুন।

বার্ষিক এ সৈকত পরিচ্ছন্নতা অভিযানে অংশ নেন প্রায় ৫০০ স্বেচ্ছাসেবী। এর মাঝে ঢাকা থেকে আসেন বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার ৭৩ জন স্বেচ্ছাসেবী।

ছুটির দিনেও সেন্ট মার্টিনে এ অভিযানে অংশ নেয় বিএন ইসলামিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের কয়েকশ শিক্ষার্থী।

এছাড়া পুরো আয়োজনে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে ছিলেন কক্সবাজার থেকে আসা কয়েকজন সার্ফার ও লাইফ গার্ড সদস্য।

সকাল ৯টা দুপুর ১টা পর্যন্ত সেন্ট মার্টিন জেটি ঘাটের কাছাকাছি সৈকতের বিভিন্ন অংশে পড়ে থাকা প্লাস্টিক এবং অপচনশীল দ্রব্য অপসারণ করে নির্দিষ্ট একটি জায়গায় জড়ো করা হয়।

এরপর এসব আবর্জনা ধরন অনুযায়ী ভাগ করা হয়। গবেষণার জন্য এসব তথ্য সংরক্ষণ করা হচ্ছে ধারাবাহিক এ আয়োজনের শুরু থেকে।   

ওশান কনজারভেন্সির তথ্য অনুসারে, শুধু এক দিন সেন্ট মার্টিনের ক্ষুদ্র অংশে পরিচালিত পরিচ্ছন্নতা অভিযানে ২০১১ সালে পরিষ্কার করা হয় ৪৮০ কেজি অপচনশীল দ্রব্য; যা প্রতিবছরই বেড়ে ২০১৬ সালে হাজার কেজি ছাড়ায়। ২০২০ সালে এর পরিমাণ দাঁড়ায় এক হাজার ১৪০ কেজি।

মুনতাসির মামুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রতি বছরই দেখছি সেন্ট মার্টিনে পরিত্যক্ত প্লাস্টিক বেশি পাওয়া যাচ্ছে। এর কারণ গাণিতিক হারে পর্যটন বেড়েছে শেষ কয়েক বছরে।

“এক সময় এখানে একটা জাহাজ আসত। এখন আসে নয়টা। একটা জাহাজে কম করে হলেও যদি পাঁচশ জন করে আসেন, তাহলেও এখন সাড়ে চার হাজার মানুষ আসেন।“ 

এসব বর্জ্য মূল ভূখণ্ডে ফিরিয়ে নেওয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, যদি পর্যটক ও স্থানীয়দের ব্যবহৃত প্লাস্টিক ও অপচনশীল দ্রব্য সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মূল ভূখন্ডে ফিরিয়ে নেওয়া যায়, তাহলেই শুধু দূষণের হাত থেকে সেন্ট মার্টিনকে বাঁচানো সম্ভব।“

পর্যটকদের অসচেতনতা থেকেও বর্জ্য বাড়ছে এমন কথাও বলছেন এ অভিযানে অংশগ্রহণকারীরা।   

তারা বলেন, এ ছোট জায়গার মনুষ্য সৃষ্ট আবর্জনা ধারণ করার ক্ষমতা আসলেই নেই।

প্রবাল দ্বীপে বেড়াতে আসা পর্যটকদের এ নিয়ে সচেতন করার কাজ করছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। তারাও পর্যটকদের আচরণ নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাওয়ার কথা জানালেন।

ট্যুরিস্ট পুলিশ সেন্টমার্টিন সাবজোনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মহসীন বলেন, “পর্যটকবাহী জাহাজ জেটিতে ভেড়ার পরপরই হ্যান্ডমাইকে পরিবেশ সচেতনতামূলক বার্তা দেই। 

“এছাড়া সৈকতের ব্যবসায়ী, হোটেল মালিকদের প্রতি নির্দেশনা আছে যাতে প্লাস্টিক দ্রব্য সৈকতে ফেলা না হয়। এরপরও পরিস্থিতির খুব উন্নতি হয়েছে বলা যাবে না।” 

এ পরিস্থিতিতে অসচেতন পর্যটক ও ব্যবসায়ীদের উপর ‘আইন প্রয়োগ’ করার কথা ভাবা হচ্ছে বলে জানালেন তিনি।

সেন্ট মার্টিনের বিএন ইসলামিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাসুম অংশ নেন এবারের পরিচ্ছনতা কার্যক্রমে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে মাসুম বলেন, “দ্বীপের বিভিন্ন জায়গায় ময়লা ফেলার জায়গা থাকলেও অনেক সময়ই সেগুলো ব্যবহার করা হয় না।

”সবার উচিৎ জায়গামত ডাস্টবিনে ফেলা। অথবা নিজেদের কাছে একটা পলিথিন নিয়ে জমা করে সামনের ডাস্টবিন ফেলে দেওয়া।”

আরেক স্বেচ্ছাসেবক রেজওয়ান ইসলাম এ বিষয়ে দ্রুত সরকারি উদ্যোগ নেওয়ার তাগিদ দেন।

ঢাকা থেকে আসা স্বেচ্ছাসেবী আশরাফুজ্জামান উজ্জ্বল বলেন, “ছোটবেলা থেকে পাঠ্যসূচিতে পরিচ্ছনতার ব্যাপারে গুরুত্ব দিয়ে পাঠদান করাতে হবে। একটি প্রজন্মকে এ ব্যাপারে শক্তভাবে উদ্বুদ্ধ করা গেলে কার্যকর পরিবর্তন আনা সম্ভব।“

ট্যুরিস্ট পুলিশ ও বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের সদস্যরা পরিচ্ছন্নতা অভিযানে নিরাপত্তায় সহায়তা দেয়।

ওশান কনজারভেন্সির উদ্যোগে বিশ্বজুড়ে ৩৬তম ইন্টারন্যাশনাল কোস্টাল ক্লিনআপের অংশ হিসেবে এ অভিযান পরিচালিত হয়। বাংলাদেশে যা ২০০৫ সাল থেকে করা হচ্ছে। এ আয়োজনের সহযোগী প্রতিষ্ঠান কোকা-কোলা।