ষাট বছর বয়সী পূর্ণ চাকমার বাড়ি খাগড়াছড়ি জেলা শহর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে দীঘিনালার নন্দেশ্বর কারবারি পাড়ায়।
সনাতন পদ্ধতির হস্তচালিত কাঠের যন্ত্রের সাহায্যে মহিষের শিং থেকে চুড়ি, আংটি ও চন্দ্রহার তৈরি করেন তিনি।
তিনি বলেন, “চার দশক ধরে এ কাজ করছি। আমার পূর্বপুরুষরাও এ কাজ করতেন। তাদের কাছ থেকে শিখেছি। মহিষের শিং থেকে মেয়েদের হাতের চুড়ি, কানের দুল, আংটি ও চন্দ্রহার তৈরি করি।”
তবে এখন আর আগের মত মহিষের শিং পাওয়া যায় না। শিং কিনে আনতে হয় কক্সবাজার ও টেকনাফ থেকে।
পূর্ণ চাকমা জানান, আগে একটি শিংয়ের দাম ছিল আটশ টাকা। এখন প্রতিটি শিং কিনতে খরচ হয় ১২শ টাকা। তারপরও বড় আকারের শিং পাওয়া কঠিন। গয়না বানানোর জন্য শিংয়ের পুরত্ব হতে হয় অন্তত এক ইঞ্চি।
এসব গয়না বিক্রি করে মাসে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় হয় বলে জানালেন এই শিল্পী।
পূর্ণ চাকমার সহকারী ধর্মজ্যোতি চাকমা জানালেন, তিনি এখন শিং থেকে গয়না বানানোর কাজ শিখছেন। দৈনিক মজুরি তিনশ টাকা। মাসে ৩০ দিনই কাজ করতে হয়।
পূর্ণ চাকমার ছেলে পিন্টু চাকমা বলেন, “এটি আমাদের পারিবারিক ঐতিহ্য। জন্মের পর থেকে দেখছি বাবা এসব গয়না বানান। অনেকে দূর-দূরান্ত থেকে গয়না কিনতে আসেন।”
খাগড়াছড়ির নারী উদ্যোক্তা শাপলা ত্রিপুরা বলেন, “আগে শিং থেকে চুড়ি এবং কানের দুল তৈরি হত। এখন গলার হারও পাওয়া যায়। আমাদের আদিবাসী সমাজে এসব গয়নার কদর রয়েছে। তবে এখন খুব কমই এসব গয়না পাওয়া যায়।”
খাগড়াছড়ির বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা জাবারাংয়ের নির্বাহী পরিচালক ও গবেষক মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা বলেন, “মহিষের শিংয়ের গয়নার সাথে ঐতিহ্য জড়িয়ে রয়েছে। সামন্তীয় প্রভু বা মহাজনরা একসময় আভিজ্যাতের প্রতীক হিসেবে হাতির দাঁতের গহনা ব্যবহার করত।
ব্যয়বহুল হওয়ায় হাতির দাঁত ব্যবহারের সামর্থ্য যাদের ছিল না, তারা মহিষের শিংয়ের গয়না ব্যবহার করতেন বলে তিনি জানান।