মঞ্চস্থ হলো রোমহর্ষক স্মৃতির নাটক ‘বধ্যভূমির শহর’

নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলায় মঞ্চস্থ হয়েছে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নাটক ‘বধ্যভূমির শহর’, যা এই অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধের সময় এক ভয়ঙ্কর গণহত্যার স্মৃতি বহন করে।

নীলফামারী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Dec 2021, 05:34 PM
Updated : 20 Dec 2021, 05:35 PM

রোববার সন্ধ্যায় গোলাহাট বধ্যভূমি এলাকায় নাটকটির উদ্বোধন করেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী।

১৯৭১ সালের ১৩ জুন গোলাহাট এলাকায় চার শতাধিক হিন্দু মাড়োয়ারি নর-নারী-শিশু-বৃদ্ধকে হত্যা করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের সহযোগী রাজাকার-আলবদরের সদস্যরা।

পরিবেশ থিয়েটারের দেবাশীষ ঘোষের নির্দেশনায় নাটকে অভিনয় করেন ৩০০ জন কলাকুশলী।

প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী এ নাটক চলাকালে দর্শকের মাঝে ছিল শুনশান নীরবতা। নাটকের দৃশ্যে ১৯৭১ সালের একটি দিনের মর্মন্তুদ চিত্রের উপস্থাপন চোখ ভিজিয়েছে উপস্থিত অনেক দর্শকের। প্রচণ্ড শীতেও প্রায় ১০ হাজার মানুষ নাটকটি দেখেন।

দেবাশীষ ঘোষ বলেন, এক মাস ধরে গভীর রাত পর্যন্ত নাটকের মহড়া চলেছে। সৈয়দপুর শহরের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের শিল্পীরা এ নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন।

“নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধ, হত্যাযজ্ঞ, ধর্ষণ, তৎকালীন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, রাজনৈতিক নেতাদের ভূমিকা, গণআন্দোলন, বাঙালি সংস্কৃতি ও হত্যাকারীদের বর্বরতা চিত্রায়ন করা হয় এই নাটকে।”

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন নীলফামারী-২ আসনের সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর।

আরও উপস্থিত ছিলেন নীলফামারী জেলা প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমান, নীলফামারী পৌরসভার মেয়র দেওয়ান কামাল আহমেদ, সৈয়দপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোখছেদুল মোমিন, সৈয়দপুর পৌরসভার মেয়র রাফিকা আকতার জাহান প্রমুখ।

সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতা ও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় নাটকটি মঞ্চায়ন করে জেলা শিল্পকলা একাডেমি।

সেদিনের স্মৃতির বিবরণে সৈয়দপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার একরামুল হক বলেন, যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাদের পক্ষে মাইকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, শহরের হিন্দু মাড়োয়ারিদের নিরাপদে ভারতে পৌঁছে দেওয়া হবে। এজন্য একটি বিশেষ ট্রেন সৈয়দপুর রেলস্টেশন থেকে ভারতের শিলিগুড়ির উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে।

“কথামতো ১৩ জুন সকাল ১০টার দিকে সৈয়দপুর রেলস্টেশন থেকে যাত্রী নিয়ে ট্রেনটি যাত্রা শুরু করে। হিন্দু মাড়োয়ারিদের আলাদা করে ৪টি বগিতে ওঠানো হয়। পরে রেলের ৩৩৭ নম্বর কালভার্টের কাছে গোলাহাট এলাকায় থেমে যায় ট্রেনটি।”

তিনি বলেন, “গোলাহাটে নিয়ে পাকিস্তানি সেনারা ট্রেনের চার শতাধিক যাত্রীকে হত্যা করে। সে সময় যারা পালিয়ে যেতে পেরেছিলেন তাদের কেউ কেউ এখনও বেঁচে আছেন।”