সেপটিক ট্যাংকে ছেলের লাশ চাপা দিয়ে ভোটের প্রচারে বাবা-মা

দুই দিন আগে ‘আত্মহত্যা’ করেছে নেশাগ্রস্ত ছেলে, ‘ঝামেলা এড়াতে’ তার লাশ সেপটিক ট্যাংকে রেখে নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে যাচ্ছিলেন বাবা-মা।

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Nov 2021, 01:06 PM
Updated : 26 Nov 2021, 01:39 PM

শুক্রবার দুপুরে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার নরিনা ইউনিয়নের নরিনা পূর্বপাড়া গ্রাম থেকে আব্দুল করিম নামের ১৮ বছর বয়সী ওই যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

করিম ওই গ্রামের আলহাজ হোসেনের ছেলে। তার মা করুণা বেগম ইউপি নির্বাচনে নরিনা ইউনিয়নের ১, ২ ও ৩ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী প্রার্থী।   

দুই বছর আগে তাদের এক পুত্রবধূ চিরকুট লিখে রেখে আত্মহত্যা করেছিলেন জানিয়ে করিমের বাবা বলেছেন, সে সময় তাদের অনেক ‘ভোগান্তি ও অর্থনাশ’ হয়েছিল; তাই এবার ঝামেলা এড়িয়ে যেতে চেয়েছিলেন। তবে মনের কষ্ট সইতে না পেরে শেষে বিষয়টি প্রকাশ করে দেন।

জিজ্ঞাসাবাদের জন্য করিমের মা ও বাবাকে আটক করেছে পুলিশ। করিমের মৃত্যুর কারণও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শাহজাদপুর থানার ওসি শাহিদ মাহমুদ খান।

সেপটিক ট্যাংকে ছেলের লাশ ফেলে বাবা-মার ভোটের প্রচারে অংশ নেওয়ার খবর জানাজানি হলে এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি হয়। সাংবাদিকরাও ছুটে যান পূর্বপাড়া গ্রামের ওই বাড়িতে। 

করুণা বেগম তখন বলেন, তার মেজ ছেলে করিম দীর্ঘদিন ধরে ‘নেশায় আসক্ত’। মঙ্গলবার রাতে খাওয়ার পর নিজের ঘরে ঘুমাতে গিয়েছিল সে। পরদিন ভোরে ডাকাডাকি করেও সাড়া না পেয়ে ছোট ছেলের ঘর থেকে উঁকি দিয়ে করিমের মৃতদেহ ‘ঝুলতে দেখেন’ তারা। পরে স্বামী-স্ত্রী মিলে লাশ নামিয়ে বাড়ির ল্যাট্রিনের সেপটিক ট্যাংকে ফেলে মাটিচাপা দেন।

সেপটিক ট্যাংকে লাশ রাখার কারণ জিজ্ঞেস করলে ছেলেটির বাবা আলহাজ বলেন, “প্রায় ২ বছর আগে বড় ছেলের বউ চিঠি লিখে রেখে আত্মহত্যা করেছিল। ওই ঘটনা সামাল দিতে আমরা সর্বশ্বান্ত হয়ে গেছি।

“এবার ছেলের আত্মহত্যার বিষয়টি জানাজানি হলে আবার আইনি ঝামেলা হবে, তাতে আমাদের বর্তমান বসতভিটাও থাকবে না, তাই আমরা বুকে কষ্ট চাপা রেখে ছেলের আত্মহত্যার বিষয়টি গোপন করতেই মৃতদেহ ট্যাংকিতে মাটি চাপা দিয়েছিলাম।”

আর বিষয়টি যেন কেউ বুঝতে না পারে, সেজন্যই স্বাভাবিকভাবে স্ত্রীর নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছিলেন বলে দাবি করেন হোসেন।

তিনি বলেন, ছেলের মৃত্যুর ঘটনাটি সহ্য করা তাদের জন্য ‘কঠিন হয়ে পড়েছিল’। তাই শুক্রবার সকালে স্থানীয় গাড়াদহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলামের কাছে তারা ঘটনা প্রকাশ করেন। এরপর চেয়ারম্যান পুলিশকে খবর দেয়।

খবর পেয়ে শাহজাদপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাসিবুল হোসেন ও থানার ওসি শাহিদ মাহমুদ খান ও পরিদর্শক (অপারেশন) আব্দুল মজিদ দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

ওসি শাহিদ মাহমুদ খান জানান, করিমের লাশ উদ্ধারের পর থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে। শনিবার ময়নাতদন্তের জন্য সিরাজগঞ্জ শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হবে।

“ঘটনাটি হত্যা নাকি আত্মহত্যা ময়নাতদন্তের পর নিশ্চিত হওয়া যাবে। ছেলেটির মা-বাবাকে আটক করা হয়েছে। মামলার প্রস্তুতি চলছে।”