বিবস্ত্র করে নির্যাতন মামলার রায়: বাদী-আসামি উভয়পক্ষ অখুশি

নোয়াখালীতে নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন মামলার রায়ে বাদী-আসামি উভয়পক্ষ তাদের অসন্তোষের কথা জানিয়েছে।

নোয়াখালী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Dec 2021, 11:22 AM
Updated : 14 Dec 2021, 11:48 AM

প্রায় ১৬ মাস আগের এ ঘটনায় বিচার শেষে মঙ্গলবার রায় ঘোষণা করেন নোয়াখালীর নারী ও শিশুনির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ১-এর বিচারক জয়নাল আবেদীন।

রায়ে ১৩ আসামির সবাইকে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। তাছাড়া আদালত প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে।

মামলার বাদী সেই নারী সাংবাদিকদের বলেন, “তারা আমাকে যেভাবে নির্যাতন করেছে, আর যাতে কোনো নারী আমার মত এ রকম ঘটনার শিকার না হয় এজন্য তাদের ফাঁসি হওয়া দরকার ছিল।

“তারা উচ্চ আদালত থেকে জামিনে বের হয়ে আসতে পারলে আমাকে এবং আমার পরিবারের কাউকে বাঁচতে দেবে না। আমার একটাই চাওয়া তারা যেন কোনোভাবেই বের হতে না পারে।”

এর আগে রায় ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মামুনুর রশীদ লাবলু বলেছিলেন, “আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ সাজা দিয়েছে। আমরা এ রায়ে খুশি। তবে রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেছেন, ‘ঘটনার বীভৎসতা বিবেচনায় আসামিদের আরও কঠিন সাজা প্রয়োজন থাকলেও আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চটা দেওয়া হয়েছে’।”

আসামিপক্ষও রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে।

আসামিপক্ষের আইনজীবী আব্দুল কাইয়ুম দিদার বলেন, “আমরা এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাব। সেখানে সুবিচার পাব বলে আশাবাদী।।”

২০২০ সালের ২ সেপ্টেম্বর নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার জয়কৃষ্ণপুর গ্রামে ঘরে ঢুকে স্থানীয় দেলোয়ার বাহিনীর সদস্যরা মধ্যবয়সী এক নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন করে। মোবাইল ফোনে ধারণ করা ভিডিও ঘটনার একমাস পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। ভয়ে আত্মগোপনে থাকা ওই নারীকে ওই দিনই উদ্ধার করে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়।

ওই ঘটনা সারা দেশে ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দেয়। নিপীড়কদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে প্রতিবাদী কর্মসূচি পালন করে বিভিন্ন সংগঠন।

নারী ও শিশুনির্যাতন দমন আইন এবং পর্ণগ্রাফি আইনে বেগমগঞ্জ মডেল থানায় দুটি মামলা করেন ওই নারী। পরে তিনি একই থানায় আরেকটি মামলা করেন, যেখানে ২০১৯ সালের ৫ অক্টোবর এবং ২০২০ সালের ৭ এপ্রিল দুই দফায় তাকে ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয় দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার হোসেন দেলু ও তার সহযোগী আবুল কালামের বিরুদ্ধে।

গত ৪ অক্টোবর ধর্ষণ মামলায় রায়ে দেলোয়ার ও কালামকে যাব্বজীবন করাদণ্ড দেয় নারী ও শিশুনির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল।

আর বিবস্ত্র করে নির্যাতনের মামলায় মোট ১৪ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছিল পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পরে স্থানীয় ইউপি সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন সোহাগকে অব্যাহতি দিয়ে ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করে আদালত।

বাদীসহ ৪০ জনের সাক্ষ্য শুনে আসামিদের সবাইকে দোষী সাব্যস্ত করে মঙ্গলবার রায় দিলেন বিচারক।

আরও