প্রাণে রক্ষা পেলেও লঞ্চের রেলিংয়ে ধাক্কা লেগে তার স্ত্রী উম্মুল ওয়ারার পা ভেঙে গেছে।
বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ঢাকা থেকে বরগুনা যাওয়ার পথে ঝালকাঠি পৌঁছানোর পর এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে আগুন লেগে অন্তত ৩৭ জনের মৃত্যু হয়। দগ্ধ ও আহত হন আরও অন্তত ৭২ জন।
ইউএনও মুজাহিদ বলেন, তিনি ওই লঞ্চের নীলগিরি নামে একটা ভিআইপি কেবিনে ছিলেন। সঙ্গে ছিলেন তার স্ত্রী উম্মুল ওয়ারা।
তারা ঢাকা থেকে ফিরছিলেন জানিয়ে ইউএনও বলেন, ঢাকায় দাপ্তরিক কাজ সেরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে লঞ্চে ওঠেন। রাত ৩টার দিকে লঞ্চের অন্য যাত্রীদের চিৎকারে ঘুম ভাঙে।
“তখন ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যাই। তড়িঘড়ি করে রুম থেকে বের হয়ে লঞ্চের সামনে যাই। সেখানে শতাধিক যাত্রীর ভিড় ছিল। লঞ্চটি এ সময় সুগন্ধা নদীর মাঝখানে ছিল। অনেককেই নদীতে লাফিয়ে পড়তে দেখা গেছে।”
ইউএনও বলেন, “আমরাও ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন লঞ্চ থেকে লাফ দিই। আমি সরাসরি নদীতে পড়লেও উম্মুল ওয়ারা দোতালার রেলিংয়ে ধাক্কা খেয়ে পানিতে পড়ে। রেলিংয়ে ধাক্কায় তার ডান পা ভেঙে যায়।
“অন্যদের মধ্যে বৃদ্ধ ও শিশুরাই বেশি হতাহত হন। এছাড়া অনেক নারীও নদীতে লাফিয়ে পড়েন। তারা তীরে উঠতে পেরেছেন কিনা এ নিয়ে সংশয় রয়েছি।”
যারা ঘুমিয়ে ছিলেন এবং কেবিনে ছিলেন তারাই বেশি হতাহত হন বলে জানান ইউএনও।
পরে স্থানীয়রা গিয়ে তাদের উদ্ধার করে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়।
ইউএনও বলেন, ঝালকাঠির হাসপাতালে উম্মুল ওয়ারার পা প্লাস্টার করে দিয়েছেন চিকিৎসক। সেখান থেকে তাকে নিয়ে দুপুর নাগাদ তিনি বরগুনার পাথরঘাটা কর্মস্থলের পথে রওনা হয়েছেন।
সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার ঢাকা থেকে দক্ষিণ জনপদের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া লঞ্চগুলোতে ভিড় থাকে অন্য দিনের তুলনায় বেশি। সাপ্তাহিক ছুটির দুটি দিন পরিবারের সঙ্গে কাটাতে অনেকেই লঞ্চে চড়ে বসেন। তাদের অনেকেই বাড়ি ফিরছেন লাশ হয়ে।
বিআইডব্লিউটিএ বলছে, ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়ার সময় বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে চারশর মত যাত্রী ছিল। তবে উদ্ধার পাওয়া যাত্রীরা বলছেন আটশ থেকে এক হাজার আরোহী থাকার কথা।
শীতের রাতে যাত্রীদের অধিকাংশই গরম কাপড়ে শরীর মুড়ে ঘুমিয়ে ছিলেন। তিন তলা লঞ্চের কেবিনগুলোর দরজাও ছিল বন্ধ। রাত ৩টার পর হঠাৎ বিস্ফোরণের বিকট শব্দের পর ছড়িয়ে পড়ে আগুন।