ঠাকুরগাঁওয়ে ভোটের ফল ঘোষণার সময় হামলা-ভাঙচুর, গুলিতে প্রাণহানি

ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলায় ইউপি নির্বাচনের ফল ঘোষণার সময় ভোটকেন্দ্রে হামলা, ভাঙচুর ও সংঘর্ষের মধ্যে বিজিবির গুলিতে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Nov 2021, 03:27 AM
Updated : 29 Nov 2021, 11:23 AM

রোববার রাত সাড়ে ৮টার দিকে পীরগঞ্জ উপজেলার খনগাঁও ইউনিয়নের ঘিডোব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে পুলিশ।  

ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক মো. মাহবুবুর রহমান গভীর রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। আমি এখন পর্যন্ত একজন নিহত এবং পাঁচজন আহত হওয়ার খবর পেয়েছি।”

তবে ওই কেন্দ্রে দায়িত্বরত গ্রাম পুলিশের সদস্য সরেন্দ্র নাথ রায় বলেছেন, আহত পাঁচজনের মধ্যে পরে আরও একজনের মৃত্যু হয়।

তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, নিহতরা হলেন- খনগাঁও ইউনিয়নের হাবিবপুর গ্রামের তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে শাহাবুলি আহমেদ (৩৫) এবং একই ইউনিয়নের ঘিডোব গ্রামের মৃত তফিজ উদ্দীনের ছেলে মোজা মোহাম্মদ (৩৫)।

আরও চারজনকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তারা হলেন: খনগাঁও ইউনিয়নের ঘিডোব গ্রামের জহুরুল ইসলামের ছেলে সবুজ আলী (২০), খনগাঁও গ্রামের তৈবুর রহমানের ছেলে রব্বানী (১৯), ঘিডোব গ্রামের আব্দুল বাড়ির স্ত্রী রহিমা বেগম (৫৫) ও খনগাঁও গ্রামের অভিনাথ চন্দ্র রায়ের ছেলে আদিত্ত রায় (১৮)।

সরেন্দ্র নাথ রায় বলেন, রোববার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ পরিবেশেই ভোট চলে। গণনা শেষে রাত ৮টার দিকে প্রিসাইডিং অফিসার মো. জামাল উদ্দীন ফলাফল ঘোষণা করেন।

এ সময় চেয়ারম্যান পদের স্বতন্ত্র প্রার্থী নুর জামান হকের (চশমা প্রতীক) সমর্থকরা ভোটের ফলাফলের স্বাক্ষরিত অনুলিপির দাবিতে ভোট কেন্দ্র ঘিরে ফেলে এবং এক পর্যায়ে ভাঙচুর শুরু করে।

এ সময় নির্বাচন কেন্দ্রে দায়িত্বরত পুলিশ ও আনসার সদস্যরা বাধা দিলে সংঘর্ষ বেঁধে যায় বলে জানান সরেন্দ্র। 

তিনি বলেন, কেন্দ্রে ভাঙচুর ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলার খবর পেয়ে রাত সাড়ে ৮টার দিকে পীরগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম সেখানে যান। তার সঙ্গে বিজিবির সদস্যরাও ছিলেন।

“আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ভোট কেন্দ্র থেকে সরকারি মালামাল ও ব্যালট বাক্স গাড়িতে তোলার সময় নুর জামানের সমর্থকরা তাতে বাধা দেয়। এসময় তারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়ি ভাঙচুর করে এবং গাড়ি পারাপার ঠেকাতে রাস্তা কেটে দেয়।

“উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ঘেরাও করে হামলার চেষ্টা করে তারা। এসময় উপস্থিত বিজিবি সদস্যরা গুলি করে। তখন শাবাবুলি আহমেদ নামে একজন ঘটনাস্থলেই নিহত হন। এছাড়া আরও ৫ জন আহত হয়। কিছুক্ষণ পর মোজা মোহাম্মদ নামে আরেকজন মারা যায়।”

পরে স্থানীয় লোকজন আহত চারজনকে উদ্ধার করে পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদেরকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।

ঘিডোব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মো. জামাল উদ্দীন বলেন, তার কেন্দ্রে নৌকার প্রার্থী মো. শহীদ হোসেন ৬২৬ ভোট ও স্বতন্ত্র প্রার্থী নুর জামান হক ৯৪৮ ভোট পেয়েছেন।

“ফলাফল ঘোষণার পরপরই নুর জামানের সমর্থকরা কেন্দ্রে ভাংচুর ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা করে।”

পীরগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিমকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।

অভিযোগের বিষয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী নুর জামান হকের বক্তব্যও জানা যায়নি। তিনি বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। 

পীরগঞ্জ থানার ওসি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন রাতে মোবাইলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভোট কেন্দ্রে হামলার ঘটনায় বিজিবির সাথে গোলাগুলির ঘটনা আমি শুনেছি। কিন্তু সেখানে আসলে কী ঘটেছে আমি জানি না। বিষয়টি সম্পর্কে আমরা খোঁজ নিচ্ছি।”

রাত ১০টার দিকে পীরগঞ্জের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. তকবির আলী খনগাঁও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নৌকার প্রার্থী শহীদ হোসেনকে বেসরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষণা করেন।

তার দেওয়া ফলাফল অনুযায়ী শহীদ হোসেন পেয়েছেন ৬ হাজার ৫২৮ ভোট। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী নুর জামান হক পেয়েছেন ৩ হাজার ২৪ ভোট।