শহরের ঝালাইপট্টি ও টাউন হল ময়দানে বুধবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার জন্য দুটি পক্ষ পরস্পরকে দোষারোপ করছে।
আহতরা হলেন খাইরুল ইসলাম (২০), আকিবুল ইসলাম (১৭), রাব্বি (১৮), শামীম হোসেন (২২), রাসেল (১৭), জয় আহম্মেদ (১৭), গোষ্ঠ গোপাল (২০), সোহাগ সরদার (২১), হ্যাপি (১৭) ও টিটো (১৮)।
এদের মধ্যে দুই জনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। পাঁচ জনকে ভর্তি করা হয়েছে যশোর জেনারেল হাসপাতালে। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
যশোর জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক এম আব্দুর রশিদ বলেন, “খায়রুল ও আকিবুলের শরীর থেকে রক্তক্ষরণ বন্ধ করা যাচ্ছে না। তাদের দুজনের অবস্থা গুরুতর। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের ঢাকায় রেফার্ড করা হয়েছে।”
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুধবার কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে স্থানীয় সিটিটিএস মিলনায়তনে জেলা যুবলীগের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে জেলা ও আট উপজেলার নেতাকর্মীরা অংশ নেন। দলীয় কার্যালয় ও সভাস্থলের আশপাশের বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নেন জেলা কমিটির পদ প্রত্যাশীদের অনুসারীরা। এসময় স্লোগান দেওয়া নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধলে ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটে।
আহতরা সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শফিকুল ইসলাম জুয়েল ও আনোয়ার হোসেন বিপুলের সমর্থক বলে জানা গেছে।
আহত রাসেল বলেন, “সকালে যুবলীগের বর্ধিত সভায় মিছিল নিয়ে শহরের চিত্রার মোড়ে আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে এসেছিলাম। মিছিল শেষে দুপুরে বাড়ি ফেরার পথে ঝালাইপট্টি পৌঁছালে হ্যাপি তার লোকজন নিয়ে আমাকে ছুরিকাঘাত করে। স্থানীয়দের সহযোগিতায় হাসপাতালে আসি।”
আহত হ্যাপির ভাষ্য, “রাসেলকে আমি ছুরিকাঘাত করিনি। বরং যুবলীগের মিছিল শেষে রাসেল লোকজন নিয়ে আমাকে ছুরি মেরে আহত করে। স্থানীয়রা আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসে।”
এই বিষয়ে যশোর সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়র হোসেন বিপুল বলেন, সুষ্ঠুভাবে সভার কাজ চলছিল। আচমকা ‘শফিকুল ইসলাম জুয়েলের’ অনুসারীরা এসে তার সাত জন অনুসারীকে ছুরিকাহত করে। এর মধ্যে কয়েক জনের অবস্থা গুরুতর। তাদের ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে শফিকুল ইসলাম জুয়েল বলেছেন, “যারা ছুরিকাহত হয়েছে তাদের বয়স ১৪ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে। তারা যুবলীগের কেউ না। আমি তাদের কাউকে চিনি না। ঘটনাস্থলে সিসি ক্যামেরা আছে, তার ভিডিও ফুটেজ দেখলে জড়িতদের চিহ্নিত করা যাবে। এরা আমার কেউ না।”
জুয়েল তার বিরুদ্ধে অতীতে এমন কোনো কর্মকাণ্ডের অভিযোগ নেই বলে দাবি করেন।
যশোর গোয়েন্দা পুলিশের ওসি রুপন কুমার সরকার বলেন, দুপুরে ‘ছিনতাইকারী হ্যাপি’ তার ব্যক্তিগত পূর্ব আক্রোশে শামীমকে ছুরিকাঘাত করে। এরই জের ধরে শামীমের লোকজন জজ কোর্ট মোড়ে টিটু, হ্যাপি, খাইরুলদের ছুরিকাঘাত করে।
এ ঘটনার সঙ্গে যুবলীগের বর্ধিত সভার কোনো সম্পর্ক নাই উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা কোনো রাজনৈতিক দলের মতাদর্শের কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি তাজুল ইসলামও একই কথা বলেন।
সিসিটিএস মিলনায়তনে জেলা যুবলীগের ওই বর্ধিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ সোহেল উদ্দিন।
জেলা যুবলীগের সভাপতি ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুব্রত পাল, সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আল সাইফুল সোহাগ, প্রেসিডিয়াম সদস্য আনোয়ার হোসেন, প্রচার সম্পাদক জয়দেব নন্দী, জেলা সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু প্রমুখ।
২০০৩ সালের ১৯ জুলাই যশোর জেলা যুবলীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়। এতে মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরীকে সভাপতি ও জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টুকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলা কমিটি হয়।