কুয়েট শিক্ষকের মৃত্যু: তদন্ত কমিটি থেকে সরে গেলেন দুই শিক্ষক

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষক অধ্যাপক মো. সেলিম হোসেনের মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিটির দুজন সদস্য এই দায়িত্ব পালন করতে চাইছেন না।

খুলনা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Dec 2021, 06:45 PM
Updated : 4 Dec 2021, 08:28 AM

ছাত্রলীগের একটি অংশের নেতা-কর্মীদের লাঞ্ছনার পর মঙ্গলবার ওই শিক্ষকের মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ ওঠায় তা খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

কমিটি গঠনের দুদিন বাদে বৃহস্পতিবার দুই সদস্যের অপারগতা প্রকাশের কথা জানান কুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক কাজী সাজ্জাদ হোসেন।

তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির সভাপতি করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মো. আরিফুল ইসলাম। সদস্য করা হয় সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক আতাউর রহমান ও ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক কল্যাণ কুমার হালদারকে।

উপাচার্য অধ্যাপক কাজী সাজ্জাদ সাংবাদিকদের বলেন, “এদের মধ্যে থেকে কল্যাণ কুমার হালদার লিখিতভাবে এবং মো. আরিফুল ইসলাম মৌখিকভাবে তদন্ত করতে অপারগতা জানিয়েছেন।”

কী কারণে এই অপারগতা, তা জানতে ওই দুই শিক্ষককে বারবার ফোন করা হলেও তারা ধরেননি।

অধ্যাপক মো. সেলিম হোসেন

এদিকে অধ্যাপক সেলিম হোসেনের মৃত্যুতে কুয়েট শিক্ষক সমিতির ডাকে সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে বৃহস্পতিবার ১০টা থেকে ১ ঘণ্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষকরা।

এরপর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শিক্ষকরা কালো ব্যাজ ধারণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্বার বাংলা ভাস্কর্যের পাদদেশে প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে বিশ্ববিদালয়ের রেজিস্ট্রারের কাছে স্মারকলিপি দেন।

শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রতীক চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ড. সেলিমের মৃত্যুর ঘটনার জন্য দায়ী ছাত্রদের স্থায়ীভাবে ক্যাম্পাস থেকে বহিষ্কার ও শাস্তি না দেওয়া পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। এছাড়া আগামী রোববার বিকালে শোকসভা করা হবে।

অন্যদিকে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে প্রশাসন ভবনের ভেতরে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ অবস্থান নেয়, যার মধ্যে অভিযোগের মুখে থাকা শিক্ষার্থীরাও ছিলেন। দুপুরের পর তারা উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করেন।

পরে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজান সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের কিছু দাবির কথা স্যারকে জানিয়েছি। শিক্ষকদের সংগঠন আনুষ্ঠানিক সভার মাধ্যমে কোনো ধরনের তদন্ত ছাড়া শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছে। এর দ্বারা বিচারের নিরপেক্ষতা লঙ্ঘিত হয়েছে।”

তিনি বলেন, “ঘটনার নিরপেক্ষতা বজায় রাখার জন্য জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধির সমন্বয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে। যেখানে কুয়েটের কোনো শিক্ষক প্রতিনিধিত্ব করতে পারবেন না। তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের আগ পর্যন্ত কোনো শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা যাতে না নেয়, সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।”

ছাত্রলীগের এই নেতার নেতৃত্বে এক দল শিক্ষার্থী দেখা করে আসার পর বাড়ি ফিরে মারা যান কুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক ও লালন শাহ হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক সেলিম।

অভিযোগ উঠেছে, সেজানের নেতৃত্বে ওই শিক্ষার্থীরা অধ্যাপক সেলিমকে লাঞ্ছিত করেছিলেন, যা তাকে অসুস্থ হয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়।

অধ্যাপক সেলিমকে বুধবার রাতে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর বাঁশগ্রামে নিজ বাড়িতে দাফন করা হয়।