ঢাকা থেকে নীলফামারী গিয়ে ‘জঙ্গি আস্তানায়’ র‌্যাবের অভিযান, গ্রেপ্তার ৫

নীলফামারী সদরে জঙ্গি পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার এবং জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে একটি বাড়ি ঘিরে অভিযান চালিয়ে অস্ত্র, বোমা, বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে র‌্যাব।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকনীলফামারী, রংপুর প্রতিনিধি ওবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Dec 2021, 04:53 AM
Updated : 4 Dec 2021, 12:34 PM

র‌্যাবের পরিচালক (আইন ও গণমাধ্যম) খন্দকার আল মঈন জানান, শনিবার সকালে র‌্যাবের একটি দল ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে সদর উপজেলার সোনারায় ইউনিয়নে পুঠিহারী মাঝাপাড়া গ্রামে একটি বাড়িতে অভিযান চালায়।

এর আগে শুক্রবার থেকে শনিবার ভোর রাত পর্যন্ত সদরের সোনারায় ও সংগলশী ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির পাঁচ সদস্যকে আটক করে র‌্যাব।

গ্রেপ্তাররা হলেন জেএমবি রংপুর ও নীলফামারী অঞ্চলের জেএমবির সামরিক শাখার প্রধান আহিদুল ইসলাম ওরফে আহিদ ওরফে পলাশ (২৬), জেএমবি সদস্য ওয়াহেদ আলী ওরফে আব্দুর রহমান (৩০), আব্দুল্লাহ আল মামুন ওরফে ডা. সুজা (২৬), জাহিদুল ইসলাম ওরফে জাহিদ ওরফে জোবায়ের (২৮) ও নুর আমীন ওরফে সবুজ (২৮)।

তাদের মধ্যে জাহিদুল ইসলাম ও ওহিদুল ইসলাম সহোদর ভাই। এদের সবার বাড়ি নীলফামারী সদরের সোনারায় ও সংগলশী ইউনিয়নে।  

অভিযান শেষে ঘটনাস্থলে র‌্যাবের পরিচালক (আইন ও গণমাধ্যম) খন্দকার আল মঈন সাংবাদিকদের বলেন, আটকরা সবাই নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সদস্য। আহিদুল বোমা তৈরির প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। শরীফের বাড়িতে বোমা তৈরি হতো। এমন তথ্যের ভিত্তিতে শনিবার ভোররাত থেকে শরীফের বাড়ি ঘিরে রাখে র‌্যাব-১৩ নীলফামারী ক্যাম্পের সদস্যরা। আটকৃতদের রংপর র‌্যাব কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে। শরীফকে গ্রেপ্তারের অভিযান চলছে।

তিনি আরও বলেন, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে গত শুক্রবার রাত থেকে শনিবার ভোর পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে ওই পাঁচ জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুঠিহারি মাঝাপাড়া গ্রামের শরীফের বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। এর আগে গভীর রাত থেকে বাড়িটি ঘিরে রাখা হয়।

খন্দকার মঈন জানান, সকালে ঘটনাস্থালে আসেন র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) কর্নেল এ কে এম আজাদ। তার নেতৃত্বে অভিযানে অংশ নেন র‌্যাবের পরিচালক গোয়েন্দা লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মশিউর, র‌্যাব-১৩ রংপুরের কমান্ডার রেজা আহমেদ ফেরদৌসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীর সদস্যরা।

“গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে আহিদুল জেএমবির রংপুর অঞ্চলের সামরিক শাখার প্রধান। সে বোমা বিশেষজ্ঞ হওয়ায় নিয়মিত বোমা তৈরি করত। তাদের রংপুর র‌্যাব কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে। এখানে (ওই বাড়িতে) কোন বোমা রাখা হয়েছে, কী তাদের উদ্দেশ্য, কতদিন যাবৎ তারা বোম তৈরি করছে, কী তাদের পরিকল্পনা জিজ্ঞাসাবাদ পরবর্তী এসব জানা যাবে।”

রংপুরে র‌্যাবের প্রেস ব্রিফিং

র‌্যাবের রংপুর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেপ্তার সবাই নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সদস্য। এদের মধ্যে আহিদুল ইসলাম ওরফে আহিদ ওরফে পলাশ জেএমবি রংপুর ও নীলফামারী অঞ্চলের জেএমবির সামরিক শাখার প্রধান। একটি খেলনা প্রস্তুতকারক কারখানায় কোয়ালিটি চেকার পদে কর্মরত থেকে রংপুর ও নীলফামারী অঞ্চলে জেএমবির কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন আহিদুল। দশম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া জানা আহিদ ২০১৫ সালে জেএমবিতে সম্পৃক্ত হয়ে জিএমবির রংপুর অঞ্চলের আঞ্চলিক নেতার কাছ থেকে বায়াত গ্রহণ করেন। ইন্টারনেটে বিভিন্ন ওয়েব পেইজ এবং ইউটিউবের মাধ্যমে বিস্ফোরণ যোগ্য শক্তিশালী বোমা (আইইডি) তৈরির প্রশিক্ষণ লাভ করেন।

তার মাধ্যমে গত দুই থেকে তিন বছর আগে জেএমবিতে সম্পৃক্ত হন একটি কোম্পানির শ্রমিক ওয়াহেদ আলী ওরফে আব্দুর রহমান, গ্রাম্য চিকিৎসক আব্দুল্লাহ আল মামুন ওরফে ডা. সুজা, একটি খেলনা প্রস্তুতকারক কারখানার সুপারভাইজার জাহিদুল ইসলাম ওরফে জাহিদ ওরফে জোবায়ের, একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত নুর আমিন ওরফে সবুজ এবং রাজমিস্ত্রি ও কাঠমিস্ত্রি পেশায় থাকা শরীফুল ইসলাম ওরফে শরীফ।

খন্দকার আল মঈন আরও জানান, আহিদুল বোমা তৈরিতে বিশেষজ্ঞ। সামরিক শাখার কার্যক্রমের অংশে তারা বিস্ফোরণযোগ্য শক্তিশালী বোমা (আইইডি) তৈরি ও প্রশিক্ষণ, অনুশীলন এবং নাশকতামূলক হামলার প্রস্তুতি গ্রহণ করছিল।