এলাকাবাসীর অভিযোগ, সরকারিভাবে বানরের জন্য যে খাদ্য বরাদ্দ দেওয়া হয় তার পুরোটা বানরের ভাগ্যে জোটে না। অর্ধেকই চলে যায় কর্তৃপক্ষের পেটে।
বাচ্চা বানরগুলো খাবারের অভাবে মরে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ এসেছে।
মাদারীপুর পৌরসভার চরমুগরিয়া এলাকায় শুক্রবার বানরকুলের খোঁজ নিতে গেলে স্থানীয়রা বানরদের উৎপাত ও বানরদের খাবার লুটের অভিযোগ করেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, তারা মাঝে মাঝে বন বিভাগের লোকদের কিছু খাবার এনে বানরদের খাওয়াতে দেখেন। তবে, খাবারের পরিমাণ খুবই সামন্য বলে দাবি তাদের।
চরমুগরিয়া এলাকার মধ্য খাগদী গ্রামের বাসিন্দা আবুল কালাম ফকির (৬০) বলেন, “বছর দশেক আগেও যত বান্দর এখানে ছিল, এখন তার অর্ধেকও আর দেখি না।
সরকার প্রতিদিন বানরদের খাবার না দেওয়ায় এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেন পিটিআই গেট এলাকার বাসিন্দা মো. শাকিল হোসেন।
তিনি বলেন, “বানরের কারণে ঘরে খাবার রাখতে পারি না। দরজা-জানালা একটু খোলা পেলেই ঘরে ঢুকে বানররা ভাতসহ অন্যান্য খাবার নিয়ে যায়। বানরগুলো সব সময় খুব ক্ষুধার্ত থাকে।”
সরকার থেকে বানরদের কখনও খাবার দিতে দেখেননি বলে জানান চরমুগরিয়া কলেজ এলাকার বাসিন্দা কাপড় বিক্রেতা সৈয়দ মাহবুব।
তিনি বলেন, “আমি সব সময়ই এলাকায় থাকি। কখনও তো দেখি নাই যে, বানরগুলোর জন্য সরকার খাবার দেয়। খাবার থাকলে সরকারি অফিসে কাগজে-কলমে থাকতে পারে।
বানরের অবস্থা সংকটাপন্ন বলে জানান পশ্চিম খাগদী গ্রামের পঞ্চাশোর্ধ্ব বাসিন্দা মমতাজ বেগম।
তিনি বলেন, “বানরগুলো ক্ষুধার জ্বালায় ঘরের টিনের চালে সারারাত লাফালাফি-দাপাদাপি করে। ঘর থেকে খাবার নিয়ে যায়।
“আমিও মাঝে মাঝে ভাত-মুড়ি খেতে দিই। কিন্তু এই খাবারে তো আর ওদের হয় না। সরকারিভাবেও তো কাউকে খাবার দিতে দেখি না। বানরদের জন্য সরকারি খাবার বরাদ্দ থাকলেও বানরগুলো তো আর ভাগে পায় না। সব তো মাইনষের পেটেই যায়।”
একই কথা বললেন কুমার নদের পাড়ের বাসিন্দা রাজমিস্ত্রি শের আলী।
খাদ্য সংকটে চরমুগরিয়ার বানরের টিকে থাকাই এখন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে উল্লেখ করে মাদারীপুর বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ পরিষদের সমন্বয়কারী অজয় কুণ্ডু বলেন, “সরকারিভাবে বছরে ১৪৪ দিন কাগজে-কলমে বানরকে খাওয়ালেই হবে না। এই প্রাণীকে টিকিয়ে রাখতে প্রতিদিনই সরকারিভাবে খাবার বিতরণ করা প্রয়োজন।”
তিনি বলেন, “খাদ্য সংকটের কারণে বানরগুলো অন্যত্র চলে যাচ্ছে। বাচ্চা বানরগুলো খাবারের অভাবে মরে যাচ্ছে।”
বানরগুলোকে সঠিকভাবে খাবার না দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জেলার ভারপ্রাপ্ত বন ও পরিবেশ কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম।
তিনি বলেন, “চরমুগরিয়ার নয়টি জায়গায় সপ্তাহে তিন দিন ঠিকাদারের লোকজন সঙ্গে নিয়ে বানরদের জন্য খাবার বিতরণ করি। কিন্তু এই খাবার হয়ত বানরদের জন্য পর্যাপ্ত নয়।
“বানরদের যেন প্রতিদিন খাবার দিতে পারি সেজন্য একটি উদ্যোগ গ্রহণ করার পরিকল্পনা করেছি।”
তিনি আরও বলেন, “বন্যপ্রাণী দেশের সম্পদ। এটিকে টিকিয়ে রাখতে আমাদের কোনো অবহেলা নেই। আমরা এ বিষয়ে খুবই আন্তরিক।”
চরমুগরিয়া এলাকায় এখনও প্রায় আড়াই হাজার বানর রয়েছে বলে বন কর্মকর্তারা আনুমানিক ধারণার কথা জানিয়েছেন।