সিনহা হত্যা: সাক্ষ্য শেষ, যুক্তিতর্ক শুরু ৯ জানুয়ারি

সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থনের মধ্য দিয়ে সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে।

কক্সবাজার প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Dec 2021, 05:09 PM
Updated : 7 Dec 2021, 05:09 PM

মামলায় পরের পর্যায়ে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য আগামী ৯ থেকে ১২ জানুয়ারি ধার্য করেছে আদালত।

জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর – পিপি ফরিদুল আলম জানান, মঙ্গলবার বিকালে জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাঈল এ আদেশ দেন।

মঙ্গলবার সকাল সোয়া ১১টায় মামলার ১৫ আসামিকে কক্সবাজার জেলা কারাগার থেকে আদালতে আনা হয়।

সাক্ষ্য গ্রহণের নবম দফার দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার আসামি এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত হত্যা ঘটনায় নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আদালতে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন।

আগের দিন সোমবার সাক্ষ্য গ্রহণের নবম দফার প্রথম দিন টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ৬ জন আদালতে সাফাই সাক্ষ্য দিতে অস্বীকৃতি জানান। তারা হত্যার দায় অস্বীকার করে লিখিত বক্তব্য দেন।

এর আগে গত বুধবার (১ ডিসেম্বর) মামলার ৮ আসামি সাক্ষীদের নিজেদের নির্দোষ দাবি করে আদালতে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন।

পিপি ফরিদুল বলেন, মঙ্গলবার মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের দ্বিতীয় দিনে সব আসামির আত্মপক্ষ সমর্থন করে ফৌজদারি কার্যবিধি ৩৪২ ধারায় সাফাই সাক্ষ্য প্রদান শেষ হয়েছে। মামলায় ৮৩ জন সাক্ষীর মধ্যে তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ ৬৫ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন।

“আসামিরা সাক্ষীদের জবানবন্দি ও জেরার আলোকে আদালতে সাফাই সাক্ষ্য দিতে অস্বীকৃতি জানান। তবে তারা (আসামিরা) প্রত্যেকে হত্যা ঘটনায় নিজেদের নির্দোষ ও নিরপরাধ দাবি করে আদালতে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন।”

রাষ্ট্রপক্ষের এই আইনজীবী বলেন, “সাক্ষ্য গ্রহণের নবম দফার দ্বিতীয় দিনে বিচারক আসামিদের উপস্থাপন করা লিখিত বক্তব্যগুলো যাচাই-বাছাই করেছেন। এরপর মামলায় উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য আগামী ৯ থেকে ১২ জানুয়ারি দিন ধার্য করেছেন।”

গত ২৩ অগাস্ট কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাঈলের আদালতে মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ ও জেরা শুরু হয়; শেষ হয় গত বুধবার (১ ডিসেম্বর )। এতে মোট ৮৩ জন সাক্ষীর মধ্যে তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ ৬৫ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন।

গত বছর ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।

এ ঘটনায় গত বছর ৫ অগাস্ট সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে টেকনাফ থানার তৎকালীন ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া তদন্তকেন্দ্রের সাবেক ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশ সদস্যকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয় লিয়াকত আলীকে। আদালত মামলার তদন্ত ভার দেন র‌্যাবকে।

ঘটনার ৬ দিন পর ওসি প্রদীপ ও পরিদর্শক লিয়াকতসহ সাত পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।

ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় একটি এবং রামু থানায় একটি মামলা দায়ের করেছিল।

পরে র‌্যাব পুলিশের দায়ের করা মামলার ৩ সাক্ষী এবং শামলাপুর চেকপোস্টে দায়িত্বরত আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ানের (এপিবিএন) ৩ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। এরপর গ্রেপ্তার করা হয় টেকনাফ থানা পুলিশের সাবেক কনস্টেবল রুবেল শর্মাকে। সর্বশেষ গত বছর ২৪ জুন আদালতে আত্মসমর্পণ করেন টেকনাফ থানার সাবেক এএসআই সাগর দেব।

গত বছর ১৩ ডিসেম্বর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এবং র‌্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়ানের তৎকালীন দায়িত্বরত সহকারী পুলিশ সুপার খাইরুল ইসলাম ১৫ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।

চলতি বছরের ২৭ জুন আদালত মামলার ১৫ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে। এতে সাক্ষী করা হয় ৮৩ জনকে।