পাবনায় নির্বাচনী সংঘাতে কলেজছাত্র নিহত, নৌকার প্রার্থী আটক

পাবনায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সহিংসতায় স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী নিহতের দুদিন পর এবার এক কলেজছাত্র প্রাণ হারিয়েছেন।

পাবনা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Dec 2021, 03:32 PM
Updated : 13 Dec 2021, 03:48 PM

সোমবার সন্ধ্যায় সদর উপজেলার চরতারাপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র (আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী) প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত মোহাম্মদ নাসিম (১৮) দুবলিয়া কলেজের চলতি শিক্ষাবর্ষের এইচএসসি পরীক্ষার্থী এবং তারাবাড়িয়া গ্রামের নায়েব আলীর ছেলে।

গুরুতর আহত একজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

এ ঘটনায় চরতারাপুর ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রবিউল আলম টুটুল ও সুজানগর পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি ফেরদৌস আলম ফিরোজসহ তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ।

সদর উপজেলার ভাড়ারা ইউনিয়নে দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী ও নৌকার প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে এক স্বতন্ত্র প্রার্থীর মৃত্যুর দুদিন পর এই ঘটনা ঘটল।

স্থানীয়দের বরাত দিয়ে পাবনা সদর থানার ওসি আমিনুল ইসলাম বলেন, সোমবার সন্ধ্যায় তারাবাড়িয়া বাজারে নৌকার প্রার্থী রবিউল আলম টুটুল ও আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী সিদ্দিকুর রহমানের সমর্থকদের পৃথক প্রচার মিছিল থেকে সংঘর্ষ বেধে যায়।

নাসিম বাজারে ‘কেনাকাটা’ করতে এসেছিলেন উল্লেখ করে ওসি বলেন, সংঘর্ষ শুরু হলে ঘটনার ছবি তার মোবাইল ফোনে ধারণ করায় কয়েকজন যুবক নাসিমকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে। এ সময় তাকে বাঁচাতে গেলে আরও কয়েকজন ছুরিকাহত হন।

ওসি বলেন, পুলিশ ও স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক নাসিমকে মৃত ঘোষণা করেন। গুরুতর আহত অপর একজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রোকনউজ্জামান সরকার বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। মরদেহ উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আনারস প্রতীকের প্রার্থী সিদ্দিকুর রহমান খানের অভিযোগ, “আমার প্রচারে নৌকার প্রার্থীর পক্ষ হয়ে সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। এ সময় উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিনুজ্জামান শাহিন নিজেই ঘটনাস্থলে এসে শটগান দিয়ে গুলি করেছেন। ঘটনার ছবি তোলায় আমার সমর্থক নাসিমকে উপজেলা চেয়ারম্যানের এক স্বজন তাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই, জীবনের নিরপত্তা চাই।”

তবে ঘটনায় নিজের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করে উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিনুজ্জামান শাহিন বলেন, “আমি ব্যক্তিগত কাজে পাবনা শহরে যাওয়ার সময়ে উত্তেজনা দেখে বাড়ি ফিরে এসেছি। সংঘর্ষে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ সত্য নয়।”

নিহত নাসিমের বাবা নায়েব আলী বলেন, “আমার ছেলে রাজনীতির সাথে যুক্ত নয়। বাজারে কেনাকাটা করতে গিয়েছিল। নির্বাচনেও আমার পরিবার কারো পক্ষে ছিল না। বিনা কারণে আমার নিরীহ ছেলেকে হত্যা করা হলো। আমি কার কাছে এর বিচার চাইব?”

গত শনিবার সদর উপজেলার ভাড়ারা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনী প্রচারণা নিয়ে দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী সুলতান মাহমুদ খান ও ইয়াসিন আলমের সমর্থকদের সঙ্গে নৌকা প্রতীকের আবু সাঈদ খানের সমর্থকদের সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এতে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ইয়াসিন আলম নিহত হয়েছেন।