দুই কিশোরীকে আলাদা করতে নাকাল পরিবার

এক কিশোরীর বাড়ি গাইবান্ধায়, আরেকজনের সিলেটে, তাদের পরিচয় হয় ঢাকার; এরপর দুজনে দুজনের এতটাই অনুরক্ত হয়ে পড়েছে যে তাদের আলাদা করতে দুই পরিবারকে নাকাল হতে হচ্ছে।

তাজুল ইসলাম রেজা গাইবান্ধা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Dec 2021, 06:56 PM
Updated : 29 Dec 2021, 06:56 PM

সম্প্রতি সিলেটের কিশোরী গাইবান্ধায় আসার পর তাদের বিচ্ছিন্ন করতে গেলে দুজন আত্মহত্যা করার চেষ্টাও চালান বলে স্থানীয়দের ভাষ্য। এই ঘটনা ইতোমধ্যে সোশাল মিডিয়ায়ও আলোচনার খোরাক জুগিয়েছে।

দুই কিশোরী পরস্পরকে ‘বিয়ে করতে চাইছেন’, তাদের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জেনেছেন বলে স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি জানিয়েছেন; যদিও তাদের বিয়ের বয়স হয়নি, আর সমলিঙ্গে বিয়ে বিশ্বের নানা দেশে স্বীকৃত হলেও বাংলাদেশে তা আইনসিদ্ধ নয়।

আর এই বিষয়ে দুই কিশোরীর কিংবা তাদের পরিবারের কোনো বক্তব্যও জানা যায়নি। সিলেটের কিশোরীকে তাদের মা ধরে নিয়ে গেছেন সিলেটে, আর ব্যাপক আলোচনার মুখে বাড়ি ছেড়ে অন্য কোথাও গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে গাইবান্ধার কিশোরীর পরিবার।

গাইবান্ধার মেয়েটির বয়স ১৬ বছর, তার বাবা রিকশাভ্যান চালক, মা গৃহিনী। তারা দুই ভাই এক বোন। মেয়েটি লেখাপড়ার পাশাপাশি ফুটবল খেলেন। জেলার বাইরেও খেলতে যান তিনি।

কয়েকমাস আগে মেয়েটি ফুটবল খেলতে ঢাকায় যাওয়ার পর সেখানে একই বয়সী সিলেটের মেয়েটির সঙ্গে তার পরিচয় হয়। এরপর মোবাইল ফোনে এবং কখনও কখনও সরাসরি যোগাযোগ হতে থাকে।

২২/২৩ দিন আগে সিলেটের মেয়েটি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে খেলতে আসার পর গাইবান্ধা জেলা শহরে এসে অন্য মেয়েটির বাসায় ওঠার পর বিপত্তির শুরু বলে জানিয়েছেন গাইবান্ধা পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. কামাল হোসেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সিলেটের মেয়েটি না যাওয়ায় তার মা কয়েকদিন আগে গাইবান্ধায় আসেন এবং তার মেয়ের বন্ধুর বাড়িতেই ওঠেন। সেখানে মা-মেয়ে কয়েকদিন থাকেন। 

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে মেয়েকে নিয়ে সিলেট যাওয়ার প্রস্তুতি নেন ওই নারী। কিন্তু তা বাদ সাধে গাইবান্ধার মেয়েটি।

কামাল বলেন, “গাইবান্ধার মেয়ে তাকে যেতে বাধা দেন এবং তার বাধা না শুনলে ক্ষুব্ধ হয়ে সবার সামনে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। তখন সিলেটের মেয়েটি তার বাম হাত ব্লেড দিয়ে কেটে ফেলে।”

দুজনকেই গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং এরপর গাইবান্ধার মেয়েটির মা ফোন করেন কাউন্সিলর কামালকে। তখন তিনি হাসপাতালে গিয়ে দুই কিশোরীর সঙ্গে কথা বলে তাদের ‘প্রেমের সম্পর্ক’ জানতে পারেন।

কাউন্সিলর কামাল বলেন, হাসপাতালে দুজনকেই প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরদিন শুক্রবার সন্ধ্যায় মেয়েকে সিলেটে নিয়ে যেতে চান তার মা। কিন্তু মেয়ে যেতে রাজি নন।

“পরে ওই মেয়েকে ঘুমের ওষুধ দিয়ে সিলেটের বাসে উঠলেও পথে গোবিন্দগঞ্জে পৌঁছলে মেয়েটির জ্ঞান ফিরলে সে বাসের জানালা দিয়ে লাফ দেয়। এতে তার হাত কেটে যায়।”

তখন গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার পর ওই রাতেই মেয়েটিকে নিয়ে গাইবান্ধা ফিরে আসেন তার মা। পরে গত সোমবার মা-মেয়ে সিলেটে ফিরে যান বলে জানান কামাল।

এদিকে এই ঘটনাটি সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে গাইবান্ধার মেয়েটির বাড়িতে উৎসুক মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। এই পরিস্থিতিতে পরিবারটি বাড়ি ছেড়ে অজ্ঞাত স্থানে চলে যায়।

বুধবার তাদের বাড়ি গিয়ে পরিবারের কাউকে পাওয়া য়ায়নি। মেয়েটির বাবার মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়।

ঘটনাটি শুনেছেন বলে গাইবান্ধা পৌরসভার মেয়র মো. মতলুবর রহমানও জানিয়েছেন।

স্থানীয় পুলিশও ঘটনাটি শুনেছে। গাইবান্ধা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আবদুর রউফ বলেন, এনিয়ে সর্বত্র আলোচনাও হচ্ছে। তবে এ বিষয়ে দুই মেয়ের পরিবারের কেউই থানায় কোনো বিষয়ে কিছু জানায়নি।